জুমবাংলা ডেস্ক: চীনের উহান থেকে ফিরে আসা বাংলাদেশিদের আশকোনার হজক্যাম্পে থাকার পরিবেশ নিয়ে অভিযোগ উঠেছে৷ ডয়চে ভেলেকে সেখানকার পরিস্থিতি জানিয়েছেন অবস্থানরতদের একজন৷ খবর ডয়চে ভেলের।
চীনের উহান থেকে ফিরিয়ে আনা বাংলাদেশিরা ঢাকার আশকোনা হজ ক্যাম্প থেকে কবে ছাড়া পাবেন তা এখনো নিশ্চিত নয়৷ তাদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা রোববার থেকে শুরু হয়েছে৷ তবে তাদের কারো মধ্যেই এখনো করোনা ভাইরাস আক্রান্তের লক্ষণ দেখা যায়নি৷
গত শনিবার চীনের করোনা ভাইরাস আক্রান্ত উহান থেকে ৩১২ জন ফিরিয়ে এনেছে বাংলাদেশ৷ জ্বর থাকায় তাদের সাত জনকে বিমানবন্দর থেকেই আলাদা করে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসাপাতালে নেয়া হয়৷ তিন জনকে পাঠানো হয় সিএমএইচ-এ৷ বাকি ৩০২ জন আছেন আশকোনা হাজি ক্যাম্পে৷
চার তলা হজিক্যাম্পে তাদের আলাদাভাবে থাকার কোনো ব্যবস্থা নেই৷ গণরুমে ফ্লোরে বিছানা পেতেই থাকতে দেয়া হয়েছে৷
তারা এখন পুরোপুরি বাইরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন৷ কাউকে সেখান থেকে বের হতে দেয়া হচ্ছে না৷ দেখা করার অনুমতি নেই স্বজনদেরও৷ টেলিফোন যোগাযোগের ওপরও অনেকটা নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে বলে জানা গেছে৷ তবে এরইমধ্যে ফেসবুক ও কিছু সংবাদ মাধ্যমে সেখানকার অব্যবস্থাপনার কথা জানিয়েছেন কয়েকজন৷
এই পরিস্থিতির মধ্যে হজ ক্যাম্পে অবস্থানরত একজন ছাত্রের সঙ্গে টেলিফোনে ডয়চে ভেলের কথা হয়৷ নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি জানান, তারা ৫৫ জন একটি গণরুমে আছেন৷ এরকম বেশ কয়েকটি গণরুম আছে৷ বাকিদেরও একইভাবেই রাখা হয়েছে৷ নারীদের জন্য রয়েছে আলাদা গণরুম৷ সবাইকেই থাকতে হচ্ছে ফ্লোরে পাশাপাশি বিছানায়৷ তিনি বলেন, ‘‘এই গণরুমে থাকাটাই হচ্ছে আমাদের জন্য ভয়ঙ্কর৷ আর এখানে মশা আছে৷ খাওয়া দাওয়া মোটামুটি ঠিক আছে৷ কিন্তু ভালো বলা যাবে না৷” তবে রোববার সন্ধ্যার পর সেখানে মশার ঔষধ ছিটানো হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি৷
তার অভিযোগ, নিয়মিত তাদের জ্বর পরীক্ষা করার দরকার হলেও তা করা হচেছ না এই ক্যাম্পে৷ গতকাল (শনিবার) সন্ধ্যায় ডাক্তাররা এসেছিলেন৷ তারা ওষুধের কথা বললেও এখনও তা দেয়া হয়নি৷
তিনি বলেন, সেখানে ওয়াশরুম ভালো না৷ হ্যান্ড ওয়াশ নেই, সাবান নেই৷ সেই সঙ্গে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার অভাবও আছে৷ ‘‘আমরা কৃতজ্ঞ যে আমাদের ফিরিয়ে আনা হয়েছে৷ কিন্তু তারপরও সবকিছুতে একটা একটা অবহেলার ভাব৷” জানান তিনি৷
হজক্যাম্পের মধ্যে তারা চলাফেরা করতে পারেন৷ একরুম থেকে আরেক রুমেও যেতে পারেন৷ শুধু বাইরে যাওয়ারই সুযোগ নেই৷
শুরুতে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ফেরত আসা বাংলাদেশিদের আশকোনো হজ ক্যাম্পে ১৪ দিন পর্যবেক্ষণে রাখা হবে৷ এই সময়ের মধ্যেই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পায়৷ তবে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা রোববার ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘এখনো বলা যাচ্ছে না যে তারা ঠিক কতোদিনের মধ্যে ছাড়া পাবেন৷”
তিনি জানান, ‘‘গতকাল আমরা তাদের নিয়ে কাজ করতে পারিনি৷ আজ (রোববার) কাজ শুরু করেছি৷ তাদের সবাইকে একটি ফর্ম দেয়া হয়েছে৷ সেই ফর্ম পূরণ করার পর কাজ শুরু হবে৷ আমরা তাদের স্বাস্থ্য ও ভ্রমণের অতীত ইতিহাস জানছি৷ সবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে৷ তবে এখন পর্যন্ত তাদের কেউই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত নয় বলেই আমরা নিশ্চিত৷”
মেঝেতে না হলেও গণরুমে পাশাপাশি থাকতে দেয়ার বিষয়টিকে তিনি সমস্যা মনে করেন৷ তাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইড লাইন মেনে বিছানাগুলোর মধ্যে এক মিটার দূরত্ব রাখা হচ্ছে বলে জানান তিনি৷ বলেন, আশকোনা হজ ক্যাম্পে আলাদা আলাদা রাখার কোনো ব্যবস্থা নেই৷
যে ১০ জনকে হাসপাতালে রাখা হয়েছে তাদের রক্তের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে৷ তবে এই রিপোর্ট পেতে আরো দুইদিন সময় লাগবে৷ যারা আশকোনা হজ ক্যাম্পে আছেন তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী রক্ত পরীক্ষা করা হবে৷ ক্যাম্পের তত্ত্বাবধান করছে আইইডিসিআর৷ সেনাবাহিনীর একটি টিমও কাজ করছে৷
উহান থেকে যাদের নিয়ে আসা হয়েছে তাদের মধ্যে নারী ছাড়াও ১২ শিশু ও তিন নবজাতক আছে৷ শনিবার সকালে তাদের সবাইকে বিমানের বিশেষ ফ্লাইটে চীনের উহান থেকে ফিরিয়ে আনা হয়৷
এদিকে বাংলাদেশে চীনা নাগরিকদের অন ‘অ্যারাইভাল ভিসা’ ব্যবস্থা স্থগিত করা হয়েছে৷ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এই তথ্য জানিয়েছেন৷
এদিকে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত চীনে ৩০৪ জনের মৃত্যু হয়েছে৷ রোববার প্রথমবারের মত চীনের বাইরে এই রোগে একজনের মৃত্যু হয়েছে ফিলিপাইন্সে
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।