অপোর মানহীন ফোনে গ্রাহকের ভোগান্তি
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : প্রযুক্তি ব্র্যান্ড অপোর বিরুদ্ধে নিন্মমানের ফোন বাজারজাত করার অভিযোগ উঠেছে। অপোর বিভিন্ন মডেলের ফোনে কিছু দিন যেতে না যেতেই ব্যাটারি ফুলে যাওয়া, ক্যামেরার রেজুলেশন কমে যাওয়া, অনেক সময় নেটওয়ার্ক কানেক্ট হতে অতিরিক্ত সময় নেওয়া, ফ্ল্যাশ লাইট নষ্ট হয়ে যাওয়া এবং কাস্টমার কেয়ার সার্ভিসে অতিরিক্ত চার্জ ও সময়মতো সার্ভিস না দেয়াসহ বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন ব্যবহারকারীরা।
অপো মোবাইল ফোন সেট ব্যবহারকারীরা জানিয়েছেন, নতুন পর্যায়ে প্রথম দিকে অপো ফোন ভালো সার্ভিস দিলেও কিছুদিন যেতে না যেতেই ধীরে ধীরে এর মান খারাপ হতে শুরু করে; ডিসপ্লেতে সমস্যা দেখা দেয়। অনেক গ্রাহকের অভিযোগ, প্রায় সময়ই ফোন হ্যাং করে ও চার্জ থাকে না। কাস্টমার সার্ভিসেও গ্রাহকদের এক প্রকার জিম্মি করে অতিরিক্ত চার্জ আদায় করা হয়। অন্যদিকে সময়মতো সার্ভিস দেয় না প্রতিষ্ঠানটি। শহরের তুলনায় মফস্বলের গ্রাহকরা বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অপোর ফেসবুক পেজেও ফোনের নি¤œমান নিয়ে নানা ধরনের অভিযোগ করেছেন গ্রাহকরা। সেখানে মনজুর আলম নামে এক গ্রাহক অভিযোগ করে বলেন, ‘একটি ফোনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ডিভাইস হচ্ছে প্রসেসর। অপো সেই প্রসেসরের তথ্য সব সময় হাইলাইটস করা থেকে বিরত থাকে। এই মডেলে হেলিও পি৩৫ প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে; যা অনেক দুর্বল।’ অপো এই এ৭৭৭ মডেলের ফোনটি আরও অনেকেই অনেক মন্তব্য করেছেন। সাবিহা ইসলাম তিশা কমেন্ট অপশনে ক্যামেরার ডিটেইলস জানতে চাইলে তার কমেন্ট সেকশনে আনোয়ার হোসেন নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘এ৭৭৭ মডেল ফোনটির ক্যামেরা ভালো না। পোর্টেটমুড নেই।’ মাহবুবুল আনোয়ার নামে আরেক গ্রাহক অপোর ফেসবুক পেজে অভিযোগ করে লিখেছেন, ‘সেট বিক্রি করেই শেষ, সার্ভিস সংক্রান্ত বিষয় আসলে নানান তালবাহানা।’
অপোর মোবাইল ব্যবহারকারী আরিফ জানিয়েছেন, ‘মোহাম্মদপুরের একটা মার্কেট থেকে অপো এফ১৯ মডেলের একটি সেট কিনেছিলাম। ফোনটা কেনার ৫ মাস হয়েছে। ছবি-সেলফি কোয়ালিটিতে একবারেই সমস্যা হচ্ছে। কেনার দুই মাসের মধ্যেই ক্যামেরার কোয়ালিটি খারাপ হতে শুরু করে। আর ভিডিও কথা কি বলব, লাইভ দিতে গেলে ভিডিওর ছবি ফেটে যায়। মোবাইল সেটের সেটিং অটোমেটিক চেঞ্জ হয়ে যায়, এটা হঠাৎ করেই হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘অপোর ক্যামেরা ভালো বলে শুনেছিলাম। এ কারণে ফেসবুকে লাইভ দেব বলেই ২২ হাজার টাকা দিয়ে সেটটি কিনি। কিন্তু ধরা খেয়েছি। এর থেকে কম দামের অন্য ব্র্যান্ডের সেট দিয়ে মানুষ ভালো ভিডিও পাচ্ছেÑবলে যোগ করেন
