আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মানুষ প্রতিভাবান। প্রতিভা থেকে বারবারই মানবসভ্যতা লিপ্ত হয়েছে নানা প্রতিযোগিতায়। যা কেবল আজকের বিশ্বে নয়, আদিকাল থেকেই মানুষ পুরনো রেকর্ডকে পেছনে ফেলে নতুন রেকর্ড গড়তে পছন্দ করত। যার উৎকৃষ্ট উদাহরণ- আধুনিক বিশ্বের স্থাপত্যশিল্প। উঁচু ভবনগুলো আধুনিক স্থাপত্যশিল্পের বিস্ময়। মূলত ভবন নির্মাণের উপকরণ এবং পদ্ধতির ব্যাপক উন্নতির ফলে বিশ্বের উঁচু ভবন বেড়েছে। তবে আধুনিক নির্মাণশৈলীর ইতিহাস বেশি দিন আগের নয়। বিগত কয়েক বছরে বিশ্ববাসী ভবন নির্মাণে এমন পরিবর্তন লক্ষ্য করেছে।
গত শতাব্দীর মধ্যভাগে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবনগুলোর নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল। বিশ্বজুড়ে এমন অসংখ্য স্থাপত্যশিল্প রয়েছে যেখানে স্থপতি বা প্রকৌশলীরা তাদের প্রতিভা প্রদর্শনের মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে দেখিয়েছেন বিস্ময়কর ভবন। তন্মধ্যে অনেকগুলোর পরিকল্পনা এখনো নির্মাণের পর্যায়ে রয়েছে। যেমন : সৌদি আরবের জেদ্দা টাওয়ার। যার উচ্চতা ১ হাজার মিটারেরও বেশি। বায়োনিক টাওয়ার, চীনের অন্যতম একটি নির্মাণ প্রকল্প। যার শেষ হলে- ১ হাজার ২২৮ মিটার উচ্চতায় পৌঁছাবে। বিবিসি ‘আর্থ প্লানেট’-এর প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে বিশ্বের উঁচু ভবনগুলোর নানা তথ্য…
০১. বুর্জ আল খলিফা, ৮২৮ মিটার, দুবাই, আরব আমিরাত।
০২. মার্দেকা ১১৮, ৬৭৯ মিটার, কুয়ালালামপুর, মালয়েশিয়া।
০৩. সাংহাই টাওয়ার, ৬৩২ মিটার, সাংহাই, চীন।
০৪. আবরাজ আল বাইত টাওয়ার, ৬০১ মিটার, মক্কা, সৌদি আরব।
০৫. পিং আন ফাইন্যান্স সেন্টার, ৫৯৯ মিটার, সেনজেন, চীন।
০৬. লোটে ওয়ার্ল্ড টাওয়ার, ৫৫৫ মিটার, সিউল, দক্ষিণ কোরিয়া।
০৭. ওয়ান ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার, ৫৪১ মিটার, নিউইয়র্ক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
০৮. গুয়াংজু সিটিএফ ফাইন্যান্স সেন্টার, ৫৩০ মিটার, গুয়াংডং, চীন।
০৯. তিয়ানজিন সিটিএফ ফাইন্যান্স সেন্টার, ৫৩০ মিটার, তিয়ানজিন, চীন। সবশেষে-
১০. চায়না জুন, ৫২৮ মিটার, বেইজিং, চীন।
‘বুর্জ খলিফা’, দুবাই (৮২৮ মিটার)
