জুমবাংলা ডেস্ক: রংপুরের পীরগাছা উপজেলার সুবিদ দাখিল মাদ্রাসায় মাত্র ৬ জন শিক্ষার্থীকে পড়াচ্ছেন ১৫ জন শিক্ষক। সুপার মাদ্রাসায় আসেন না। তিনি রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত। অন্য শিক্ষকরা ২/৪ দিন পর পর এসে শুধু হাজিরা দিয়ে চলে যান। মাদ্রাসার বেহাল দশায় শঙ্কিত স্থানীয়রা।
কাগজে-কলমে দেড়শ শিক্ষার্থী থাকলেও প্রতিদিন উপস্থিত হন ৬ থেকে ৮ জন। শিক্ষক ছাড়াও আরো কর্মচারি রয়েছেন ২ জন। সব মিলিয়ে ১৭ শিক্ষক-কর্মচারির পেছনে প্রতি মাসে সরকারের খরচ ৩ লাখ এক হাজার ৮২১ টাকা।
বিদ্যালয়টিতে গিয়ে দেখা যায়, ২৩ নভেম্বর বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হলেও ৬ জন শিক্ষার্থীকে পাওয়া যায় মাদ্রাসাটিতে। পরীক্ষার হলেও বই খুলে দেখে দেখে লিখছেন তারা। ৬টি ক্লাস রুমের মধ্যে ২টি রুমে ১২টি বেঞ্চ ছাড়া কিছু নেই। ১৭ জন শিক্ষক-কর্মচারীর বসার জন্য রয়েছে মাত্র ৭টি চেয়ার।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বিগত ৭ বছর ধরে এভাবেই চলে আসছে তিন যুগ আগে প্রতিষ্ঠিত এ মাদ্রাসার কার্যক্রম। সভাপতি না থাকায় সুপার আনোয়ারুল ইসলামের অনিয়ম আর দুর্নীতির কারণে ক্ষুদ্ধ শিক্ষকরাও। এই রকম একটি মাদ্রাসায় কিভাবে বেতন-ভাতা পান তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এলাকাবাসী।
১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত পীরগাছা উপজেলার চৌধুরাণী রেল ষ্টেশনের পূর্ব পাশে সুবিদ দাখিল মাদ্রাসা এখন ভূতুরে বাড়ি। দুটি টিন সেড ঘর থাকলেও নেই দরজা-জানালা। প্রসাব-পায়খানার জন্য একটি বাথরুম, সেটিও দীর্ঘদিন থেকে জরাজীর্ণ অবস্থা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে এমন চিত্র। এ সময় একটি ক্লাস রুমে ১০ম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থীকে পড়াচ্ছেন শাহাদুল ইসলাম নামে এক শিক্ষক। অপর একটি ক্লাস রুমে শিক্ষার্থী মাত্র ৫ জন। সাংবাদিক দেখে পার্শ্বর্তী হাফেজিয়া মাদ্রাসা থেকে কয়েকজন শিক্ষার্থী ডেকে এনে পরীক্ষা দেওয়ার অভিনয় করান কয়েকজন শিক্ষক। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তা অকপটে স্বীকার করেন সাংবাদিকদের কাছে।
মাদ্রাসায় মাহমুদা বেগম নামের একজন কম্পিউটার শিক্ষক থাকলেও নেই কম্পিউটার কিংবা ল্যাপটপ। হাফেজিয়া মাদ্রাসার পোশাক পড়া শিক্ষার্থীরা জানান, আমরা শুধু পরীক্ষা দিতে আসি, আর আসি না। অপর কয়েকজন শিক্ষার্থী দুপুর ১২টায় মাদ্রাসা মাঠে আসেন খালি গায়ে। তারা পরীক্ষা দিতে আসছেন, খাতা-কলম ছাড়া। এমন চিত্রে হতবাক এলাকাবাসী।
স্থানীয় মমিনুল ইসলাম, সুমন মিয়া, আব্দুল হাকিম বলেন, এটি একটি আজব মাদ্রাসা। দীর্ঘদিন থেকে মাদ্রাসাটির সুপার আনোয়ারুল ইসলাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ভুল বুঝিয়ে বেতন-ভাতা স্বাক্ষর করেন। তার দুর্নীতির কারণে আজ এ মাদ্রাসাটিতে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষার্থী শুন্যের কোটায়। দাতা এবং এলাকার মহৎ ব্যক্তিদের নিয়ে একটি শক্ত পরিচালনা কমিটি গঠন করলে এ অবস্থা হতো না। আমরা এলাকাবাসী শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন ভাতা বন্ধ রেখে মাদ্রাসার শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি করছি।
মাদ্রাসার সহ-সুপার আবুল হোসাইন মো. ফকরুল ইসলাম, শিক্ষক সাখাওয়াত হোসেন, ইউনুছ আলী বসুনিয়া, হাসান আলী বলেন, ‘সুপারের কারণে মাদ্রাসার এ অবস্থা। তিনি কারো কোনো কথা শোনেন না। মাদ্রাসায় আসেন না। মাদ্রাসার সব কাগজপত্র তার কাছে। মাদ্রাসায় কিছু নেই। আমরা তার কাছে অসহায়।’
জানতে চাইলে মাদ্রাসার সুপার আনোয়ারুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, ‘শিক্ষক-কর্মচারীরা আসলো কি না জানি না। আমি বাইরে আছি। মাদ্রাসা সঠিক নিয়মেই চলছে।’
এ বিষয়ে উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার ফারুকুজ্জামান ডাকুয়া বলেন, বিল স্বাক্ষর করেন ইউএনও। আমরা নিধিরাম সর্দার। আমাদের করার কিছু নেই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মুছা নাসের চৌধুরী বলেন, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। আর ইউএনও এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবনে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।