জুমবাংলা ডেস্ক : অধ্যক্ষের তাপ্পড়ে কানের পর্দা ফেটে শ্রবণশক্তি হারিয়ে ফেলেছেন সাকিল আহম্মেদ(১৫) নামের এক শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় ওই স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম ওই ছাত্রের চিকিৎসার জন্য ছয় হাজার টাকাও দিয়েছে পরিবারকে। পরে ওই শিক্ষার্থী রংপুরে চিকিৎসা শেষে এখন বাড়িতে অবস্থান করছে। ঘটনাটি কাউওকে না জানাতে ও ওই শিক্ষার্থীকে সংশ্লিষ্ট স্কুল এন্ড কলেজে না যওয়া এবং অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য হুমকি দিচ্ছন বলে কালের কণ্ঠের কাছে দাবি করেছেন সাকিলের মা ও পরিবারের অন্য লোকজন।
সম্প্রতি এমন একটি ঘটনা ঘটেছে দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার ভাদুরিয়া স্কুল এন্ড কলেজে। এ ঘটনার স্বীকার ওই ছাত্রের নাম সাকিল আহম্মেদ। সে উপজেলার ভাদুরিয়া ইউনিয়নের কাশিয়াড়া গ্রামের দরিদ্র কৃষক মিজানুর রহমানের ছেলে এবং স্থানীয় ভাদুরিয়া স্কুল এন্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র।
সরেজমিনে গত সোমবার বিকেলে কথা হয় ওই শিক্ষার্থী মা মোছা. মিনুয়ারা বেগমের সঙ্গে। সাকিলের মা কালের কণ্ঠের কাছে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘হামার ছোলকে নতুন ভর্তি করাছি স্কুলে, ছোল হামার বুঝে নাই।দুপুরে কলেজের ছোলেরা বাড়িত আসোচলো, সে জন্য মোর ছোলও বাড়িত আসবার চাছল, তখন প্রিন্সিপাল চারটা চড় মারিচে। এখন মোর ছোলটা কানে আর শুনতে পাওছে না। কারো কাছে বিচার দিলে হামার ছোলক আর ওই স্কুলত থুবে না,স্কুল থাকে বার করে দিবে।
তিনি আরো বলেন, আমার ছেলে প্রথমে বলেনি অধ্যক্ষ তার কানে থাপ্পড় মেরেছে। যখন কানে প্রচণ্ড ব্যাথা হয় তখন সব জানতে পারি। সাথে সাথে স্থানীয় ডাক্তার দ্বারা চিকিৎসা করার পর আরো ব্যাথা বেশী হলে রংপুর নিয়ে যাই। বর্তমানে রংপুরের ডাক্তারের চিকিৎসা চলছে। অনেক টাকা ব্যয় হয়েছে। অধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম চিকিৎসার জন্য ছয় হাজার টাকা দিয়েছে। এখন আর কোনো খোঁজ-খবর রাখে না। আমার ছেলে পূর্বে যে মাদরাসায় থেকে জেএসসি পাস করেছে সেই মাদরাসায় ভর্তি করার জন্য চাপ দিচ্ছে।
ওই শিক্ষার্থী সাকিল বলেন, ‘আমি নতুন ক্লাসে মাত্র দুই দিন ক্লাস করেছি। অধ্যক্ষ স্যারকেও চিনি না। টিফিনের সময় কলেজের বড় ভাইয়েরা বাড়িতে চলে যাচ্ছে। তাই আমিও বাড়ি যেতে প্রস্তুতি নিচ্ছি। এমন সময় স্যার আমাকে কানে থাপ্পড় মারতে শুরু করে। তখন আমি অনেকক্ষণ চোখ দিয়ে কিছু দেখতে পাইনি। পরে অধ্যক্ষ স্যার বলেছে বাড়িতে গিয়ে যদি বলিস এই স্কুল থেকে বাহির করে দিব। তাই প্রথমে কাউকে বলিনি। যখন প্রচণ্ড ব্যাথা হচ্ছিল তখন বাড়িতে মাকে বলেছি। এখন অধ্যক্ষ স্যার আমাকে আগের মাদরাসায় ভর্তি হতে বলছে।’
এদিকে ওই স্কুলের অধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি কোনো ছাত্রকে থাপ্পড় মারিনি। এ বিষয়টি আমার মনে পড়ছে না। আমি শুনতেছি সাংবাদিকরা দৌড়াদৌড়ি করছেন, আপনারা আমার সাথে যোগাযোগ করবেন। ওই ছাত্রকে চিকিৎসা বাবদ কোনো অর্থ বা টাকা দেইনি। এ ছাড়া তাকে অন্য কোথাও ভর্তি হতে বলিনি।’
ভাদুরিয়া স্কুল এন্ড কলেজের পরিচালনা পরষদের সভাপতি আমির হোসেন বলেন, ‘আমার কাছে কোনো ছাত্রকে থাপ্পড় মারার বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ ব্যাপারে নবাবগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘এ বিষয়টি শুনেছি, তবে কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। কোনো শিক্ষার্থীকে থাপ্পড় বা শারীরিক ভাবে কোনো নির্যাতন করা যাবে না। আমার কাছে কোনো অভিযোগ আসলে বা পেলে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুন নাহার বলেন, কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের কোনো প্রকার নির্যাতন করা যাবে না। ভাদুরিয়া স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



