জোড়া লাগানোর কাজে মানুষ বেশ পারদর্শী। প্রাচীন মিশরে ফারাওদের কফিন বানানোর কাজে প্রাণিদেহ থেকে তৈরি একধরনের আঠালো পদার্থ ব্যবহার করা হতো। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাচীন অধিবাসীরা হালকা নৌযান বানাতে ব্যবহার করত গাছের কষ থেকে তৈরি আঠা। বর্তমানে আমরা আঠার জন্য সরাসরি প্রাণী বা উদ্ভিদের কাছে যাই না। কোনো কিছু জোড়া দিতে হাতের কাছে রাখি আঠার টিউব বা বোতল। কাগজ, কাঠ, প্লাস্টিক বা সিরামিকের তৈরি জিনিস হলেও এ কাজ করি।
সব ধরনের আঠাই তৈরি হয় মূলত মাইক্রোমলিকিউল বা বড় আকারের পরমাণু দিয়ে। প্রোটিন ও স্যুগার বা শর্করা থেকে তৈরি হয় প্রাকৃতিক আঠার মাইক্রোমলিকিউল। অন্যদিকে কৃত্রিম আঠার মাইক্রোমলিকিউল তৈরি হয় পলিমার দিয়ে। পলিমার মানে, একই রকম অনেকগুলো অণু একসঙ্গে জুড়ে গিয়ে সৃষ্ট বড় অণু। একই রকম যে অণুগুলো একসঙ্গে মিলে বড় অণুটি তৈরি করে, তাকে বলে মনোমার।
যুক্তরাষ্ট্রের লেহাই বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ও ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যপক নেইলস হলটেন-অ্যান্ডারসেন। তিনি বলেন, ‘গ্লু বা আঠা এবং টেপ—দুটোই ইন্টারফেসিয়াল বন্ধন ব্যবহার করে।’ ইন্টারফেসিয়াল বন্ধনকে আমরা বিশেষ একধরনের শক্তি হিসেবে বিবেচনা করতে পারি। দুটি তল পরস্পরের সংস্পর্শে এলে সেগুলো একসঙ্গে জুড়ে দেয় এ শক্তি।
সমযোজী, আয়নিক, ভ্যানডার ওয়ালস বা হাইড্রোজেন বন্ধন থেকে তৈরি হয় আন্তঃআণবিক শক্তি। ইন্টারফেসিয়াল বন্ধনের শক্তি আসে এখান থেকেই। পাশাপাশি গ্লু বা আঠার অণুগুলো একসঙ্গে রাখার জন্য প্রয়োজন কোহেসিভ বন্ধন (যে বন্ধন একই পদার্থের অণুকে একসঙ্গে ধরে রাখে, তা)। সহজভাবে বললে, অণুর মধ্যে পরস্পরের প্রতি যে আকর্ষণ বল, সেই বল থেকেই শক্তি পায় টেপ বা আঠা।
আমরা যখন কোনো কিছুতে আঠা ব্যবহার করি, তখন এর অণুগুলো ওই বস্তুর পৃষ্ঠতলজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ঢুকে পড়তে পারে ছোট কোনো ফাঁকায় বা ভাঙাস্থানের প্রতিটি কোণায়। আঠা শক্ত হয়ে এলে এটা নিজের এবং বস্তুর অণুগুলোর মধ্যে ভ্যানডার ওয়ালস বল ও হাইড্রোজেন বন্ধনের মতো শক্তিশালী আন্তঃআণবিক বন্ধন তৈরি করে। আর নিজ অণুগুলো বাঁধা থাকে কোহেসিভ বলের সুতোয়। আঠার জলীয়বাষ্প শুকিয়ে গেলে বন্ধনগুলো আরও শক্তিশালী এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়।
সাধারণ তরলের সঙ্গে আঠার পার্থক্য হলো, এর অণুগুলো কেবল নিজেদের মধ্যেই বন্ধন তৈরি করে না, বরং অন্যান্য পদার্থের অণুর সঙ্গে আন্তঃআণবিক বন্ধনে জড়ায়। ফলে এরা জোড়া লাগাতে পারে। সব আঠা সব ধরনের উপদানের সঙ্গে আন্তঃআনবিক বন্ধন ভালোভাবে গঠন করতে পারে না।
তাই কাঠের জন্য একধরনের আঠা, আবার প্লাস্টিকের জন্য ভিন্ন ধরনের আঠা ব্যবহৃত হয়। কিছু আঠা অন্য পদার্থের সঙ্গে শুধু আন্তঃআণবিক বন্ধন তৈরি করেই ক্ষান্ত হয় না, রাসায়নিক বন্ধনও তৈরি করে। অর্থাৎ পারমাণবিক পর্যায়ে বিক্রিয়া করে এরা বস্তু ও নিজের মধ্যে শক্তিশালী বন্ধন তৈরি করে। এসব বন্ধন আরও বেশি স্থায়ী হয়। যেমন, ইপোক্সি বা সুপারগ্লু।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।