রঞ্জু খন্দকার, গাইবান্ধা থেকে : তখন বিকেলের মিষ্টি রোদ ঠিকরে পড়েছে সোনারঙা ধানগাছের গায়ে। সেই গাছে কাস্তের হালকা পোচ দিয়ে ধান কাটছিলেন বর্গাচাষি রবিউল ইসলাম।
রবিউল বলেন, জমিতেই এই ধানগাছ কয়েক দিন পড়ে থাকবে। এরপর পুরোপুরি শুকিয়ে গেলে নেওয়া হবে জমির মালিকের উঠানে। সেখানে মাড়াই ও ঝাড়াইয়ের পর অর্ধেক উঠবে মালিকের গোলায়। বাকিটুকু রবিউলের বাড়িতে।
এভাবে আবাদ করে কতটা পোষায়?– এমন প্রশ্নের জবাবে এই বর্গাচাষি বলেন, এক সময় কিছুটা পরিশ্রম করে কয়েক বিঘা জমি ‘খায়খালাসি’ নিয়েছিলেন। পরে বাড়ি করতে গিয়ে সেসব হাতছাড়া হয়ে গেছে। এখন বিঘা আড়াই জমি বর্গা নিয়ে চাষ করেন। এ ছাড়া উপায় নেই।
রবিউলের সঙ্গে কথা হচ্ছিল গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার কুমারগাড়ী গ্রামের ফসলি মাঠে। এই এলাকায় জমি বন্ধক নেওয়াকে খায়খালাসি বলে।
রবিউল বলেন, এখন আমন মৌসুমেও জমিতে সার দিতে হয়। এবার কীটনাশকও দিতে হয়েছে তিনবার। তাই খরচ কিছুটা বেশি হয়েছে। তবু ফলন মোটামুটি ভালো।
শুধু কুমারগাড়ী নয়, উত্তরবঙ্গসহ পুরো দেশেই এখন চলছে আমন কাটার ধুম। কার্তিকের শেষাশেষি কাটা শুরু হলেও এই অঘ্রাণের প্রথম সপ্তাহে তা শুরু হয়েছে পুরোপুরি।
গত শুক্রবার গাইবান্ধা সদর উপজেলার ত্রিমোহিনী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ফসলের মাঠে ধান কাটছেন তিন নারী। কেউ কাটছেন, কেউবা আঁটি বাঁধছেন।
কথা হলো স্বপ্না বেগমের সঙ্গে। তিনি বললেন, এখন ফসল কাটার পুরো মৌসুম। তাই কামলার মজুরি কিছুটা বাড়তি। তবে এই ফসল আস্তে-ধীরে কাটা যায়। বোরো মৌসুমের মতো তাড়াহুড়ো নেই। বাড়ির পুরুষ সদস্য অন্য কাজে ব্যস্ত।তাই অন্য দুই নারীকে কামলা নিয়ে ধান কাটছেন তিনি।
কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখন কামলার মজুরি জনপ্রতি ৪০০-৪৫০ টাকা। বোরো মৌসুমে তা আরও বেড়ে যায়। তবে এ মৌসুমে অনেকেই কামলা না নিয়ে ধীরেধীরে মাসজুড়ে ফসল কাটবেন।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ডুমুরগাছা গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম বলেন, তিনি দুই বিঘা জমি বর্গা নিয়ে চাষ করেছেন। এক বিঘা জমির ধান কেটেছেন। তা মাড়াইয়ের পর এখন ধান সিদ্ধ হচ্ছে। তা শুকিয়ে গোলায় তোলা হবে।
উত্তরাঞ্চলের গাইবান্ধাসহ বেশির ভাগ এলাকায় ধান সিদ্ধ করে চাল তৈরি করা হয়। এখন ধান কাটার পাশাপাশি কৃষকের আঙিনায় চলছে ধান সিদ্ধেরও ধুম। বাড়ির কিষানিসহ গৃহস্থবাড়ির মেয়েদের ব্যস্ত সময় কাটছে ধান মাড়াই, ঝাড়াই, সিদ্ধ ও শুকানোয়।
পলাশবাড়ীর মহেশপুর এলাকায় বাড়ি শিক্ষক শাহবাজ কবিরের। তিনি বেশির ভাগ জমি বর্গা দিয়েছেন। তিনি বলেন, জমি বর্গা দিয়ে খুব বেশি ফসল পাওয়া যায় না। কিন্তু চাকরি করার কারণে নিজেও ফসল আবাদ করার সময় পান না। তাই বর্গা দেন। এতে বর্গাচাষিরও কিছুটা উপকার হয়, তারও।
এই শিক্ষক বলেন, অঘ্রাণ হলো ফসল তোলার মৌসুম। এই সময় খেত থাকে ভরা– টইটম্বুর। খেত যেন কৃষককে ডাকে ফসল তুলতে। তাই কৃষকের হাতে এখন সময় একদম নেই। ফসল তোলার ধুম পড়েছে বিস্তীর্ণ বাংলাজুড়ে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।