জুমবাংলা ডেস্ক: গত ২০ মার্চ দেশের অন্যতম বেসকারি বিশ্ববিদ্যালয় ব্র্যাকের সমাবর্তনে সনদ পেয়েছেন প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী। তবে তাঁদের মধ্যে ব্যতিক্রম মোবারক হোসেন।
২০০৬ সালের শম্ভুগঞ্জ ইউ সি হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন মোবারক হোসেন। ছয় ভাইয়ের মধ্যে তৃতীয় মোবারক এসএসসি পাসের পর যখন ময়মনসিংহ ছেড়ে ঢাকায় আসেন তখন তাঁর সামনে ঘোর বিপদ। বড় ভাইয়ের পরিশ্রমের অর্থ আর নিরাপত্তা প্রহরী পিতার সামান্য বেতনে আট সদস্যের পরিবারটি সংগ্রাম করে টিকে ছিল কেবল।
তাই সেই সময় উচ্চশিক্ষার প্রবল ইচ্ছা থাকলেও সে পথে পা বাড়ানোর সাহস পাননি মোবারক।
ঢাকায় পৌঁছানোমাত্রই হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকেন চাকরি। কিছুদিনের ব্যবধানে বাংলাদেশ অনলাইন লিমিটেড নামের একটি ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট–সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে বিল সংগ্রহের কাজ পেয়ে যান। কিন্তু তাতেও যেন আর্থিক মুক্তি পাওয়া যাচ্ছিল না। ঠিক এ রকম এক সময়ে মোবারকের জীবনে আসে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগে অফিস সহকারী হিসেবে কাজ করার সুযোগ।
২০০৯ সালে আমি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন অফিস সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন মোবারক। পড়াশোনার প্রবল ইচ্ছা তেকে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজে মানবিক বিভাগে ভর্তি হন তিনি। চার বছর পর আবার শুরু হয় আমার শিক্ষাজীবন। চাকরির পাশাপাশি চলতে থাকে তাঁর পড়াশোনা। এইচএসসি শেষে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ২০১৮ সালে বিএ পাস করেন তিনি।
২০১৭ সালে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন মাসের দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ নেওয়াটা বড় ভূমিকা রেখেছে মোবারকের জীবনে। বাংলা মাধ্যমে পড়েছেন, তাই ইংরেজিভীতি ছিল। স্নাতকোত্তর করার ইচ্ছা থাকলেও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো আগাগোড়া ইংরেজি শিক্ষাক্রমে যুক্ত হওয়ার সাহস সঞ্চয় করতে পারছিলেন না। ব্র্যাকের এমবিএ প্রোগ্রামে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েও তাই প্রথম দফায় ব্যর্থ হয়েছিলেন। ব্র্যাক বিজনেস স্কুলের প্রভাষক শামীম আহমেদের অনুপ্রেরণা ও সাহায্য এবং দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্পের প্রশিক্ষণ—এই দুইয়ে মিলে মোবারক হোসেন আরও একবার চেষ্টা করেন। এ চেষ্টা বিফলে যায়নি। ২০১৯ সালে ব্র্যাক বিজনেস স্কুলের স্প্রিং সেমিস্টারে ভর্তি হন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ইংরেজিভীতি কাটিয়ে উঠতে পারলেও আর্থিক ধাক্কা সামলাতে বেশ ঝামেলা পোহাতে হয়েছিল। প্রাইভেট ভার্সিটির পড়াশোনা ব্যয়বহুল। তাই ব্র্যাকের স্টাফ হিসেবে ৫০% বৃত্তি পেলেও বাকি ৫০% জোগাড় করতে ধার দেনা করতে হতো। করোনার সময়ে সেই পথও বন্ধ হয়ে যায়।
কারণ, ধার নিলে ভবিষ্যতে শোধ করব কী করে! সেই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে স্থাপত্য বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক জায়নাব ফারুকী আলী আর্থিকভাবে সহায়তা করেছিলেন মোবারককে। একাধারে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মী ও শিক্ষার্থী হিসেবে কাটানো দিনগুলো স্মরণ করে তিনি বলেন, শিক্ষকদের আন্তরিকতা ও সহকর্মীদের সাহায্য তাঁকে এতটা পথ পাড়ি দিতে সহায়তা করেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।