এখনকার যে আবহাওয়া, তাতে দিনের বেলা গরমের প্রকোপ থাকলেও শেষরাতে এসি বন্ধ করতেই হয়! ভোরের কুয়াশা বলে দিচ্ছে, শীত এলো রে! আবার হুটহাট বলা নেই কওয়া নেই বৃষ্টি তো আছেই। পালাবদলের এ সময় বাড়ির বাচ্চা বা বড় যে কারও জ্বর–সর্দি হতেই। এই জ্বরের জন্য ডাক্তার তো ওষুধ দেবেই কিন্তু এই ওষুধের বাইরেও দ্রুত সুস্থতা পেতে কিছু কাজ আমরা করতেই পারি।
বিশ্রাম: ইনফেকশনের সঙ্গে যুদ্ধ করতে শরীরের ক্ষয় হয় অনেক শক্তি। এই শক্তি সঞ্চয়ের জন্য বেশি করে বিশ্রাম দরকার। মনে রাখবেন, আপনি যখন ঘুমাচ্ছেন, তখন আপনার শরীর সুস্থ হওয়ার প্রক্রিয়া হচ্ছে আরও দ্রুত!
বেশি পরিমাণে পানি পান: পানি বা বিভিন্ন শরবত খাওয়ার পরিমাণ বাড়িয়ে দিন স্বাভাবিকের চেয়ে। এতে আপনার শরীর যেমন পানিশূন্য হবে না, তেমনি আপনার সর্দি বা কফও জমে যাবে না। বারবার পানি খেতে ইচ্ছা না করলে তার বদলে টাটকা ফলের রস খেতে পারেন। সামান্য চিনি বা লবণ দিয়ে লেবুর শরবত এ সময় খুব কাজের।
মেনথল বা ভিকস ইনহেলার: ফার্মেসি থেকে মেনথল ক্রিস্টাল বা যেকোনো সুপারশপ থেকে ভিকস রাবিং জেল নিয়ে এক মগ গরম পানিতে খানিকটা দিয়ে চারপাশ টাওয়েল দিয়ে ঢেকে ভাপ নিতে পারেন। এটা আপনাকে স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে সাহায্য করবে। অথবা শেলডনের মতো সফট কিটি গানের সঙ্গে মা যদি বুকে–পিঠে এর মালিশ করে তাহলে শরীর সারবে আরও দ্রুত।
পেটব্যথা সারাতে আদা: আদায় যে উপাদান থাকে, তা শরীরের ব্যথা সারাতে সাহায্য করে, বমিভাবও কমায়। দেড় কাপ পানি ফুটিয়ে তাতে এক চা–চামচ আদাকুচি আর কয়েকটা তুলসীপাতা দিয়ে পাঁচ মিনিট জ্বাল দিন। এর সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেয়ে দেখুন। মধুতে থাকা এনজাইমের জন্য ফুটন্ত পানিতে মধু না দিয়ে হালকা গরম অবস্থায় মধু যোগ করুন।
এটা অবশ্যই ভালো কাজ দেবে। এক থেকে পাঁচ বছরের শিশুদের জন্য আধা চা–চামচ এবং ছয় থেকে এগারো বছরের শিশুদের এক চা–চামচ মধু খাওয়াতে পারেন। একের চেয়ে কম বয়সীদের জন্য মধু না খাওয়ানো ভালো।
বাচ্চাদের পেটব্যথায় হট ওয়াটার ব্যাগ ব্যবহার করতে পারেন। তাপ রক্ত চলাচল বাড়ায়, তাতে ব্যথা কমে যাবে অনেকখানিই।
বাড়িতে তৈরি হিটিং প্যাড: গরম বা ঠান্ডা র্যাপ বাজারে সহজলভ্য। আপনি বাড়িতেও খুব সহজে এটা বানিয়ে নিতে পারবেন। একটা মোজা ভর্তি করে ফেলুন শুকনা চাল বা গম দিয়ে। মোজার মাথা সুতা দিয়ে ভালোভাবে বেঁধে নিন। মাইক্রোওয়েভে মোজাটা এক মিনিট বা আরেকটু বেশি গরম করুন। তারপর ব্যথার জায়গায় সেঁক দিন। ঠান্ডা হয়ে গেলে আবার গরম করুন। এয়ারটাইট পলিথিন ব্যাগে ভরে ফ্রিজে রেখে এটাকে কোল্ড প্যাক হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে।
গলাব্যথা কমাতে: লেবু আর মধুর সঙ্গে হালকা গরম পানির মিশ্রণ সব সময়ই কাজের। এ ছাড়া আরেকটা কাজের টোটকা হলো গরম পানিতে লবণ দিয়ে গার্গল করা। দিনে তিন–চারবার গার্গল করলে গলায় আরাম হবে, ব্যথাও কমবে দ্রুত।
বন্ধ নাক বা সর্দি কমাতে: টিস্যুর বক্স শেষ হয়ে গেলে যাক, সর্দিঝরা কিন্তু একদিক দিয়ে ভালো। এর মানে হলো আপনার নাক আর সাইনাস থেকে মিউকাস বেরিয়ে যাচ্ছে। আর সর্দির রং স্বচ্ছ থেকে হলদেটে, তারপর সবুজ হয়ে গেলে ভাববেন না এখনই অ্যান্টিবায়োটিক লাগবে, এর মানে হলো আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কাজ করছে জোরেশোরে।
নাক পরিষ্কারের জন্য স্যালাইন ড্রপ সবচেয়ে কার্যকরী, এটা যেকোনো ফার্মেসিতেই পাবেন, অথবা বাড়িতেও তৈরি করতে পারেন ১–২ চামচ খাবার লবণ এক কাপ পরিষ্কার পানিতে মিশিয়ে। ড্রপার ব্যবহার করে নাকে ড্রপ দিতে পারেন, আর এটা প্রতিদিন নতুন করে বানাতে হবে। বন্ধ নাকের মিউকাস আলগা করতে এটা কার্যকর।
সবচেয়ে ভালো ওষুধ হলো মুরগির স্যুপ: এটা শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে, যা ঠান্ডার কষ্টকর লক্ষণগুলো কমাতে পারে। মুরগির স্যুপ শরীরের পানিশূন্যতা কমায়, যা সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই ঠান্ডা লাগলে পরিবারের সবাই মিলে মুরগির স্যুপ খেতে ভুলবেন না যেন!
শিশুবিশেষজ্ঞ খালেদা আলম মাহিন বলেন, শিশু বারবার ফ্লুতে আক্রান্ত হলে সবচেয়ে ভালো হয় শিশুকে ফ্লুর ভ্যাকসিন দিলে। ছয় মাসের বড় শিশুকে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে ফ্লুর ভ্যাকসিন দিতে পারবেন। আর একেবারে ছোট শিশুদের ফ্লুর সবচেয়ে ভালো ওষুধ মায়ের বুকের দুধ। মায়ের দুধে থাকে শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় সব উপাদান, ঠিক যেভাবে শিশুর দরকার।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।