জুমবাংলা ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত, শিল্প ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন, আমাদের তৈরি পোশাক শিল্পকে যেসব সুযোগ- সুবিধা দেয়া হচ্ছে তা যদি অন্য খাতগুলোতেও দেয়া হয় তাহলে আমাদের রফতানি আয় অনেক বেশি হবে। ফলে ডলারের উপর চাপ কমবে। এজন্য খুব শিগগিরই সরকার অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে আলোচনা করা হবে। আগামী ৪-৫ বছরের মধ্যে ওষুধ শিল্প খাতে প্রায় ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানির সম্ভব বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
শনিবার (২৩ জুলাই) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ‘এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পর ফার্মাসিউটিক্যালস সেক্টরের রপ্তানি: কৌশল নির্ধারণ’ শীর্ষক এই সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মূখ্যসচিব ড. আহমেদ কায়কাউস।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)র বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান। এসময় স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডিসিসিআইয়ের সভাপতি রিজওয়ান রহমান।
প্রধান অতিথি’র বক্তব্যে সালমান এফ রহমান বলেন, ওষুধ শিল্পে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার শুরু হয়েছে। আমাদেরকে আরো বেশি হারে গবেষণা ও উন্নয়ন কাজে মনোনিবেশ করতে হবে।
তিনি উল্লেখ করেন, বিশ্বব্যাপী বেশি হারে বায়োলজিক্যাল ড্রাগ উৎপাদনের প্রবণতা আগামীতে আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।
উপদেষ্টা বলেন, বর্তমানে দেশের ব্যবহৃত মোট এপিআই’র ১৫ শতাংশ স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয়ে থাকে, তবে আরো বেশি হারে মূল্য সংযোজনের নিশ্চিতের বিষয়টি আমাদের জন্য অতীব জরুরি।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশে তৈরি ওষুধের প্রশাধিকারের বিষয়ে তিনি অত্যন্ত আশাবাদী এবং একবার এটা করা সম্ভব হলে ঔষধ খাতের বৈশ্বিক ইমেজ তৈরিতে আরো কোন প্রতিবন্ধকতা থাকবে না বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
সালমান এফ রামান বলেন, বিশ্ব অর্থনীতির অস্থিতিশীলতার প্রভাবে দেশে বর্তমানে যে সংকট তৈরি হয়েছে সেটাকে সাময়িক উল্লেখ করে চলমান এই সংকট সাময়িক হলেও এর সমাধান বের করতে হবে। সংকট মোকাবিলায় চাহিদা কমানোর চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, আমরা আমদানি কমিয়ে চাহিদা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। তবে যোগানের বিষয়েও কাজ করতে হবে।
মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, বাংলাদেশের এলডিসি গ্রাজুয়েশনের সময়ে করোনা মহামারী, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মত বেশকিছু বৈশ্বিক সংকট দেখা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সাথে বাংলাদেশের সম্পৃক্ততা বেশি থাকায় আমাদের অর্থনীতিতে এর প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, তৈরি পোষাক রপ্তানিতে আমরা আমাদের সক্ষমতা দেখিয়েছি। ওষুধ শিল্পখাতসহ অন্যান্য খাতে এ সক্ষমতা বজায়ে রাখতে পারলে দেশের রপ্তানি উল্লেখজনক হারে বাড়বে। এলডিসি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকারের পক্ষ হতে বেসরকারি খাতকে সার্বিক সহায়তা দেওয়া হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
জ্বালানি সংকটের কারণে দেশে বিদ্যুৎ খাতে উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবেলায় বেসরকারি খাতসহ সকল জনগনকে আরো সচেতন ও সাশ্রয়ী হওয়ার জন্য তিনি আহ্বান জানান।
মূল প্রবন্ধে ড. মোস্তাফিজুর রহমান করেন, আমাদের অর্থনীতির জন্য ঔষধ খাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যেটি আভ্যন্তরীন চাহিদার প্রায় ৯৭% উৎপাদন করতে সক্ষম, যার মূল্য প্রায় ৩.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
তিনি বলেন, ২০২১-২২ অর্থবছরে ঔষধ খাতে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১৮৮.৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং বাংলাদেশের ঔষধ ও কেমিক্যাল খাতে বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণ হলো ৪১৯.২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা মোট বৈদেশিক বিনিয়োগের প্রায় ১.৯৪ শতাংশ।
মোস্তাফিজ বলেন, গত অর্থবছর আমাদের ঔষধ খাত প্রায় ১০৫০.১ মিলিয়ন মার্কিন ডালারের কাঁচামাল আমদানি করছে, এমতাবস্থায় স্থানীয়ভাবে এপিআই উৎপাদনে বাংলাদেশের সক্ষমতা বৃদ্ধির উপর আরো মনোযোগী হতে হবে। এছাড়াও গবেষণা ও উন্নয়নের উপর জোরারোপ, মানবসম্পদের দক্ষতা উন্নয়ন, এফডিআই সম্প্রসারণে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহে যৌথ বিনিয়োগ আকর্ষনে গুরুত্বারোপ, কন্ট্রাক্ট ম্যানুফ্যাকচারিং’কে উৎসাহিতকরণ, স্থানীয়ভাবে এপিআই উৎপাদনের কাঁচামাল ও ল্যাবরেটরির যন্ত্রপাতি আমদানি এবং উৎপাদিত এপিআই ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ভ্যাট ও উৎসে কর অব্যাহতির প্রস্তাব করেন, সংশ্লিষ্ট নীতিমালার সংস্কার ও প্রয়োজনে দ্রুততার সাথে নতুন নীতিমালা প্রয়েনের উপর তিনি জোরারোপ করেন।
তিনি মত প্রকাশ করেন যে, প্যাটেন্ট আইন এবং ওষুধ নীতিমালায় প্রয়োজনীয় সংশোধনের বাংলাদেশ ট্রিপস চুক্তি অনুসারে লাইসেন্সিং বাধ্যতামূলক করার মধ্য দিয়ে আমাদের ওষুধ শিল্প সুবিধা ভোগ করতে পারে।
স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, এলডিসি উত্তরণের পর রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে অতিরিক্ত ৮-১৫ শতাংশ শুল্ক প্রদান করতে হতে পারে, যার ফলে আমাদের মোট রপ্তানি ১৪.২৮% হ্রাস পাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে, এর মূল্য প্রায় ৫.৭৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
তিনি বলেন, অর্থনৈতিক এ উত্তরণের পর ২০২৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশী পণ্যের মেধাসত্ত্ব সুবিধা অব্যাহত থাকবে, তবে এ সময়কালের পর মেধাসত্ত্ব আইনের আওতায় বিদ্যমান সুবিধা অব্যাহত না থাকার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানির ক্ষেত্রে আমাদের ওষুধ খাতকে প্রবল প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হবে, সেই সাথে কমবে রপ্তানি।
ডিসিসিআই সভাপতি উল্লেখ করেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের স্বার্থে মেধাসত্ত্ব আইন গ্রহণের জন্য আমাদের বেসরকারি খাতকে সক্ষমতা অর্জন করতে হবে এবং সেই সাথে সরকারের পক্ষ হতে প্রণোদনা দেয়া একান্ত অপরিহার্য।
এছাড়াও দেশীয় ওষুধ শিল্পের গবেষণা খাতের উন্নয়ন ও বাজার সম্প্রসারণে প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা দেয়ার জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
ইলন মাস্ককেও পেছনে ফেললেন গৌতম আদানী, সবাইকে টপকে এই বছরে যত টাকা আয়
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।