জুমবাংলা ডেস্ক : বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস যদি পদত্যাগ করেন, এরপর আইনি জটিলতা কী হতে পারে- তা নিয়ে চলছে নানা বিশ্লেষণ। আইনগত দিক থেকে অন্তর্বর্তী সরকার পুনর্গঠনের সুযোগ কতটা আছে, সরকার পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে আইনি কোনো বাধা আছে কি-না, এসব প্রশ্ন উঠছে।
প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের ভাবনা নিয়ে আলোচনার শুরু জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের দেওয়া বক্তব্যের মাধ্যমে। নাহিদ ইসলাম বৃহস্পতিবার জানান, তিনি ওইদিন সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গিয়ে তার সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। প্রধান উপদেষ্টা ‘পদত্যাগের বিষয়ে ভাবছেন’।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, অধ্যাপক ইউনূস যদি পদত্যাগ করেন, তাহলে দেশের সরকার ব্যবস্থা কোন পথে চলবে? এটি কী পুনরায় গঠন করা যাবে? আইনে সরকার পুনর্গঠনের সুযোগ কতটা?
আইনজীবীদের কেউ কেউ বলছেন, সুপ্রিমকোর্টের মতামত নিয়ে দলগুলোর সমর্থনে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়েছে। ফলে এখন অধ্যাপক ইউনূস পদত্যাগ করলে কোনো সাংবিধানিক সংকট হবে না; তখন নতুন সরকার গঠনের প্রশ্ন আসবে। তাদের ব্যখ্যা হচ্ছে, অধ্যাপক ইউনূস চলে গেলে রাষ্ট্রপতি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে দিতে পারেন, যে সরকার শুধু নির্বাচন করবে।
সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক পরিস্থিতিটাকে ব্যাখ্যা করেন ভিন্নভাবে। তিনি বলেন, আইনে কী বলা আছে, তা এখন ধর্তব্যের মধ্যে পড়ে না। কারণ ‘আইন অনুযায়ী কিছু হচ্ছে না।’
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়। তবে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত বছরের ডিসেম্বরে পঞ্চদশ সংশোধনীর আংশিক বাতিল করেছে হাইকোর্ট। যে অংশটি বাতিল করা হয়েছে তার ফলে দেশের সংবিধানে আবারো নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরে আসার পথ তৈরি হয়েছে।
শাহদীন মালিক বলছেন, অধ্যাদেশ দিয়ে সংবিধান পরিবর্তন করা যাবে না এবং পঞ্চদশ সংশোধনীর আংশিক বাতিল করে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরানোর সুযোগ করা হলো, এই সংশোধনী করার ক্ষমতা তো সংসদ ছাড়া কারো নাই। তাই, এখন জোড়াতালি দিয়ে চলতে হবে। এখন আর আইনের ভূমিকা নাই। আইন অনুযায়ী কিছু হচ্ছে না। সব আইনের বাইরে হচ্ছে। আইনের প্রশ্ন এখন অবান্তর।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদও মনে করেন, মুহাম্মদ ইউনূস যদি পদত্যাগ করেন, তাহলে ‘কোনো সাংবিধানিক সংকট হবে না। উনি পদত্যাগ করলে নতুন সরকার গঠনের প্রশ্ন আসবে। উনি যদি থাকেনও, নির্বাচন করতে গেলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নাম দিয়ে সরকার গঠন করা যাবে।
আইনজীবী মনজিল মোরসেদের মতে, গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রয়োজন ছিল। এখন তা নাই। এখন নির্বাচন দরকার। তাই, নির্বাচন যদি ‘নেসেসিটি’ হয়, তাহলে নতুন করে আবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের দরকার নেই। তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করলেই হবে।
তিনি পঞ্চদশ সংশোধনীর আংশিক বাতিলের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, ‘নির্বাচন দিতে গেলে এই সরকারের আর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার থাকার সুযোগ নাই। তাদেরকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে। কারণ আদালতের রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়েআনার সুযোগ রাখা হয়েছে। আইনে এভাবেই আছে যে, নির্বাচন করবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।