জুমবাংলা ডেস্ক : ‘মা তুমি কেন এই শীতে গ্রামে আছো। আমি কয়েক দিনের মধ্যেই গ্রামে এসে তোমাকে ঢাকা নিয়ে আসব। শীত বেশি পড়ছে, তুমি শরীরের যত্ন নিও। ঠান্ডা পানি ব্যবহার করবে না। তোমার অজুর পানি গরম করে দিতে বলো।’
বৃদ্ধা মায়ের সঙ্গে মোবাইলে ওপরের কথাগুলোই ছিল চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম-পরিচালক সাইফুজ্জামান মিন্টুর শেষ কথা।
শনিবার সকালে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে লরি ও প্রাইভেটকারের সংঘর্ষে মিন্টু ও তার দুই মেয়ে আশরা আনাম খান (১৩) ও তাসমিন জামান খান (১১) প্রাণ হারান।
দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন তার স্ত্রী কনিকা আক্তার (৪০) ও ছেলে মন্টু (১০)। তারা চট্টগ্রাম সিএমএইচ হসপিটালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
ছেলে ও নাতনিদের হারানোর শোক সইতে পারছেন না বৃদ্ধা মা আয়েশা রহমান।
বিলাপ করতে করতে আয়েশা রহমান বলেন, বাবা গো তুমি কেমন করে আমাকে ছেড়ে চলে গেলে। আমাকে ঢাকা নিয়ে যাওয়ার কথা বলে তুমি কই চলে গেলে বাবা। আমার দুই নয়নের মণি নাতনিরা কই চলে গেল। এমনভাবে যেন আর কোনো মায়ের কোল খালি না হয়।
রোববার সকালে চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার ৩ নম্বর কালচোঁ ইউনিয়নে গ্রামের বাড়িতে সাইফুজ্জামান মিন্টু ও তার দুই মেয়েকে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
জানাজার নামাজে ইমামতি করেন হাফেজ আবদুল মান্নান ও মাওলানা আবদুল খালেক।
এর আগে শনিবার মধ্যরাতে বাবা ও দুই মেয়ের মরদেহ তাদের গ্রামের বাড়ি পৌঁছে। খবর শুনে সকাল থেকে তাদের আত্মীয়-স্বজনসহ আশপাশের গ্রামের শত শত মানুষ চির বিদায়ের আগে শেষ বারের মতো দেখতে আসেন। স্বজনদের হারিয়ে কেঁদে বুক ভাসিয়েছেন মিন্টুর পরিবারের সদস্য ও পাড়া-প্রতিবেশীরা। এতে পুরো এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া।
সাইফুজ্জামান মিন্টু ছিলেন হাজীগঞ্জ উপজেলার কালচোঁ গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ছিলেন দুই মেয়ে ও এক ছেলের জনক। তার বাবার নাম মৃত আব্দুর রহমান ও মায়ের নাম আয়েশা রহমান (৯৫)। ৬ ভাই ৫ বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন ১০ নম্বর।
নিহতের বড় ভাই নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এসএম মোস্তফা কামাল খান বলেন, মা আমাদের সঙ্গে ঢাকায় থাকেন। মা গ্রামের বাড়ি এসেছিলেন কিছুদিন আগে। মাকে ঢাকা নিয়ে যাওয়ার জন্য মিন্টু ফোনে মায়ের সঙ্গে কথা বলেছিল। কিন্তু তার আর আসা হলো না। একটি দুর্ঘটনায় আমার ভাইয়ের সাজানো সংসারটা ধ্বংস হয়ে গেছে। আমার ভাইসহ ফুলের মতো ভাতিজিরা আমাদের ছেড়ে চলে যাবে ভাবিনি। আমার ভাই অনেক ভালো মানুষ ছিল। সে কখনো কারো সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করত না। সড়ক দুর্ঘটনায় আর কোনো পরিবারের মানুষ যেন এভাবে প্রাণ না হারায়।
নিহত মিন্টুর প্রতিবেশী হাবিবুর রহমান পলাশ বলেন, মানুষ হিসেবে মিন্টু যেমন বিনয়ী ছিলেন ছাত্র জীবনেও ছিলেন খুব মেধাবী। তিনি ১৯৯০ সালে এসএসসি পরীক্ষায় কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে ১১তম হয়েছিলেন। গত কোরবানির ঈদের সময় তিনি শেষ বার গ্রামে এসেছিলেন। এভাবে তাকে ও তার দুই মেয়েকে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হবে আমরা তা কল্পনাও করতে পারিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।