এই ভুক্তভোগী।’ শাহ সুলতান শাওন নামের আরেক গ্রাহক অপোর ফেসবুক পেজের কমেন্ট বক্সে অভিযোগ জানিয়ে লিখেছেন, ‘অপো ৩ জিবি এ৯৫ মডেলে নতুন ফোনটিতে দ্রুত চার্জ চলে যাচ্ছে।’
জান্নাতুল মিম নামে আরেক গ্রাহককে অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার অপো এ৯ ক্যামেরার শুরুর দিকে ছবি ভালো এলেও এখন ছবি ভালো আসছে না। এছাড়া নতুন ফোন কিনলাম এক বছরও হয়নি অথচ ফোন হ্যাং করে। কিছুক্ষণ ব্রাউজিং করার পরই ফোন গরম হয়ে যায়।’ আহনাফ আবদুল্লাহ আল আহনাফ নামে আরেক অপো হ্যান্ডসেট ব্যবহারকারী জানান, ‘আমার অপো রেনো৭ প্রো মডেলের ফোনটি ফ্লাশলাইট কাজ করছে না। আসলে আমি নিজেই অপো ব্র্যান্ডের ফোন কিনতে আগ্রহী ছিলাম না। শোরুম থেকে ডেকে নানা রকম কমপেয়ার করে সুবিধার কথা বলে ফোনটি ধরিয়ে দিল। বুঝতেই পারলাম না। আসলে ফোন বিক্রি করাই হচ্ছে অপোর মূল টার্গেট। কাস্টমারদের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই।’
মাইনুল ইসলাম নামের আরেক গ্রাহক বলেন, ‘অপো ফোন দেখতে যতটা সুন্দর মান ততোটাই বাজে। ক্যামেরার রেজুলেশন ঠিক থাকে না। অনেক সময় ফোনের নেটওয়ার্কে সমস্যা দেখা দেয়। কথা বলতে অপর প্রান্তে যাদের সঙ্গে কথা বলি তারা কথা বুঝে না। সার্ভিসিং করতে গেলেও অনেক টাকা চার্জ করে বলে মাইক্রোফোন বদলাতে হবে।’
তবে বেশিরভাগ গ্রাহকের অভিযোগ, বিক্রেতাদের কাছে গিয়ে সমস্যার কথা জানালে তারা পাঠিয়ে দেন সার্ভিস সেন্টারে। সেখানে গিয়ে ব্যবহারকারীদের হতে হয় হয়রানির শিকার। অপোর সার্ভিস সেন্টারে অনেক গ্রাহককেই ধরিয়ে দেওয়া হয় লম্বা বিল। অনেক ক্ষেত্রে ওয়ারেন্টি থাকলেও নানা অজুহাতে বলা হয় সার্ভিসটি ওয়ারেন্টির আওতাভুক্ত নয়। এসব কারণেই মোবাইল ফোনের বড় বিক্রেতারা অপো মোবাইল সেট বিক্রি করতে অনেকটাই নারাজ।
গেজেটভিত্তিক বিভিন্ন ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, এখনকার স্মার্টফোনের বাজারদর অনুযায়ী অপোর ফোনের দাম তুলনামূলক বেশি। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে অন্যান্য ব্র্যান্ডের নানা ফিচারের ফোন আসায় অপো থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন গ্রাহকরা।
নানা অভিযোগের বিষয়ে শেয়ার বিজের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় অপোর বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সঙ্গে। অপোর জনসংযোগ কর্মকর্তা নাজমুস সাকিবের হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করা হলেও কোনো উত্তর দেননি। পরবর্তী সময়ে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। বক্তব্য জানতে অপোর মূল কোম্পানিকে দুইবার ই-মেইল করা হলেও কোনো জবাব দেয়া হয়নি।
বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, ‘দেশে নি¤œমানের মোবাইল ফোন ক্রয়ে গ্রাহকরা প্রতারিত হলেও বেশিরভাগ গ্রাহকই অভিযোগ করেন না। এমনকি অনেক গ্রাহক জানেনও না কোথায় বা কাদের কাছে অভিযোগ করতে হয়। আবার সার্ভিসিং সেন্টারে সময় মতো সার্ভিস পায় না গ্রাহক। উল্টো বেশি চার্জ নেয় সার্ভিসিং পয়েন্টগুলোতে। অথচ মার্কেটগুলোতে ফোন কিনতে গেলে কাস্টমারদের শোরুম থেকে বাসযাত্রীর মতো ডাকা শুরু করে। আবার কাস্টমারদের সঠিক তথ্য না দিয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে কোম্পানিগুলো ফোন সেল করছে। এতে গ্রাহকরা এক প্রকার প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।’
জানতে চাইলে বিটিআরসির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমরা গ্রাহকদের যেসব অভিযোগ পাই, তা দ্রুত নিষ্পত্তি করছি। এ ধরনের অভিযোগ পেলে সেগুলোর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেবে বিটিআরসি। কেননা প্রতিষ্ঠানের চেয়ে গ্রাহকের সুবিধা-অসুবিধা আমাদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’”
অন্যদিকে, অপোর বিরুদ্ধে মিথ্যা ঘোষণায় মোবাইল ফোনসেট আমদানির অভিযোগ রয়েছে। প্রায় হাজার মোবাইল সেট আমদানি করা হয়েছে। আমদানি করা এসব সেটের প্রতি ইউনিটের মূল্য ৯৬ ডলার করে। আমদানির বৈধ কোনো বিল অব এন্ট্রি দেখাতে পারেনি অপো। মোবাইল ফোন আমদানিতে প্রযুক্তি ব্র্যান্ড অপোর বিরুদ্ধে এমন অনিয়মের তথ্য পেয়েছে এনবিআর। ঢাকা কাস্টম হাউস দিয়ে অপো এ মোবাইল সেটগুলো আমদানি করে আসছে।
অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তারা অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড থেকে অপো বাংলাদেশ কমিউনিকেশন ইক্যুইপমেন্ট কোং নামের প্রতিষ্ঠানের হ্যান্ডসেট আমদানির তথ্য নেয়। যাতে দেখা যায়, ২০১৮ সালে অপো ‘১৮০৩ মডেলের’ দুই হাজার অপো ব্র্যান্ডের মোবাইল সেট আমদানি করে। এসব ফোন সেট মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে আমদানি করেছে। এসব সেটের প্রতি ইউনিটের শুল্কায়নযোগ্য মূল্য ছিল ৯৬ ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় সাত হাজার ৯৬৮ টাকা (ডলার মূল্য ৮৩ টাকা)। আর প্রতি ইউনিটের শুল্কহার ছিল ২৮ দশমিক ৫ শতাংশ। সে অনুযায়ী দুই হাজার সেটের শুল্কায়নযোগ্য মূল্য এক কোটি ৬২ লাখ ৫৬ হাজার ৩১৪ টাকা, যাতে প্রযোজ্য শুল্ককর ৪৬ লাখ ৩৩ হাজার ৪৯ টাকা। ব্যবস্থা নিতে ঢাকা কাস্টম হাউসকে প্রতিবেদন দেয় কাস্টমস গোয়েন্দা। প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়েছে ঢাকা কাস্টম হাউস।
কীভাবে চিনবেন মিষ্টি ও রসালো তরমুজ? কেনার আগে মনে রাখবেন যেসব বিষয়
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।