বিজ্ঞান ওপ্রযুক্তি ডেস্ক: অ্যালার্মের ডাকে ঘুম থেকে ওঠা। তারপর তড়িঘড়ি করে অফিসের দিকে বাসে চেপে বসা। কিন্তু অফিসের পথে গাড়ি ছুটিয়েও কাজের কাজ হয়নি। ফেঁসে গেছেন যানজটে। এমন তো হামেশাই হয়। তবে এই সমস্যার সমাধান করতে পারে উড়ন্ত গাড়ি। কল্পবিজ্ঞানের গল্প নয়। ২০২৫ সালে বাস্তবেই উড়ন্ত গাড়িতে চড়ে অফিসে যেতে পারেন। এমনই জানিয়েছে আমেরিকার অ্যালেফ এরোনটিক্স নামে এক সংস্থা।
বিশ্বের প্রথম উড়ন্ত গাড়ি হিসাবে অ্যালেফের একটি বৈদ্যুতিক যানকে সবুজ সংকেত দিয়েছে আমেরিকার অসামরিক বিমান পরিবহণ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ)। আমেরিকা তো বটেই, বিশ্বে এই প্রথম ছাড়পত্র পেল কোনো উড়ন্ত গাড়ি। ‘মডেল এ’ নামে ওই গাড়িটি রাস্তায় ঘোরাফেরার পাশাপাশি উড়তে পারে আকাশে। যদিও সেটিতে এখনই সওয়ার হতে পারবেন না। তার জন্য অন্ততপক্ষে আরও বছর দুয়েক অপেক্ষা করতে হবে।
এ গাড়ির বৈশিষ্ট্য কী কী? গতিবেগই বা কত? বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবর, ক্যালিফোর্নিয়ার সান মাতেয়ো সংস্থা অ্যালেফের এ গাড়ি ১০০ শতাংশ বৈদ্যুতিক। এতে দু’জন যাত্রী বসতে পারবেন। এক-একটি উড়ন্ত গাড়ির খরচ তিন লাখ ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় তিন কোটি ২২ লাখ টাকা।
উড়ন্ত গাড়ির ছবি প্রকাশ্যে এনেছে অ্যালেফ। এক ঝলকে দেখে মনে হবে কল্পবিজ্ঞানের কোনো সিনেমা থেকে উঠে আসা বাহন। ঢাকা পড়েছে ঢাকনার আড়ালে চাকা। মসৃণ গাড়ির গায়ে কাচ এঁটে বসে রয়েছে। আর পাঁচটা সাধারণ গাড়ির মতোই একে গ্যারাজে রাখা যায়। উড়ন্ত হলেও তা ঘোরাফেরা করতে পারে রাস্তায়। তবে ট্র্যাফিকের ঝামেলা এড়াতে চাইলে একে নিয়ে আকাশে উড়ে যেতে পারেন।
অ্যালেফের যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১৫ সালে। সে সংস্থা তৈরির নেপথ্যে রয়েছেন পাভেল মারকিন, কনস্টাইনটাইন কিসলি, ওলেগ পেত্রভ এবং জিম ডুকোভনি মতো নামজাদা প্রযুক্তিবিদ। ক্যাফেতে বসে আলোচনার সময় একটি ন্যাপকিনের উপর উড়ন্ত গাড়ির প্রাথমিক ছবি এঁকেছিলেন পাভেলরা। মাস ছয়েকের মধ্যেই সেটি বাস্তবে পরিণত হবে বলে ধারণা ছিল তাঁদের। তবে বাস্তবে এটি তৈরি করতে আরও কয়েক বছর পেরিয়ে গেছে। ২০১৯ সালে ‘মডেল এ’র পরীক্ষামূলক গাড়ি তৈরি করে ফেলে অ্যালেফ। ২০১৫ সালের শেষ ত্রৈমাসিকে এটি বাজারে ছাড়ার বিষয়ে আশাবাদী সংস্থা।
‘মডেল এ’-র গতি অবশ্য সাধারণ গাড়ির মতো নয়। এটি প্রতি ঘণ্টায় ১৭৭ কিলোমিটার উড়তে পারে। তবে রাস্তায় নামলে ঘণ্টা প্রতি ৩২২ কিলোমিটার গতি তুলতে পারে এ গাড়ি। অ্যালেফের দাবি, গতির পাশাপাশি একে সাশ্রয়ী এবং কার্যকরী হিসাবেও গড়ে তোলাই লক্ষ্য ছিল। সেই লক্ষ্যে গত অক্টোবরেই বাজার ধরতে নেমেছিলেন তারা। বাজারে ছাড়ার আগেই এটি বিক্রির জন্য বুকিং নিতে শুরু করে দেন।
‘মডেল এ’ নির্মাতাদের আরও দাবি, গত বছরের শেষ পর্যন্ত ৪৪০টি গাড়ির বুকিং হয়ে গেছে। ক্রেতাদের মধ্যে কর্পোরেট সংস্থা থেকে শুরু করে বিত্তশালীরাও রয়েছেন বলে জানিয়েছে অ্যালেফ। চলতি বছরের গোড়ায় একটি বিবৃতি জারি করে অ্যালেফের সিইও ডুকোভনি জানিয়েছিলেন, ইতিহাসের প্রথম উড়ন্ত গাড়ি তৈরি করতে বদ্ধপরিকর অ্যালেফ। সেই লক্ষ্য নিয়েই এগোচ্ছে সংস্থা।
‘মডেল এ’ বাজারে আসার আগে থেকেই এর আরও উন্নত সংস্করণ তৈরির লক্ষ্যে এগোচ্ছে অ্যালেফ। একসঙ্গে যাতে চার যাত্রী সওয়ারি হতে পারেন, সে জন্য ‘মডেল জেড’ বাজারে আনতে চায় তারা। অ্যালেফের মতে, ২০১৫ সালে বাজার আসতে পারে ‘মডেল জেড’। উড়ন্ত অবস্থায় সেটির গতি হতে পারে ঘণ্টা প্রতি প্রায় ৪৮৩ কিলোমিটার। রাস্তায় যেটি প্রতি ঘণ্টায় ৩২২ কিলোমিটার গতিতে ছুটতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।