রেড মিট বা লাল মাংস যে শরীরের জন্য ক্ষতিকর এ কথা কম-বেশি সবারই জানা। কিন্তু উৎসব আয়োজনে মাংস না খেয়ে থাকা যায় না। বিশেষত কোরবানি ঈদের সময় নিজের ঘরে আর দাওয়াতে অনবরত চলতে থাকে গরু-খাসির মাংস খাওয়া। স্বাস্থ্যের কথা মাথায় থাকলেও মাংসের লোভনীয় সব পদের ফাঁদে পড়েন বেশিরভাগ মানুষ।
মূলত গরু, খাসি, ভেড়া, ছাগলের মাংসকে রেড মিট বলা যায়। এমন মাংস অতিরিক্ত খেলে দেখা দেয় কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা। বাড়ে হার্ট অ্যাটাক, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোকের ঝুঁকি। মাংসে থাকা বিশেষ ইনফ্লামেটরি যৌগ পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদান্ত্র ক্যানসারের জন্যও দায়ী। অর্থাৎ অন্ত্র ভালো রাখতে মাংস খেতে হবে পরিমিত।
দৈনিক কতটুকু মাংস খাওয়া যায়?
রেড মিটকে উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার বলা হয়। ইনস্টিটিউট অব মেডিসিন ইউএসএ’র তথ্য অনুযায়ী একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির দৈনিক প্রোটিন চাহিদা ১ গ্রাম/কেজি বডি ওয়েট। অর্থাৎ একজন মানুষের ওজন যদি ৮০ কেজি হয়ে থাকে, আর তিনি যদি তেমন কোনো ভারি কাজ না করেন তাহলে তিনি দৈনিক ৮০ গ্রাম গ্রহণ করতে পারেন। আর ভারি কাজ করলে প্রোটিনের পরিমাণ আরও অর্ধেক অর্থাৎ ৪০ গ্রাম বাড়বে। তখন তার প্রোটিন গ্রহণের পরিমাণ হবে ১২০ গ্রাম।
তবে একজন সুস্থ মানুষ কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়া দৈনিক সর্বোচ্চ ২ গ্রাম/কেজি বডি ওয়েট করে প্রোটিন খেতে পারবেন। অর্থাৎ একজন ৮০ কেজি ওজনের সুস্থ মানুষ দৈনিক সর্বোচ্চ ১৬০ গ্রাম প্রোটিন খেতে পারবেন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই।
অনেকেই ভাবেন, এক গ্রাম মাংস মানে এক গ্রাম প্রোটিন। এই ধারণা ভুল। আমেরিকার ইন্সটিটিউট অব মেডিসিনের তথ্য অনুযায়ী, ১০০ গ্রাম রান্না করা মাংসের মধ্যে ২৬ গ্রাম প্রোটিন, ১০ গ্রাম ফ্যাট, ৬১-৬৩ গ্রাম পানি থাকে। অর্থাৎ, ১০০ গ্রাম মাংস খেলে ২৬ গ্রাম প্রোটিন মিলবে। এই হিসবে, ১ গ্রাম প্রোটিনের জন্য প্রায় ৪ গ্রাম মাংস খাওয়া প্রয়োজন।
একজন ৮০ কেজি ওজনের সুস্থ হালকা কাজ করা মানুষের দৈনিক প্রোটিন চাহিদা হচ্ছে ৮০ গ্রাম। সুতরাং তিনি স্বাভাবিক মাংস থেকে সেই পরিমাণ প্রোটিন নিতে চাইলে ৮০x৪=৩২০ গ্রাম মাংস খেলেই যথেষ্ট। অন্যদিকে, ৮০ কেজি ওজনের একজন ব্যক্তি দিনে সর্বোচ্চ ১৬০ গ্রাম প্রোটিন বা ৬৪০ গ্রাম মাংস খেতে পারবেন।
তাই বলে সব মাংস একবেলায় খেয়ে ফেললেই চলবে না। এটি খেতে হবে তিন/চার বেলায় এবং অল্প অল্প পরিমাণে। এসময় ডাল বা বীজজাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না। তাহলে দেহের মোট প্রোটিনের মাত্রা বেশি হয়ে যাবে। যা কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে শুরু করে বদহজম, পেট ফাঁপা, বমি, গ্যাস্ট্রিকের কারণ হতে পারে। অনেকের ক্ষেত্রে আবার ২০০ গ্রামের বেশি মাংস খেলেও কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।
মাংস খেয়ে কোষ্ঠকাঠিন্য হলে করণীয়
যতই প্রোটিনের হিসাব জানা থাকুক ঈদ পরবর্তী সময় তা আর মাথায় থাকে না। তাই বেশি মাংস খাওয়া হয়ই। ফলে সঙ্গী হয় কোষ্ঠকাঠিন্য। কিছু ঘরোয়া উপায় কাজে লাগিয়ে এই সমস্যা থেকে দূরে থাকতে পারেন। চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক-
পর্যাপ্ত পানি
কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে বাঁচতে পানির বিকল্প নেই। প্রতিদিন ৩ লিটার পানি পান করার অভ্যাস করুন। পর্যাপ্ত পানি পান করলে এই সমস্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকে। তবে কিডনি রোগীরা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পানি পানের পরিমাণ নির্ধারণ করুন।
সঠিক খাদ্যাভ্যাস
অন্ত্র ভালো থাকলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় সহজেই। তাই খাদ্যতালিকায় বেশি বেশি ফাইবারযুক্ত খাবার যুক্ত করুন। কলমি শাক, পালং শাক, লাউ, আপেল, কলা, বেলের শরবত ইত্যাদি অন্ত্রের জন্য ভালো খাবার। পাশাপাশি খেতে পারেন ফর্মুলেটেড ফুড কারকুমা হেলদি গাট। দেখতে ওষুধ মনে হলেও এটি আসলে খাদ্য উপাদানের রূপান্তরিত রূপ। অর্গানিক নিউট্রিশন লিমিটেডের বাজারজাত এই পণ্যটি ইউএসডিএ অর্গানিক সার্টিফাইড এবং নন-জিএমও উপাদানে তৈরি। এটি প্রাকৃতিকভাবে পেটের খেয়াল রাখে, ভালো রাখে অন্ত্র বা গাট। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য থাকে নিয়ন্ত্রণে।
ব্যায়াম বা শরীরচর্চা
নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে। কারণ শরীর সচল থাকলে তা পায়খানা নরম রাখে। দ্রুত হাঁটা, দৌড়ানো, ফুটবল খেলা, সাঁতার কাটার মতো কাজগুলো করতে পারেন। হালকা ব্যায়ামের সুযোগ না থাকলে অন্তত দৈনিক ১৫-২০ মিনিট হাঁটার চেষ্টা করুন।
ঘরোয়া উপায়ে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমাধান না হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। নয়তো জটিল স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।