‘বুর্জ খলিফা’ হলো- ডাউনটাউন দুবাইয়ের কেন্দ্রস্থল। প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভবনটিতে রয়েছে হোটেল, আবাসিক ভবন এবং শপিং মল। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু ভবন। যা আরব আমিরাতের দুবাইয়ে অবস্থিত। ৪ জানুযারি, ২০১০ সালে উদ্বোধন করা এ ভবনটির উচ্চতা ২ হাজার ৭১৭ ফুট। ২০১০ সালে এটি সমাপ্ত হওয়ার পর, এটি বিশ্বের সর্বোচ্চ রেস্তোরাঁ এবং নাইটক্লাবসহ বেশ কয়েকটি রেকর্ড ভেঙেছে। বুর্জ খলিফা এখন পর্যন্ত নির্মিত ভবন, যার মধ্যে সর্বাধিক সংখ্যক ফ্লোর (১৬৩ তলা) রয়েছে। এর নির্মাণে কংক্রিট, অ্যালুমিনিয়াম এবং ইস্পাত ব্যবহার করা হয়েছে। এটি ‘দুবাই টাওয়ার’ নামেও পরিচিত। নির্মাণকালে ‘বুর্জ দুবাই’ পরিচিতি পেলেও ভবনটি উদ্বোধনকালে নাম পরিবর্তন করে ‘বুর্জ খলিফা’ রাখা হয়।
‘মার্দেকা ১১৮’, মালয়েশিয়া (৬৭৯ মিটার)
মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে অবস্থিত ‘মার্দেকা ১১৮’ টাওয়ার। ১৯৫৭ সালের আগস্টে মার্দেকার নাম ও নকশা উদ্বোধন করা হয়। মালয়েশিয়া ফেডারেশনের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী আবদুল রহমান মালয়েশিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণার সময় মার্দেকা শব্দটি বারবার উচ্চারণ করেছিলেন। মার্দেকার অর্থ- স্বাধীনতা। ১১৮ হলো ফ্লোরের সংখ্যা। যা মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে অবস্থিত উঁচু ভবন। ভবনটিতে ৩ দশমিক ১ মিলিয়ন বর্গফুট ফ্লোর এরিয়া এবং ১ দশমিক ৭ মিলিয়ন বর্গফুট অফিস স্পেস রয়েছে। যেখানে অফিস, মসজিদ, শপিং মল, হোটেল, প্যানোরামিক অবজারভেশন ডেক ও জিমনেশিয়াম রয়েছে। মার্দেকা ১১৮-এর নকশা করেন স্থপতি অস্ট্রেলীয় ফেন্ডার কাটসালিডিসর। এটি বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্থাপনা।
‘সাংহাই টাওয়ার’, চীন (৬৩২ মিটার)
‘সাংহাই টাওয়ার’ চীনের সাংহাই শহরে অবস্থিত। বর্তমানে এটি বিশ্বের তৃতীয় উচ্চতম ভবন হিসেবে পরিচিত। টাওয়ারটির নির্মাণকাজ ২০০৮ সালের নভেম্বর থেকে শুরু হয় এবং ২০১৫ সালে শেষ হয়। ২০১৫ সালে নির্মাণ শেষ হলে এটি চীনের সবচেয়ে উঁচু ভবন হয়ে ওঠে। ভবনটির উচ্চতা ২ হাজার ৭৩ ফুট। ১২৮ তলাবিশিষ্ট ভবনে রয়েছে অফিস স্পেস, আবাসন, কনসার্ট হল এবং এমনকি ৮৪তম তলায় একটি সুইমিং পুল। এটি বিশ্বের সর্বোচ্চ প্যানোরামিক অবজারভেশন ডেকের জন্য বিখ্যাত। ভবনটির মাথা প্রায় ৫৬২ মিটার ঘোরানো। সাংহাই টাওয়ারটি বিশ্বের দ্বিতীয় দ্রুততম লিফটের আবাসস্থল। ভবনের লিফটে ব্যবহৃত একটি বিশেষ ‘লাল বোতাম’ রয়েছে, যা আপনাকে দ্রুত উঠানামার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে।
‘আবরাজ আল-বাইত’, সৌদি আরব (৬০১ মিটার)
