আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আজ চার দিনের সফরে মস্কো যাচ্ছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। তাঁকে স্বাগত জানাবেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। খবর রয়টার্সের।
এ সফরের মধ্য দিয়ে জিনপিংই প্রথম কোনো বিশ্বনেতা হবেন, যিনি গত শুক্রবার আইসিসির জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানার পর পুতিনের সঙ্গে হাত মেলাবেন। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর ইউক্রেনীয় শিশুদের রাশিয়ায় নির্বাসনের অভিযোগে পুতিনের বিরুদ্ধে ওই পরোয়ানা জারি করা হয়।
চলতি মাসেই তৃতীয় মেয়াদে চীনের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন শি জিনপিং। এই সফর দুই দেশের কৌশলগত অংশীদারিত্বের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। তবে রাশিয়ার জন্য একটু বেশিই গুরুত্বপূর্ণ। জিনপিংয়ের এই সফরকে পশ্চিমাদের শত্রুতার বিরুদ্ধে রাশিয়ার পাশে দাঁড়ানোর জন্য শক্তিশালী বন্ধু যে প্রস্তুত আছে, তা দেখাতে চায় মস্কো। পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে রাশিয়ার অভিযোগ, তারা রাশিয়াকে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন এবং পরাজিত করার বৃথা চেষ্টা করছে।
অন্যদিকে, মস্কো বা বেইজিং কেউই আইসিসির সদস্য দেশ নয়। আইসিসির এই পদক্ষেপকে মস্কো আপত্তিকর এবং আইনত তা কোনো কাজে আসবে না বলে মন্তব্য করেছে। তবে জিনপিংয়ের এই সফরের প্রাক্কালে পুতিনকে ১২৩ দেশে ভার্চুয়ালি ফেরার হিসেবে উপস্থাপন করে আইসিসি পুতিন-জিনপিংয়ের বৈঠকের ওপর যেন অস্বস্তিকর দৃষ্টিই নিবন্ধ করেছে। আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রেক্ষাপটে বৈঠকটি এরই মধ্যে চীনা নেতার জন্য বেশ অস্বস্তিকর হয়ে উঠেছিল।
লন্ডনের থিঙ্কট্যাঙ্ক রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের জোনাথন ইয়াল বলেছেন, রুশ সেনারা যখন ইউক্রেনে প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়ছে এবং মস্কোকে অস্ত্র সরবরাহের ব্যাপারে চীনকে সতর্ক করছে যুক্তরাষ্ট্র, সে সময় বেইজিং এমন এক পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে, যা তারা এড়াতে চেয়েছিল।
টেলিফোন সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, হয় চীন কিছুই না করে ইউক্রেনে রাশিয়া অপমানিত হবে তা দেখার ঝুঁকি নেয়, যা তাদের স্বার্থ নয়। অথবা তারা রাশিয়াকে সাহায্য করতে এসে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের সঙ্গে সম্পর্কের আরও অবনতির বড় ধরনের ঝুঁকি নেয়।
এদিকে, চীনা পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে পুতিন বলেছেন, তার পুরোনো ভালো বন্ধু জিনপিংয়ের এই সফরের ব্যাপারে তিনি ব্যাপক আশাবাদী। গত বছর এই দুই নেতা ‘সীমাহীন’ কৌশলগত অংশীদারিত্বের চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। তবে ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতে চীনের মধ্যস্থতার সদিচ্ছাকেও স্বাগত জানিয়েছেন পুতিন।
পুতিন বলেছেন, ইউক্রেনে ঘটা চলমান ঘটনাগুলোর এবং এর পটভূমি ও প্রকৃত কারণ বুঝে চীনের ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থানের জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। এই সংকট সমাধানে চীনের গঠনমূলক ভূমিকা পালনের সদিচ্ছাকেও আমরা স্বাগত জানাই।
এর আগে গত মাসে ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত বন্ধ ও শান্তি আলোচনার আহ্বান জানিয়ে ১২ দফা প্রস্তাব করে চীন। তবে এই ১২ দফা শুধু বিবৃতি আকারে রয়েছে, বছরব্যাপী চলা এই যুদ্ধ কীভাবে শেষ হবে তার সুনির্দিষ্ট কোনো প্রস্তাব নেই। যদিও ইউক্রেন সতর্কতার সঙ্গে চীনের এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে এবং বলেছে, এই সংকটের যে কোনো সমাধানের জন্য দরকার হলো ২০১৪ সালে দখল করা ক্রিমিয়া উপদ্বীপসহ ইউক্রেনের দখলকৃত ভূমি থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহার এবং দখল ছেড়ে দেওয়া। আর যুক্তরাষ্ট্রও এই সংঘাত নিরসনে চীনের সম্পৃক্ততার বিষয়ে চরম সংশয় প্রকাশ করেছে। তাদের বক্তব্য হলো, ইউক্রেন আগ্রাসনে রাশিয়াকে নিন্দা জানায়নি চীন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।