জুমবাংলা ডেস্ক: পথের দুপাশে ধান খেত। পুরো মাঠে বাতাসে দোল খাচ্ছে ধানের শীষ। এরই মাঝে মাঝে রয়েছে তরমুজখেত। আর খেতের মাচায় ঝুলছে রং-বেরংয়ের তরমুজ। কোনোটার উপরিভাগ হলুদ, ভেতরে লাল টকটকে। আবার কোনটির উপরিভাগ গাঢ় সবুজ, ভেতরে হলুদ। এসব তরমুজ খেত থেকে তুলে পথের পাশে এক স্থানে জড়ো করছেন কৃষক।
পথ দিয়ে চলাচলকারী ব্যক্তিরা সেসব তরমুজ দরদাম করে কিনছেন। তাছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা এসে খেত থেকে ভালো দামে তরমুজ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। সেই তরমুজ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানে করে পাঠানো হচ্ছে দেশের বিভিন্নস্থানে।
তরমুজ ঘিরে এমন উৎসবের আমেজ চলছে জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার আওলাই ইউনিয়নের ভূতগাড়ি, ভারাহুত, শিরট্টি, গোড়নাসহ আশপাশের কয়েকটি এলাকায়। ওই এলাকার তরমুজ চাষিরা বলেন, বছরের নয় মাস জুড়ে মাচায় তরমুজ চাষ করা যায়। এই ফসল লাভজনক হওয়ায় তাদের মধ্যে বেড়েছে আগ্রহ। এতে তরমুজ চাষ প্রতিবছরই বাড়ছে। এবার ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকরাও খুশি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এবার জেলার পাঁচ উপজেলায় ৪৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৯ হেক্টর, পাঁচবিবিতে ২২ হেক্টর, আক্কেলপুরে ২ হেক্টর, ক্ষেতলালে ৫ হেক্টর ও কালাই উপজেলায় ৭ হেক্টর জমিতে মাচায় তরমুজ চাষ করেছেন চাষিরা।
গত কয়েকবছর ধরে তরমুজ চাষ করছেন কৃষক জয়নুল হক। এবার তিনি ৩ বিঘা ৭ শতক জমিতে কয়েক জাতের তরমুজের আবাদ করেছেন। এই কৃষক ঢাকা পোস্টকে বলেন, এবার মধুমালা, সুগারকিং ও টাইগার ক্রাউন জাতের তরমুজ চাষ করেছি। এই তরমুজ চাষ বছরে ৯ মাস ধরে করা যায়। আর বাকি ৩ মাস শীত মৌসুমে আলু চাষ করা হয়। ধান আর আলু চাষ আমাদের প্রধান। কিন্তু তরমুজে অধিক লাভ হয়। অসময়েও ভালো টাকা আয় হয় তাই এই চাষ দিনদিন বাড়ছে।
তরমুজ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে এই কৃষক বলেন, এক বিঘা জমিতে জৈব সার, কীটনাশক, ইউরিয়া, ফসফেট, ডিএপি পটাশসহ যাবতীয় সার দিতে হয়। তরমুজ চারা রোপণের জন্য কিছুদূর পরপর বেড তৈরি করে নিতে হয়। আর ওই বেডে পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেওয়ার পর বীজ রোপণের স্থানে ফুটো করে তা রোপণ করা হয়। বীজের চারা গজালে বাঁশ, সুতা দিয়ে মাচা তৈরি, জমির চারপাশে নেট দিয়ে ঘিরে দিতে হয়। ছোট ছোট বাঁশের খুঁটি দিয়ে মাচায় চারা তুলে দেওয়ার কাজ করতে হয়। এসব কাজে প্রতি বিঘায় শ্রমিক মজুরিসহ ৪৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ করতে হয়। তরমুজের বীজ ভালো মানের হলে তরমুজ ভালো এবং বড় হয়। এতে ক্রেতা এবং ব্যবসায়ী ভালো দামে কিনে নেন।
আরেক তরমুজ চাষি সাইদুল ইসলাম বলেন, জমিতে ধান লাগালে ধান কেটে বিক্রির পর টাকা পাওয়া যায়। আর তরমুজ লাগালে তিন মাসের মধ্যে বিক্রি শেষ করা যায়। আবহাওয়া ভালো থাকলে ফলন ভালো হয়। এটি লাভজনক ফসল।
ভারাহুত গ্রামের কৃষক মুসা মণ্ডল সাড়ে ৩ বিঘা জমিতে এবার তরমুজ চাষ করেছেন। তরমুজ চাষের জন্য ওই জমি তিনি বছরে ৩০ হাজার টাকায় বর্গা নিয়েছেন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই তরমুজ চাষে প্রতি বিঘায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়। ফলন ভালো হলে ৮০ থেকে ১০০ মণের ওপর তরমুজ উৎপাদন হয়। আর বাজারে দাম ভালো থাকলে বিক্রি হয় এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা। কেউ কেউ ২ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করে থাকেন। এবার তরমুজের দামও ভালো আছে। ১২শ টাকা থেকে ১৮শ টাকা মণ পর্যন্ত তরমুজ বিক্রি করা হচ্ছে। লাভজনক ফসল তরমুজ চাষে এই এলাকার মানুষ স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
ওই এলাকার তরমুজ ব্যবসায়ী মফিদুল ইসলাম বলেন, আমরা কৃষকের জমি থেকে পছন্দ করে তরমুজ ক্রয় করি। সেসব তরমুজ আবার সীমিত লাভে অন্যান্য বাজার কিংবা পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) কৃষিবিদ মো. মজিবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, অসময়ের এই তরমুজে চাষিরা লাভবান হচ্ছেন। ব্ল্যাক বেবি, মধুবালা, গোল্ডেন ক্রাউন, ইয়েলো কিংসহ কয়েক জাতের তরমুজ এ জেলায় আবাদ হয়। একই সময়ে এক জমিতে দুই থেকে তিনবার তরমুজ চাষ করতে পারে এবং অসময়ে যে টাকা আসে তাতে তাদের অন্যান্য ফসলের খরচ উঠে যায়। এই ফসল চাষে কৃষি বিভাগ থেকে চাষিদের পরামর্শ এবং সার্বিক সহযোগিতা করা হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।