আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সৌদি আরবের মেগা সিটি ‘নিওম’ এর নিমার্ণকাজ ধারণার তুলনায় দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) তিন মিনিটের ভিডিওতে এ অগ্রগতির কথা জানিয়েছে প্রোজেক্ট নিওম। ৫০০ বিলিয়ন বা ৫০ হাজার কোটি ডলার ব্যয়ে বানানো হচ্ছে অত্যাধুনিক ফিউচারস্টিক এ শহরটি। জানানো হয়েছে, আগামী বছরই খুলে দেয়া হতে পারে পর্যটনের জন্য শহরটির নির্ধারিত অংশ। খবর আল অ্যারাবিয়ার।
হাজার কোটি ডলার ব্যয়ে যে শহর সৌদি আরব নির্মাণ করছে সেটির নাম ‘নিওম’। আর এর মাধ্যমেই বাস্তবে রূপ নিচ্ছে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ও যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা। সৌদি আরবের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বিশাল এলাকাজুড়ে লোহিত সাগর তীরে গড়ে তোলা হচ্ছে ভবিষ্যতের অত্যাধুনিক এ শহর। ১৬টি অঞ্চল নিয়ে হবে- নিওম; যার আকার হবে ৩৩টি নিউইয়র্কের সমান!
এতোদিন শুধু গ্রাফিক্যাল প্রেজেন্টশনে উচ্চাভিলাষী প্রকল্পের ছবি দেখানো হলেও; প্রথমবার বাস্তব চিত্র উপস্থাপন করলো নিওমের নিজস্ব ওয়েবসাইট। ৩ মিনিটের এক ভিডিওতে দেখানো হয়- চারটি ভাগে বিভক্ত শহরটির নির্মাণাধীন অঞ্চলগুলোর অগ্রগতি।
সৌদি প্রশাসনের দাবি, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে; ২০২৪ সালের মধ্যেই পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত হবে বিলাসবহুল বিনোদন নগরী- সিন্দালাহ্। লোহিত সাগর তীরে থাকবে বিশ্বমানের মেরিন ও ইয়ট ক্লাব। তাছাড়া, ভ্রমণপিপাসুদের আকৃষ্ট করতে রাখা হয়েছে ২ হাজার প্রজাতির বিরল সামুদ্রিক প্রাণীও।
এ প্রসঙ্গে নিওম এর সিইও নাধমি আল-নাসর বলেন, আমরা যদি আগামীর চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতে চাই; তাহলে- যতো কঠিনই মনে হোক না কেনো আজ সেসবের মুখোমুখি হতেই হবে। নিওমে- সুশিক্ষিত একটি সম্প্রদায়ের সাথে মানবতার মিশেল ঘটতে যাচ্ছে। ২০-৩০ বছর পর একটি অত্যাধুনিক শহরের যেমন হওয়ার কথা; আজ আমরা সেটিই নির্মাণ করছি। আমরা আমাদের ভবিষ্যৎকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করছি, ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্যও নিওম উন্মুক্ত থাকবে বলে জানান তিনি।
সৌদি যুবরাজের উচ্চাকাঙ্খী প্রকল্পের বড় অংশজুড়ে রয়েছে পাবর্ত্য অঞ্চল- ট্রোজেনা। যা, জিসিসিভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে প্রথম ‘আউটডোর স্কি রিসোর্ট’। ২০২৯ সালের শীতকালীন এশিয়া গেমস সেখানেই অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এতে অংশ নেবেন ৩২টি দেশের ক্রীড়াবিদরা।
জীববৈচিত্র্যের অংশ হিসেবে সৌদি আরবের মরুভূমিতে ১০০ বছর পর হাঁটলো ‘ওরিক্স’ নামের এই প্রাণীগুলো।
এছাড়া, এ শহরের বুকে এগিয়ে যাচ্ছে আরেকটি শহর বানানোর কাজ। ১৭০ কিলোমিটারের বিলাসবহুল সেই নগরী পরিচিত ‘দ্যা লাইন’ হিসেবে। পুরোপুরি কার্বনমুক্ত ওই এলাকাটিতে গড়ে তোলা হচ্ছে ৯০ লাখ মানুষের আবাসন। যা শতভাগ পরিবেশবান্ধব জ্বালানির মাধ্যমে চলবে। রাতের আকাশে পুরো এলাকায় আলো ছড়াবে কৃত্রিম চাঁদ। থাকবে কৃত্রিম মেঘমালা তৈরির প্রযুক্তিও।
জানানো হয়েছে, যোগাযোগের জন্য নিওমের বাসিন্দারা ব্যবহার করবেন উড়ন্ত ট্যাক্সি। যা সরবরাহ করবে জার্মান প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান- ভোলোকপ্টার। আবর্জনা সরানো এবং বাসাবাড়ির কাজ করবে রোবট। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হলোগ্রাফিক পদ্ধতিতে দেয়া হবে পাঠদান। যা, এতোদিন শুধু সায়েন্স ফিকশন মুভিতেই দেখানো হয়েছে।
নিওমের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ভিডিওতে উপস্থাপন করা হয়েছে- শিল্পনগরী ওক্সাগনের ছবিও। আধুনিক কর্মাশিয়াল এ হাবটি হবে পুরোই ভাসমান। যা, বিশ্বে এই প্রথম। তাছাড়া, মেগাসিটিতে কাজ শুরু করা প্রথম প্রতিষ্ঠান তোনোমুসের অফিসও জনসম্মুখে এলো এবার। এরইমধ্যে, নিওমের আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্টে দুবাই ও লন্ডন থেকে চালু হয়েছে সরাসরি ফ্লাইট।
প্রসঙ্গত, গ্রিক ও আরবি শব্দের সমন্বয়ে এসেছে নিওম নামটি। গ্রিক ভাষায় নিও মানে নতুন। আর, আরবি ভাষায় মুসতাকবাল অর্থ ভবিষ্যৎ। যা মেলালে দাঁড়ায় নতুন ভবিষ্যৎ। জ্বালানি তেলের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে সৌদি সমাজ ও অর্থনীতিতে পরিবর্তন আনার জন্য যে ‘ভিশন- ২০৩০’ নিয়েছেন দেশটির ভাবী শাসক- এমবিএস; তারই অংশ হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে নিওম।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।