তামান্না-ই-জাহান : খ্যাতিমান হলিউড নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলানের সবশেষ সিনেমা ‘ওপেনহাইমার’ মুক্তির পর তুমুল সাড়া ফেলে। বাগিয়ে নেয় একের পর এক পুরস্কার। ২০২৩ সালের জুলাইয়ে মুক্তি পাওয়া ছবিটি এরইমধ্যে প্রডিউসারস গিল্ড, ডিরেক্টরস গিল্ড এবং স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড অ্যাওয়ার্ডস পেয়েছে। ইতিহাস আশ্রিত ছবিটির গল্প নিয়েও কিন্তু আলোচনা-সমালোচনা কম হয়নি। ছবির গল্পের একটা অংশজুড়ে আছে আলবার্ট আইনস্টাইন ও জুনিয়র রবার্ট ওপেনহাইমারের বন্ধুত্বের গল্প। এ গল্প বাস্তবতার সঙ্গে কতটা সঙ্গতিপূর্ণ তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
আইনস্টাইন ও ওপেনহাইমারের দুজনই ছিলেন বিশ্ব বিখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী। তবে দুজনের কাজের জায়গায় বড় ধরনের পার্থক্য ছিল। আইনস্টাইন ছিলেন পুরোদস্তুর তাত্ত্বিক পদার্থ বিজ্ঞানী। অন্যদিকে ওপেনহাইমার যতটা তাত্ত্বিক তার চেয়ে বেশি ছিলেন ফলিত পদার্থ বিজ্ঞানী।
১৮৭৯ সালে জার্মানিতে জন্ম নেওয়া আইনস্টাইন তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের পাশাপাশি বিজ্ঞানের দর্শনে আগ্রহী ছিলেন। বিজ্ঞানের বিভিন্ন আবিষ্কার ধ্বংস এড়িয়ে কীভাবে মানবকল্যাণে ব্যবহার করা যায়, এটিই ছিল তাঁর জীবনের অন্যতম লক্ষ্য। পারমাণবিক অস্ত্র ধ্বংসযজ্ঞের জন্য ব্যবহার করা হতে পারে এমন শঙ্কা থেকে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্র্যাঙ্কলিন রুজভেল্টকে একটি চিঠিও লিখেছিলেন তিনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে রুজভেল্টকে লেখা আইনস্টাইনের এ চিঠি বিভিন্ন কারণে বিখ্যাত। এছাড়া আইনস্টাইন আজীবন সব ধরনের সহিংসতার বিপক্ষে কথা বলেছেন।
অন্যদিকে ১৮৮২ সালে নিউইয়র্কে জন্ম নেওয়া ওপেনহাইমারের সঙ্গে আইনস্টাইনের সম্পর্ক ১৯৪৭ সালের আগ পর্যন্ত তেমন একটা ঘনিষ্ঠ ছিল না। অথচ তার আগেই ‘ম্যানহাটন প্রজেক্টে’ পারমাণবিক বোমা তৈরিতে নেতৃত্ব দিয়ে বিখ্যাত হয়েছেন ওপেনহাইমার। পেয়েছেন পারমাণবিক বোমার জনকের খ্যাতি।
১৯৪২ সালে যাত্রা শুরু করা ম্যানহাটন প্রজেক্টে আইনস্টাইনের থাকার কথা ছিল। কিন্তু জার্মানিদের কাছে কোনো গোপন ফর্মূলা পাচার হতে পারে এমন শঙ্কা থেকে আইনস্টাইনকে এ প্রজেক্টে রাখা হয়নি। অথচ হিটলারের বাহিনীর তাড়া খেয়েই ১৯৩৩ সালে আমেরিকায় পাড়ি জমিয়েছিলেন তিনি।
কিন্তু নোলানের ছবিটি দেখলে মনে হয় ওপেনহাইমার ও আনস্টাইনের মধ্যে ম্যানহাটন প্রজেক্ট বা পারমাণবিক বোমা তৈরির সময় ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ছিল। ছবিতে আইনস্টাইনের চরিত্রে টম কন্টি ও ওপেনহাইমারের চরিত্রে কিলিয়ান মারফির দুর্দান্ত অভিনয় এমন ধারণাকে আরও প্রবল করে তুলেছে। কিন্তু বাস্তব জীবনে, বিশেষ করে ম্যানহাটন প্রজেক্টের সময় তাদের সম্পর্ক এমনটা ছিল না বলেই মনে করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৪৭ সালের পর থেকে তাঁরা কিছুটা ঘনিষ্ঠ হলেও তা এতটা অন্তরঙ্গ ছিল না। তবে সম্পর্ক শত্রুতাপূর্ণ ছিলও বলা যায় না।
ওপেনহাইমার সিনেমা নির্মিত হয়েছে ‘আমেরিকান প্রমিথিউস: দ্য ট্রায়াম্ফ অ্যান্ড ট্র্যাজেডি অব জে. রবার্ট ওপেনহেইমার’ নামের একটি বই অবলম্বনে। এটি ওপেনহাইমারের জীবনীমূলক গ্রন্থ। এ বইয়ের এক জায়গায় ওপেনহাইমার আনস্টাইনকে ‘পদার্থবিজ্ঞানের জীবন্ত পৃষ্ঠপোষক সাধক’ বলে মন্তব্য করেছেন।
ওপেনহাইমারই প্রথম নয়– দ্য সিম্পসনস, রিক অ্যান্ড মর্টি এবং স্টার ট্রেক: দ্য নেক্সট জেনারেশন ছবিতেও আইনস্টাইনের জীবনের নানা দিক দেখানো হয়েছে। চলতি বছরের শুরুতে নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছে ডকুড্রামা ‘আইনস্টাইন অ্যান্ড দ্য বোম্ব’। এতেও বিংশ শতাব্দীর এই মহান বিজ্ঞানীকে নিয়ে নতুন কিছু তথ্য আছে।
সিনেমা জগতের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার অস্কারের দৌড়ে অনেকে এগিয়ে রেখেছেন ‘ওপেনহাইমার’ সিনেমাকে। সেরা সিনেমা, সেরা পরিচালক, সেরা অভিনেতাসহ ১৩টি বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছে ক্রিস্টোফার নোলানের ‘ওপেনহাইমার’। সেরা সিনেমা বিভাগে এবার মনোনয়ন তালিকায় রয়েছে– ‘ওপেনহাইমার’, ‘আমেরিকান ফিকশন’, ‘অ্যানাটমি অব আ ফল’, ‘বার্বি’, ‘দ্য হোল্ডওভারস’, ‘কিলারস অব দ্য ফ্লাওয়ার মুন’, ‘মায়েস্ত্রো’, ‘পাস্ট লাইভস’, ‘পুওর থিংস’ ও ‘দ্য জোন অব ইন্টারেস্ট’। আগামী ১০ মার্চ বরাবরের মতো আমেরিকার লস অ্যাঞ্জেলেসের ডলবি থিয়েটারে বসবে অস্কারের এবারের আসর। ওপেনহাইমার ঠিক কতগুলো পুরস্কার ঝুলিতে ভরতে পারে, এখন সেটিই দেখার অপেক্ষা।
তথ্যসূত্র: কোলাইডার, ভ্যানিটি ফেয়ার, ভ্যারাইটি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।