রঞ্জু খন্দকার, গাইবান্ধা থেকে : হযরত আলী (২৮) চট্টগ্রামে পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। সেখানকার টাকায় সংসার চলত। বছর তিনেক আগে বাড়ি এসে বিয়ে করেন। এরপর আর চট্টগ্রাম যাননি। এরপর কিছু জমানো টাকা ও কিছু ধারকর্জ করে ইজিবাইক কিনেছেন। আয়-রোজগার মন্দ নয়।
হযরত বলেন, ‘বিয়ের পর স্ত্রীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন চাচ্ছিলেন কাজের জন্য আর যেন বাইরে না যেতে হয়। বাড়ির লোকজনেরও একই মত। তাই দুপক্ষের সহযোগিতায় অটোবাইক কিনেছি। এখন সেটা চালিয়েই সংসার চালাচ্ছি। আয়-ইনকাম খারাপ না।’
ইসমাইল হোসেন (৫৫) কৃষি কাজ করে সংসার চালাতেন। অনেক দিন ধরে মাঠের কাজে শরীর আর কুলোয় না। তিনিও ধারকর্জ ও জমানো টাকা দিয়ে ইজিবাইক কিনেছেন। এই গাড়ি চালিয়েই তাঁর সংসারও চলছে।
ইসমাইল বলেন, ‘আগের মতো শরীরে শক্তি নেই। গায়ে খাটতে কষ্ট হয়। তাই বুদ্ধি করে অটো কিনলাম। সেটা চালিয়ে এখন ভালোভাবেই দিন পার করছি।’
হযরত ও ইসমাইলের বাড়ি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের ডুমুরগাছা ও পলাশবাড়ীর ঘোড়াবান্ধায়। এই জেলায় ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক অটো নামে পরিচিত। শুধু হযরত আর ইসমাইল নন, এই এলাকায় তাঁদের মতো হাজারও মানুষের সংসার চলে অটো চালিয়ে। অটোর চাকা না ঘুরলে তাঁদের সংসার চালানোই কঠিন হয়ে পড়বে।
ইসমাইল ও হযরত জানান, গাইবান্ধা জেলায় কয়েক হাজার অটো চলাচল করে। দিনকে দিন এই সংখ্যা বেড়ে চলেছে। তবুও এখন পর্যন্ত অটো চালিয়ে দিনে ৫শ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করা যায়।
যাত্রী ও অটোচালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগে একেকটা গ্রামে একটা-দুটো অটো ছিল। কোনো গ্রামে একটাও পাওয়া যেত না। এখন একেক পাড়ায়ই কয়েকটা করে অটো। এসব অটো চালিয়ে চালকদের সংসার যেমন স্বচ্ছন্দে চলছে, তেমনি যাত্রীদের যাতায়াতও সুগম হয়েছে।
পলাশবাড়ীর তালুক ঘোড়াবান্ধা গ্রামের আজিজুর রহমান বলেন, আগে রাতবিরাতে অসুখ-বিসুখ হলে হাসপাতালে নেওয়ার মতো যানবাহন পাওয়া যেত না। কী যে কষ্ট হতো। এখন আর সে সমস্যা নেই। যত রাত হোক, অটো পাওয়া যায়। তাঁর পাড়ায়ই তিনজন অটো চালান।
চালকেরা জানান, যোগাযোগব্যবস্থা ভালো হওয়ার কারণে এখন যেকোনো রাস্তায় গাড়ি সহজে নিয়ে যাওয়া যায়। বিশেষ করে পলাশবাড়ীর বেশির ভাগ সড়ক পাকা। ফলে রাস্তায় যাত্রীদের চলাচল যেমন বেড়েছে, তেমনি গাড়িও বেড়েছে। এ কারণে এলাকায়ই অনেকের কর্মসংস্থান হচ্ছে।
অটোচালক মিন্টু হোসেন বলেন, বিদ্যুচ্চালিত এসব অটো রাতে পুরো সময় চার্জ দিলে সারা দিন চালানো যায়। তখন দিনভেদে হাজার- পনেরো শ টাকাও আয় করা যায়।
তবে অটোর গাড়ির ব্যাটারিসহ যন্ত্রাংশের দাম বাড়ায় আয় কিছুটা কমেছে বলে জানান কয়েকজন চালক। তাঁরা বলেন, এই বাড়তি দামের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অতিরিক্ত গাড়ি। অনেকে কিছু না করতে পারলেই অটো কিনছেন। কিন্তু যাত্রী তো এত বাড়ছে না। ফলে আগের আয়ই সবার মধ্যে ভাগ হয়ে যাচ্ছে। এতে ইনকাম কমছে।
সম্প্রতি গোবিন্দগঞ্জের নাকাইহাট ও পলাশবাড়ীর গোডাউন বাজার মোড়ে দেখা যায়, কয়েক সারি অটো দাঁড়িয়ে আছে। যাত্রীরা আসতেই চলছে হাঁক-ডাক। দুয়েকজন যাত্রী উঠলেই অটো ছুটে চলেছে পলাশবাড়ী -গোবিন্দগঞ্জ- গাইবান্ধা সদরের পানে।
সদরগামী অটোচালক কান্তি দাস বলেন, অটো চালাতে পৌরসভাকেও ট্যাক্স দিতে হয়। লাইসেন্স নবায়ন করতে হয়। এতেও অনেক টাকা চলে যায়। তবু এখনো যা আয়, তা দিয়ে সংসার চালানো যাচ্ছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে গাইবান্ধা আসাদুজ্জামান গার্লস হাইস্কুল এন্ড কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর কবির বলেন, অটোতে এককালীন ইনভেস্ট করলেই মোটামুটি একটা আয়ের পথ হয়ে যায়। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, কেউ বিয়ের কথা ভাবছে, কিন্তু কোনো পেশা নেই? দাও অটো কিনে। তখন মেয়েপক্ষও আর ইনকাম নিয়ে আর ভাবে না। অটোর চাকার আয়ের জোরেই ঘুরছে এসব সংসারেরও চাকা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।