সাম্প্রতিক তীব্র তাপপ্রবাহ রাজশাহী ও দেশের অন্যান্য অঞ্চলজুড়ে এক চরম বাস্তবতা হয়ে উঠেছে। এই অতিরিক্ত গরম মানুষের জীবনে বিরূপ প্রভাব ফেলছে, বিশেষত খেটে খাওয়া মানুষদের জীবনে। আবহাওয়া এখন মানুষের দৈনন্দিন জীবনের কেন্দ্রে অবস্থান করছে। প্রতিদিন সকালের সূর্য যেন এক আগুনের হল্কা হয়ে উঠছে।
আবহাওয়া পরিস্থিতি: রাজশাহী থেকে চুয়াডাঙ্গা পর্যন্ত
বর্তমানে রাজশাহীসহ দেশের অনেক অংশে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গায় এটি ৪২ ডিগ্রি পর্যন্ত পৌঁছেছে, যা আবহাওয়া অধিদপ্তরের মতে একটি অতিতীব্র তাপপ্রবাহের পরিচায়ক।
Table of Contents
এই পরিস্থিতিতে রিকশাচালক, দিনমজুর, কৃষিজীবীদের জীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ। দিনের বেলায় রাস্তাঘাটে মানুষের চলাচল কমে গেছে। পাশাপাশি বাজারেও কমেছে ক্রেতাদের সংখ্যা, যার প্রভাব পড়েছে আম ও লিচুর বিক্রিতে।
রাজশাহী আবহাওয়া সহকারী আনোয়ারা খাতুন জানিয়েছেন, আগামী ২৪ ঘণ্টায় কিছু অংশে বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলেও গরম প্রশমিত হওয়ার আশাবাদ কম।
দেশব্যাপী তাপপ্রবাহ: কোথায় কেমন আবহাওয়া
ঢাকায় তাপমাত্রা ৪০.১ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠেছে, যা মৌসুমের সর্বোচ্চ। চট্টগ্রামেও তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি অতিক্রম করেছে। বগুড়ায় ৩৯.৭ ডিগ্রি রেকর্ড হয়েছে, যা স্থানীয়দের জন্য নতুন অভিজ্ঞতা।
চুয়াডাঙ্গা জেলায় সর্বাধিক তাপমাত্রা এবং সর্বনিম্ন বাতাসের আর্দ্রতা মিলিয়ে এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। রাস্তায় গলে যাচ্ছে পিচ, গরমে কষ্ট পাচ্ছে পশুপাখিও।
পরিবেশ বিভাগের তথ্যমতে, সারা দেশে চলমান তাপপ্রবাহ কিছু কিছু জায়গায় প্রশমিত হতে পারে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে। তবে ততদিন পর্যন্ত গরম অব্যাহত থাকবে।
পদক্ষেপ ও করণীয়
- অতিরিক্ত গরমের সময় ঘরের বাইরে কম যাওয়া উচিত
- প্রচুর পানি পান করা এবং শরীর ঠাণ্ডা রাখার ব্যবস্থা করা
- বাচ্চা ও বৃদ্ধদের বিশেষভাবে যত্নে রাখা
- বাজারে আম ও লিচু কেনার সময় সকাল বা সন্ধ্যা বেছে নেওয়া
এই পরিস্থিতিতে সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসনের উচিত প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহ ও সচেতনতামূলক প্রচারণা জোরদার করা।
তীব্র তাপদাহের প্রভাব
এখন মাঠে চলছে ধান কাটার মৌসুম। কিন্তু এই অস্বাভাবিক তাপমাত্রা শ্রমিকদের জন্য কাজ কঠিন করে তুলেছে। গেরস্থরাও দ্রুত ধান ঘরে তুলতে চায় কারণ হঠাৎ বৃষ্টি বা ঝড়ের আশঙ্কা আছে।
অন্যদিকে, আম ও লিচুর মৌসুম হওয়ায় চাষিরা বাজারে নির্ভর করে। কিন্তু অতিরিক্ত গরমে বাজারে ক্রেতার সংখ্যা কমে যাওয়ায় লাভের আশা কম। ফলে কৃষি অর্থনীতিতে ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
আগামী কয়েক দিনে রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেটসহ কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়া ও বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে দেশের অন্যান্য অংশে আবহাওয়া শুষ্ক ও গরম থাকবে।
এই মুহূর্তে, তীব্র তাপপ্রবাহ থেকে বাঁচতে জনসাধারণকে স্বাস্থ্য সচেতনতায় মনোযোগী হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। আবহাওয়া পরিস্থিতি যদি দ্রুত পরিবর্তন না ঘটে, তাহলে আরও জটিলতা দেখা দিতে পারে।
❓প্রশ্নোত্তর:
তাপপ্রবাহ কাকে বলে?
যখন তাপমাত্রা নির্দিষ্ট মাত্রা ছাড়িয়ে যায়, তখন তাকে তাপপ্রবাহ বলা হয়। বাংলাদেশে ৩৮ ডিগ্রির উপরে উঠলেই সাধারণত একে মাঝারি বা তীব্র তাপপ্রবাহ ধরা হয়।
তীব্র তাপপ্রবাহে কী ধরনের অসুবিধা হয়?
ডিহাইড্রেশন, হিটস্ট্রোক, ত্বকের জ্বালা, কাজ করার অক্ষমতা এবং মানসিক অস্বস্তি দেখা দেয়। বাচ্চা ও বৃদ্ধরা বেশি ঝুঁকিতে থাকে।
গরমে বাইরে গেলে কী কী সতর্কতা নেওয়া উচিত?
হালকা রঙের ও পাতলা কাপড় পরা, ছাতা বা টুপি ব্যবহার, পর্যাপ্ত পানি পান এবং রোদ থেকে বাঁচার চেষ্টা করা উচিত।
তাপপ্রবাহে কৃষির ওপর কী প্রভাব পড়ে?
ফসল শুকিয়ে যেতে পারে, আম ও লিচুর মতো ফলের উৎপাদন কমে যেতে পারে এবং বাজারে কম চাহিদার কারণে কৃষকরা ক্ষতির মুখে পড়ে।
আবহাওয়া অফিস থেকে তথ্য কোথা থেকে পাওয়া যায়?
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এবং বিশ্বস্ত সংবাদমাধ্যম থেকে আপডেট পাওয়া যায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।