অসীম বা ইনফিনিটি নিয়ে মানুষ হয়তো সভ্যতার শুরু থেকেই ভেবেছে। সেই ভাবনায় কতটা গণিত ছিল, তা জানা কঠিন। তবে রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে আদিমানব যে বিস্মিত হয়েছিল, ভেবেছিল এর বিস্তারের কথা, তা নিয়ে কোনো বিবাদ থাকার কথা নয়। মায়া সভ্যতার আদিজ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কথা বলুন, কিংবা বলুন মিশরের ফেরাউনদের পিরামিড তৈরির ভাবনার কথা—অসীমের দিকে মানুষের দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিল আজন্ম। প্রশ্ন হলো, গাণিতিক দৃষ্টিকোণ থেকে অসীমের ভাবনা উপস্থাপিত হলো কখন?
বার্নার্ড বোলজানো নামে এক বোহেমিয়ান (প্রাচীন চেক সাম্রাজ্য) পাদ্রী প্রথম সতের শতকের শেষদিকে অসীমের গাণিতিক সংজ্ঞা দেন তাঁর প্যারাডক্স অব দ্য ইনফাইনাইট গ্রন্থে। গাণিতিক দৃষ্টিকোণ থেকে অসীমের অনুপস্থিতি যে প্যারাডক্স বা হেঁয়ালির জন্ম দেয়, তার সমাধানে বোলজানো অসীমের ধারণা উপস্থাপন করেন। পরে, ১৮ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে রুশ গণিতবিদ গিয়র্গ ক্যান্টর—সেট থিওরেম বা উপপাদ্যের প্রবর্তক—ত্রিকোণমিতিক দৃষ্টিকোণ থেকে কন্টিনুইটি বা অবিচ্ছিন্নতার ধারণার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে অসীমের ওপর আলোকপাত করেন।
অসীমের গাণিতিক উপস্থিতি আজ সুদৃঢ়। তবু এর জাগতিক উপস্থিতি চিহ্নিত করতে বেগ পেতে হচ্ছে গণিতবিদ ও পদার্থবিজ্ঞানীদের। স্পেস বা মহাশূন্য কি অসীম? সময় কি অসীম? কিংবা মহাবিশ্ব? পৃথিবী বা মহাবিশ্বের কোথায় দেখা মিলবে অসীমের? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর যে সব মিলেছে, তা বলা যাবে না। তবে মানবকল্পনায় অসীমকে ধারণ করার ক্ষমতা যে অপ্রতুল, তা মানতেই হবে।
সময়ের স্কেলে অসীমের অর্থ কী দাঁড়ায়? একটি বাক্সে যদি একটি বস্তুকে রেখে দেওয়া যায়, যেমন ধরা যাক একটি আপেল, তবে ১ বছর পর আপেলটিতে পঁচন ধরবে। ১০০ বছর পর আপেলটি ক্ষয়ে ধুলায় পরিণত হবে। লক্ষ বছর পর সে ধূলিকণায় অবস্থিত রাসায়নিক বন্ধন ভেঙে মৌলিক কণার প্লাজমা তৈরি হবে, এরপর সে প্লাজমা আবারো বস্তুতে রূপান্তরিত হতে পারে। প্লাজমার সামনে লাখো বিলিয়ন বিলিয়ন সংখ্যক কম্বিনেশন রয়েছে। সময় যদি অসীম হয়, তবে এ সব কম্বিনেশনের কারণে চক্রাকারে সেই প্লাজমা হয়তো ফের আপেলে পরিণত হবে
মহাবিশ্বের অসীমতার কথা ধরি কিংবা প্ল্যাঙ্ক দৈর্ঘ্য—এগুলোকে কল্পনায় আনতে ক্লান্ত হয়ে পড়লে কী হবে, মানুষ হিসেবে আমার, আমাদের অস্তিত্ব যে কত নগন্য, অসীমের ধারণা কেবল একেই পুনঃপ্রতিষ্ঠা দেয়। এই দৈনন্দিন বোঝাপড়া, এই ভ্রমণ, বিলাস, আর ভোজনের অর্থ কী তবে? বিদ্যমান দ্বন্দ্ব আর বিবাদেরই-বা মানে কোথায়? অসীমের ধারণা যখন জীবনকে প্রায় অর্থহীন করে তোলে, তখনি আমার স্ত্রীর আলিঙ্গন, পুত্রের দৃঢ় করমর্দন আর কন্যার ভুবনভোলানো হাসি জীবনকে অর্থ দেয় আরেকটিবার। পরিবার, বন্ধুরা, আমাদের আপনজনেরাই আমাদের জীবনকে পূর্ণতা দেয়, করে তোলে অর্থপূর্ণ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।