‘আবরাজ আল-বাইত টাওয়ার’ হলো- সৌদি আরবের মক্কা সরকারের মালিকানাধীন একটি কমপ্লেক্স ভবন। চমৎকার এ ক্লক টাওয়ারটি মক্কা নগরীর কেন্দ্রবিন্দু। এটি ‘মক্কা রয়েল হোটেল ক্লক টাওয়ার’ এবং ‘বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা ঘড়ির টাওয়ার’ নামেও পরিচিত। বর্তমানে এটি বিশ্বের চতুর্থ সর্বোচ্চ ভবনের মর্যাদা লাভ করেছে। এর উচ্চতা ১৯৭২ ফুট। এতে মোট ১২০টি ফ্লোর রয়েছে। ২০১২ সালে ভবনটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। ভবনে স্থাপিত ঘড়িটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ঘড়ি। শুধু তাই নয়, এটি বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যয়বহুল ভবন (নির্মাণ ব্যয়- ১৫ বিলিয়ন ডলার)। মসজিদুল হারাম থেকে এর দূরত্ব মাত্র ৩০০ মিটার। এর মূল উদ্দেশ্য হলো- উঁচু ভবন থেকে পবিত্র স্থান মসজিদুল হারাম পরিদর্শন এবং পর্যবেক্ষণ।
‘পিং অ্যান ফাইন্যান্স সেন্টার’, চীন (৫৯৯ মিটার)
‘পিং অ্যান ইন্টারন্যাশনাল ফাইনান্স সেন্টার, দক্ষিণ চীনের শেনজেন শহরে অবস্থিত। শেনজেন হলো- চীনের বাণিজ্যিক অঞ্চল। এটি বিশ্বের পঞ্চম উঁচু ভবন। পিং অ্যান সম্ভবত বিশ্বের বৃহত্তম বীমা কোম্পানি। ভবনটি ‘পিং অ্যান আইএফসি’ নামেও পরিচিত। আমেরিকান স্থাপত্য সংস্থা ‘কেপিএফ’ এর নকশা তৈরি করেছে। এর উচ্চতা ১ হাজার ৯৬৫ ফুট। পিং অ্যানের ফ্লোর স্পেস প্রায় ৫০০ বর্গমিটার এলাকা নিয়ে বিস্তৃত। ফ্লোর হিসেবে এটি বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উঁচু ভবন। এতে ১১৫টি ফ্লোর রয়েছে। ২০১৭ সালে ভবনটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। মূলত এর শীর্ষে ৬০ মিটার অ্যান্টেনাযুক্ত করার পরিকল্পনা ছিল, যা একে চীনের সবচেয়ে উঁচু ভবনে পরিণত করবে। তবে উদ্বেগের বিষয়- এতে বিমান চলাচলে অনেক বাধার সৃষ্টি হতে পারে। তাই ধারণাটি বাদ দেওয়া হয়।
‘লোটে ওয়ার্ল্ড টাওয়ার’, দ. কোরিয়া (৫৫৫ মিটার)
অবিশ্বাস্য হলেও ‘লোটে ওয়ার্ল্ড টাওয়ার’ দক্ষিণ কোরিয়ার প্রথম সর্বোচ্চ উঁচু ভবন। ১০০ তলাবিশিষ্ট এ ভবনের মধ্যে ১০টি শপিং মল রয়েছে। এটি দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল শহরে অবস্থিত। পাশাপাশি এটি বিশ্বের ষষ্ঠ উচ্চতম ভবন হিসেবে পরিচিত। ২০১৭ সালের ৩ এপ্রিল টাওয়ারটি সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। তবে দক্ষিণ কোরিয়ার বাণিজ্যিক ভবনটির পরিকল্পনা এবং নির্মাণকাজ শেষ করতে ১৩ বছর সময় লাগে। এর উচ্চতা ১ হাজার ৮১৯ ফুট। এতে মোট ১২৩টি ফ্লোর রয়েছে। বেশির ভাগ আকাশচুম্বী ভবনের মতো এ ভবনটিও বিভিন্ন কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়। এখানে রয়েছে অফিস, শপিং মল, হোটেল এবং জিমনেশিয়াম। এটি প্রচন্ড বাতাস এবং গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঝড় সহ্য করতে সক্ষম। পাশাপাশি রিখটার স্কেলের ৯ মাত্রার ভূমিকম্প সহ্য করতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।