হাসনাইন আহমেদ মুন্না, বাসস: ভোলা জেলার বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলগুলোতে যেন অতিথি পাখিদের মেলা বসেছে। বিশেষ করে ডুবোচরগুলোতে তাকালেই দেখা যায় দল বেঁধে সারি-সারি পাখির সমাহার। বিভিন্ন প্রজাতির পাখির কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে এসব দ্বীপের নিঝুম প্রান্তর। সাইবেরিয়াসহ দূর-দূরান্ত থেকে আসা এসব অতিথি পাখিদের উড়ে বেড়ানো আর খাবার সংগ্রহের দৃশ্য মুগ্ধ করে প্রকৃতিপ্রেমীদের। একইসাথে দেখা মেলে স্থানীয় বিহঙ্গকূলেরও।
বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষা ঢালচর মনপুরা, কলাতলীর চর, চর কুকরী-মুকরী, চর শাহজালাল, চর শাজাহান, চর পিয়াল, আইলউদ্দিন চর, চরনিজাম, চর পাতিলা, ডেগরারচরসহ মেঘনা-তেঁতুলিয়ার উপকূলবর্তী মাঝের চর, চর চটকিমারা, মদনপুরাসহ বিভিন্ন চরে পাখিদের আনা-গোনা মন কাড়ে যে কারো।
সরেজমিনে দেখা যায়, চারদিকে সাগর-নদী, চর আর সবুজ গহীন বনের সমাহার। দু’পাশে পাখিদের কিচির-মিচির আওয়াজ আর কলকাকলি শোনা যায় কান পাতলেই। এমন দৃশ্যের দেখা মেলে সকাল-বিকাল। শীতের সকালে কুয়াশা ভেদ করে একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে ডানা ঝাপটে পাখিদের উড়ে বেড়ানোর দৃশ্য মন ভোলায় পাখি প্রেমীদের।
সাধারণত এসব চরে জুলফি পানচিল, গাঙ্গচিল, সোনাজিরিয়া, উত্তরীয় লেঞ্জাহাঁস, কালোলেজ জৌরালি, ইউরেশিও গুলিন্দা, ধূসর মাথা টিটি, সিথি হাঁস, খুন্তে হাস, খয়রা চখাচোখি, ছোট পানকৌড়ী, ছোট বগা, বড় বগা, পিয়ঙ হঁাঁস, ধূসর বগা, পাতি হাস, কালো মাথা গাঙচিল, ছোট ধলাজিরিয়া, ছোট নর্থ জিরিয়া, গো বগা, মেটে রাজ হাঁস, পাতি বাটান, চেগা, পাতি চেগাসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখির দেখা মেলে।
চর কুকরী-মুকরীর চর-পাতিলায় দেশি-বিদেশী পাখি দেখার জন্য বন বিভাগ নির্মিত হয়েছে পাখি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র। এখান থেকেই এই চরের অতিথি পাখি সহজেই দেখা যায়। এছাড়া পর্যটকদের জন্য বেশ কিছু, ছাতা, বেঞ্চ ও একটি ব্যারাকও নির্মাণ করা হয়েছে। শীতের এই সময়টাতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাখি দেখার জন্য এখানে ছুটে আসেন পর্যটকরা।
চর কুকরী-মুকরীতে পাখি দেখতে আসা ব্যাবসায়ী আব্দুর রহমান ও রফিক হোসেন বাসস’কে বলেন, এখানে প্রকৃতি আপন হাতে তার সৌন্দর্য ঢেলে দিয়েছে। আর শীতের সময় এসব অতিথি পাখি আরো সৌন্দর্যমন্ডিত করে এখানকার পরিবেশ। পাখি দেখতে পেলেই ক্যামেরা বন্ধি করছেন বলে জানান তারা।
তবে স্থানীয়রা বলছেন, চরাঞ্চলে বসতি নির্মাণ, চারণ ভুমি সংকট আর শিকারীদের দৌরাত্ব্যের কারণে পাখিদের আগমন কিছুটা কমে যাচ্ছে। পাখি শিকার বন্ধ এবং জনগণকে আরো বেশি সচেতন করা গেলে পাখিদের আগমন আরো বৃদ্ধি পাবে।
পাখি দেখতে আসা পর্যটক রুবেল হোসেন, লিয়াকত লিটু, তানজিল আহমেদ বাসস’কে বলেন, চরের সৌন্দর্য্য বাড়িয়ে দেয় অতিথি পাখির দল। পাখিদের কিচির-মিচির শব্দ এক ভিন্নতর মুগ্ধতার সৃষ্টি করে। তবে পাখিদের বিচরণ আরো নির্বিঘœ করার উপরে জোর দেন তারা।
জাবেদ মিয়া, শহিদুল ইসলাম ও বারেক মাঝিসহ স্থানীয় একাধিক জেলে অভিযোগ করেন, এক শ্রেণীর অসাধু শিকারি বিষটোপ, ধানের সাথে বিষ মিশিয়ে আবার ছোট-ছোট মাছের সাথে বিষ মিশিয়ে পাখি শিকারে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। চরে আশ্রয় নেয়া পাখিরা অনেকটা অনিরাপদ হয়ে পড়েছে। তাই এদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
চর কুকরী-মুকরী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাসেম মহাজন বলেন, প্রতি শীত মৌসুমেই এখানে পাখি দেখার জন্য পর্যটকরা ভীড় করেন। পাখি সংরক্ষণ ও বিচরণ নির্বিঘœ করতে লিফলেটসহ বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে পাখি শিকারে।
এ ব্যাপারে ভোলার বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এস. এম কায়সার বাসস’কে বলেন, এ বছরেও আমাদের চরগুলোতে বিপুল পরিমাণ অতিথি পাখির আগমন ঘটেছে। এখানকার চরগুলো অতিথি পাখিদের জন্য বিখ্যাত বহুবছর ধরেই। এসব পাখিদের কেউ যাতে শিকার করতে না পারে সে জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া আছে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের। প্রতিটি রেঞ্জ থেকে টহল জোরদার করা হয়েছে। তারা নিয়মিত টহল দিচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।