জুমবাংলা ডেস্ক: বর্ষার থৈ থৈ পানিতে নৈসর্গিক সৌন্দর্যে নয়নাভিরাম হয়ে উঠেছে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার আড়িয়ল বিল। এই সৌন্দর্য কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে বিস্তীর্ণ বিলে জন্মানো শাপলা।
শুষ্ক মৌসুমে এই বিলে ধান ও নানা প্রকারের সব্জি আবাদ আর স্বাদুপানির মাছ শিকারে ব্যস্ত সময় কাটিয়ে থাকেন স্থানীয়রা। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে পুরো বিল পানির নিচে থাকায় তেমন কোনো কাজই থাকে না তাদের হাতে। বেকার হয়ে পড়ে নি্ম্ন আয়ের পরিবারগুলো। তবে বিলে জন্মানো শাপলাই হয়ে উঠে কর্মহীনদের জীবন-জীবিকার আশার আলো। সবজি হিসেবে খাবারের তালিকায় শাপলার জুড়ি নেই। শুধুমাত্র বর্ষা মৌসুমে শাপলা পাওয়া যায়। এ মৌসুমে অনেকের কাছেই প্রিয় সবজি হয়ে ওঠে শাপলা।
বর্ষায় আড়িয়ল বিলের শাপলায় ফিরেছে সেই সব কর্মহীনদের ভাগ্য। শাপলা কুড়িয়ে বিক্রি করে রোজগারের পথ খুঁজে পেয়েছেন বিলের অসংখ্য পরিবার। দিনের কয়েক ঘণ্টায় সংগ্রহ করা শাপলা বিক্রি করেই সংসার চালাচ্ছে ৫ শতাধিক পরিবার। শাপলা কুড়িয়ে বিক্রি করে একেকজনের দৈনিক রোজগার হয়ে থাকে ৫০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা। কর্মহীন মানুষদের কাছে বিলের এ শাপলা আল্লাহর নেয়ামত অথবা আশীর্বাদ স্বরূপ।
তাদের কুড়ানো এ শাপলা স্থানীয় বাজারে বিক্রির পাশাপাশি যাচ্ছে রাজধানী ঢাকায়। অনেক পাইকার বিল থেকে শাপলা কিনে ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছেন।আবার অনেকে নিজেরাই পিকআপ ভ্যান ও ট্রাকে করে শাপলা বিক্রি করতে নিয়ে যান ঢাকার বিভিন্ন বাজারে।
আড়িয়ল বিলের দিগন্ত জুড়ে ছড়িয়ে থাকা শাপলায় যে কারো মন ভালো হয়ে যাবে। মনোমুগ্ধকর দৃশ্য মনে কেড়ে নেয় সবার। আর এসব শাপলা সংগ্রহ করতে প্রতিদিন ভোরে সূর্য উঠার আগেই বিলে নেমে পড়েন কর্মহীন কিশোর-তরুণ থেকে শুরু করে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা।
ছোট ছোট ডিঙি ও কোষা নৌকায় করে বিলের পানে তাদের ছুটে চলার দৃশ্য চোখে পড়ে। প্রতিটি ডিঙি ও কোষা নৌকায় ৩ থেকে ৪ জন থাকেন। এরপর তারা আড়িয়ল বিলের গাদিঘাট, আলমপুর, লস্করপুর, মদনখালী ও শ্রীধরপুর গ্রামের বিলে প্রকৃতির দান শাপলা সংগ্রহ করতে ব্যস্ত হয়ে হয়ে পড়েন। দুপুরে নৌকায় শাপলা ভর্তি করে ফেরেন বিলের পাড়ে। বিকেলে বিলের বিভিন্ন গ্রামের রাস্তার পাশে শাপলাগুলি স্তুপ করেন। সেখান থেকে পাইকাররা শাপলা কিনে নেন।
গাদিঘাট গ্রামের বাসিন্দা মো. নুরুজ্জামান (৪৫)। তিনি কৃষি কাজ করে থাকেন। বর্ষায় হাতে কোনো কাজ নেই। তাই বিস্তীর্ণ বিলে শাপলা সংগ্রহ করে সংসারের খরচ মেটাচ্ছেন তিনি।
নুরুজ্জামান জানান, সকালে ডিঙি নিয়ে তিনি বেরিয়ে পড়েন বিলে। আধাবেলা শাপলা কুড়াতে বিল জুড়ে ঘুরে বেড়ান। প্রতিদিন তিনি ৪০ থেকে ৫০ আঁটি শাপলা কুড়িয়ে থাকেন। একেক আঁটিতে ২০টি করে শাপলা থাকে। পাইকারদের কাছে প্রতি আঁটি শাপলা ১৪ টাকা করে বিক্রি করেন।
তিনি আরও জানান, যেদিন বেশি শাপলা তুলতে পারি, সেদিন টাকা বেশি কামাই। কোনো দিন শাপলা বিক্রি করে ৫০০ টাকা, আবার কোনো দিন ৭০০ টাকা রোজগার করি।
একই গ্রামের দিনমজুর মো. মিরাজ (৫০)। বর্ষায় কোনো কাজ না থাকায় তার উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন এখন শাপলা কুড়ানো। ভোরে শাপলা কুড়াতে বিলে ছুটে যান। শাপলা কুড়িয়ে নৌকা ভর্তি করে দুপুর ২টার দিকে ফেরেন। বিকেলে পাইকার আসেন। সেসময় পাইকারের কাছে শাপলা বিক্রি করে বাড়ি ফিরেন। মিরাজ বলেন, শাপলা কুড়িয়ে সংসার চালানোর পাশাপাশি কিছু আয় হয়। প্রতিদিন ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা রোজগার হয়ে থাকে।
স্থানীয় আলমগীর হোসেন জানান, অনেকে একটি নৌকায় ৩-৪ জন মিলে শাপলা কুড়াতে বের হয়ে থাকে। তারা বেশি পরিমাণে শাপলা কুড়াতে পারে। আড়িয়ল বিলের বিভিন্ন গ্রামের ৫ শতাধিক পরিবার শাপলা কুড়িয়ে জীবন-জীবিকা নির্বাহের সঙ্গে জড়িত আছে।
উপজেলার আলমপুর গ্রামের পাইকার মো. আয়নাল হক স্থানীয়দের কাছ থেকে শাপলা কিনে ঢাকার বিভিন্ন বাজারে সরবরাহ করে থাকেন। তিনি জানান, বর্ষার শুরুতে বর্তমানে বিলে পানি কম। তাই এখন শাপলার পরিমাণ কম। তবে পানি বাড়লে শাপলাও বাড়বে। একেক আঁটি শাপলা ১৪ টাকা থেকে ১৬ টাকায় কিনে থাকেন পাইকাররা।
শুধুমাত্র বিলের গাদিঘাট গ্রাম থেকেই প্রতিদিন ৪টি পিকআপ ভ্যান ভর্তি করে শাপলা কিনে ঢাকায় নিয়ে যান পাইকার রফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, প্রতি আঁটি শাপলা তিনি ১৬ টাকা দরে কেনেন। ঢাকার বাজারে একেক আঁটি শাপলা ৫০ টাকা করেও বিক্রি হয়ে থাকে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।