জুমবাংলা ডেস্ক : সুশ্রী চেহারার রাসেল হাওলাদার (২০)। হঠাৎ দেখে মনেই হবে না তিনি অসুস্থ। অথচ কৈশোর থেকেই মানসিক সমস্যায় ভুগছেন তিনি। অসুস্থ হওয়ার পর প্রায়ই বাড়ি ছেড়ে চলে যেতেন রাসেল।
খুব বেশি দূরে না যাওয়ায় প্রতিবারই পরিবার তাকে খুঁজে পেয়েছে। কিন্তু গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বাড়ি ছাড়ার পর দেড় বছর নিখোঁজ ছিলেন। চলতি বছরের আগস্টে রাসেলকে খুঁজে পাওয়ার পর খুব সাবধান হয়ে গেছেন মা রহিমা বেগম (৭০)। এখন বুকের ধন রাসেলকে সব সময় শিকলে বেঁধে আগলে রাখেন এই বৃদ্ধা। ঘর থেকে বের হন একসঙ্গে। শিকলের এক প্রান্তে বাঁধা থাকে রাসেলের হাত, অন্য প্রান্ত মায়ের হাতে।
রহিমা বেগম বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার উত্তর তাফালবাড়ী গ্রামের মৃত জালাল হাওলাদারের স্ত্রী। বর্তমানে থাকেন রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শেখেরটেক এলাকায়। তার পাঁচ সন্তানের মধ্যে রাসেল ছোট। অন্য সন্তানরা যে যার মতো আলাদা হয়ে গেছেন। তাই স্বামীর মৃত্যুর পর অনেক কষ্ট করে রাসেলের দেখাশোনা করতে হচ্ছে রহিমাকে।
এত কষ্ট করেও কোনো আফসোস নেই রহিমা বেগমের। শুধু একটাই দুশ্চিন্তা, নিজের মৃত্যুর পর রাসেলের কী হবে? কে তার দেখাশোনা করবে?
সোমবার দুপুরে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট হাসপাতালে চিকিৎসক দেখিয়ে হেঁটে শেখেরটেকের বাসায় ফিরছিলেন রহিমা বেগম। পথে শ্যামলী এলাকায় কথা হয় তার সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘ছেলেটা বাড়ি থেকে এদিক-সেদিক চলে যায়। কিন্তু এরপর আর বাড়ি ফিরে আসতে পারে না। গত বছর বাড়ি ছাড়ার পর শরণখোলা থানায় জিডি করেছিলাম। কিন্তু ছেলেটাকে খুঁজে পেতে দেড় বছর লেগেছে। এত দিন কোথায় ছিল? কিভাবে সেখানে গেল কিছুই বলতে পারে না রাসেল। তাই এবার তাকে চোখে চোখে রাখি। বাইরে বের হলে শিকলে হাত বেঁধে রাখি, যাতে দৌড়ে চলে যেতে না পারে। ওর হাতে শিকল দেখে অনেকেই অনেক কথা বলে। কিন্তু কী করব! এ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই আমার। বেঁধে না রাখলে আবার বুকের ধনটারে হারাতে হবে। ’
এ সময় অশ্রুসজল চোখে রহিমা বেগম আরো বলেন, ‘হয়তো ভালো চিকিৎসা করালে আমার ছেলেটা ভালো হয়ে যেত। কিন্তু সেই সামর্থ্য নেই আমার। রিকশা ভাড়ার অভাবে ছেলেকে নিয়ে হেঁটে যাচ্ছি, ভালো জায়গায় চিকিৎসার টাকা পাব কোথায়?’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।