জুমবাংলা ডেস্ক : বেশ কিছুদিন নিষ্ক্রিয় থাকার পর ফের সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমার্থরা। নিজেদের আধিপত্য রক্ষা করতে গিয়ে কোথায় কোথায় সংঘর্ষ হয়েছে। বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে এসব সংঘর্ষে আহতও হয়েছেন বেশ কয়েজন জন।
নেতা-কর্মীদের সতর্ক করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ১৮ সেপ্টেম্বর বলেছেন, আজকে আমরা এই মুক্ত বাংলাদেশ বাস করছি, কিন্তু মনে রাখবেন- এই মুহূর্ত সে পর্যন্তই মুক্ত ও স্বাধীন থাকবে, যতদিন আমরা মুক্ত ও স্বাধীন রাখতে পারব। টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার সময় আওয়ামী লীগ যা করেছে এবং যেভাবে গণঅভ্যুত্থানে তাদের বিদায় হয়েছে, তেমনটা বিএনপি করলে দলটিরও পরিণতি একই হবে বলে মনে করেন মির্জা ফখরুল। এজন্য দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক করেছেন তিনি।
ষড়যন্ত্রকারীরা আওয়ামী লীগে বিভাজন সৃষ্টির লক্ষ্যে নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। তিনি শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) পাঠানো এক বিবৃতিতে এই মন্তব্য করেন। বিবৃতিতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পরিবর্তনের প্রচারকে গুজব বলে উড়িয়ে দেওয়া হয়।
বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘দেশ এক ক্রান্তিলগ্ন পার করছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। আমরা এক মগের মুলু্লক বাস করছি। সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর অবর্ণনীয় জুলুম-নিপীড়ন নেমে এসেছে। এর পরও স্বাধীনতাবিরোধী ও ষড়যন্ত্রকারীরা আমাদের নেতাকর্মীদের মনোবল ভেঙে দিতে পারেনি।
রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত একটি লেখক সংগঠন এবং বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। শনিবার (১৯ অক্টোবর) দুপুর ১২টার দিকে এই ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আওয়ামী লীগ সমর্থিত সংগঠন ‘ক্রিয়েটিভ রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশন’ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করার চেষ্টা করে। এ মানববন্ধনের মূল উদ্দেশ্য ছিল ঐতিহাসিক ৭ মার্চ এবং ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস বাতিলের সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানানো। তবে এ সময় বিএনপির ১০ থেকে ১৫ জন নেতাকর্মী তাদের মানববন্ধন ব্যাহত করার চেষ্টা করে।
ঘটনার এক পর্যায়ে বিএনপির ৪ থেকে ৫ জন কর্মী আওয়ামী লীগের এক কর্মীকে বেধড়ক মারধর করে। এ ঘটনার ভিডিও দ্রুত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে বিএনপির নেতাকর্মীদের বলতে শোনা যায়, ‘ওই ধর ধর, আওয়ামী লীগ ধর, সব কয়টারে ধর-পালাইতেছে।
কুষ্টিয়ার পৌর এলাকার জুগিয়ায় আওয়ামী লীগ নেতার বালু ঘাট দখল করাকে কেন্দ্র স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে দিনভর গুলি বিনিময়, হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়েছে। প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে ধাওয়া করতে দেখা গেছে।
১৯ অক্টোবর জুগিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। অনেকেই ছাদ থেকে গোলাগুলির ঘটনা ভিডিও করেন। প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদ্য সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মহিদুল ইসলাম জুগিয়া বালু ঘাটের ইজারা নেন। গড়াই নদীর তীর ঘেঁষে জুগিয়া বালু ঘাটের অবস্থান। গড়াই নদ খননের বালু জুগিয়া এলাকায় স্তূপ করে রাখা হয়েছে। সেই বালু টেন্ডারের মাধ্যমে ‘ডেকে’ নেন আওয়ামী লীগ নেতা মহিদুল ইসলামসহ অন্যরা।
পাবনার ভাঙ্গুড়ায় একটি ক্লাবের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। শনিবার (১৯ অক্টোবর) পজেলার খানমরিচ ইউনিয়নের পুকুরপাড় গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে অধিকাংশই বিএনপির সমর্থক। এ ঘটনায় বিএনপির সমর্থক জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে আজ রোববার সকালে ভাঙ্গুড়া থানায় মামলা করেছেন। মামলায় ২৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৪০ থেকে ৪৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার চরাঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় একাধিক ককটেল বিস্ফোরণ, গুলি ও বেশ কয়েকটি বাড়িঘর ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ৬ জন আহত হন। ১০ অক্টোবর এ ঘটনা ঘটে। সদর উপজেলার আধারার সোলারচর গ্রামে আধারা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুরুজ মিয়া গ্রুপের সঙ্গে আধারা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি শাহেক মিজি গ্রুপের লোকজনের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়।
এ সময় ককটেল ও শটগানের গুলির আঘাতে গুরুতর আহত হন নিপা সরকার (২৫)। তাকে উদ্ধার করে মুন্সীগঞ্জ সদর হাসাপাতালে নেওয়া হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার সব্দালপুর গ্রামের স্থানীয় বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত দুপক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন আহত এবং ১০টি বাড়িতে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। ২৬ সেপ্টেম্বর সব্দালপুর বাজার ও গ্রামের মধ্যে সব্দালপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মীর হাফিজার ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক দুলাল মোল্যা সমর্থিতদের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
নড়াইলের কালিয়ায় স্থানীয় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। উপজেলার পুরুলিয়া ইউনিয়নের বুড়িখালী গ্রামে ২০ সেপ্টেম্বর এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। স্থানীয় বিএনপির অভিযোগ, আওয়ামী লীগ নেতা জামালের নেতৃত্বে বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপির স্থানীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানো হয়। বাধা দিলে তারা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা করে। এ ঘটনায় আহত দুজনকে নড়াইল সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উচ্চতর চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
জানা যায়, উপজেলার বুড়িখালী গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা ইউপি সদস্য জামাল হোসেন ধলার সঙ্গে স্থানীয় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মান্নু ও মাকসুদ শেখের সঙ্গে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। বর্তমান দেশের পট পরিবর্তনের কারণে মান্নু ও মাকসুদ শেখের নেতৃত্বে বিএনপির লোকজন সংগঠিত হয়ে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে পুনরায় বিরোধ শুরু হয়। নাটোরের বড়াইগ্রামে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ৯ জন আহত হয়েছে। এ সময় ৪টি বাড়িঘর ভাঙচুর করার ঘটনাও ঘটে। ২৭ সেপ্টেম্বর উপজেলার জোয়াড়ী ইউনিয়নের সৈয়দমোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।