আতঙ্কে ঘুম হারাম

আকাশে মেঘ দেখলেই যেখানে খুলনার উপকূলবাসী আঁতকে ওঠেন, সেখানে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ফণি আতঙ্কে ঘুম হারাম তাদের। জেলার বাসিন্দাদের মূল দুশ্চিন্তা হিসেবে দেখা দিয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ।

কপোতাক্ষ নদের উপচে পড়া জোয়ারে কয়রা উপজেলার গোবরা এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়ছে বেড়িবাঁধে। ওয়াপদার এ বাঁধ এখন সরু আইলে পরিণত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ফণির আঘাতে বাঁধটি টিকবে কিনা এমন সন্দেহ স্থানীয়দের। গত কয়েকদিনের জোয়ারে বেড়িবাঁধের প্রায় তিন শ ফুট জায়গার সিংহভাগই নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। বাঁধটি ভেঙে গেলে উপজেলা সদরসহ প্লাবিত হবে বিস্তীর্ণ এলাকা। স্থানীয় লোকজন মাটি কেটে স্বেচ্ছাশ্রমে বেড়িবাঁধ রক্ষার চেষ্টা করছেন।

স্থানীয়রা জানান, কয়রা উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে দুই নদীতে প্রায় ১৩০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে প্রায় ৫০ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নে ১৫ কিলোমিটার, উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নে প্রায় ১০ কিলোমিটার, কয়রা সদর ইউনিয়নে প্রায় ৪ কিলোমিটার, মহারাজপুর ইউনিয়নে প্রায় ১৫ কিলোমিটার, বাগালী ইউনিয়নে প্রায় ২ কিলোমিটার ও মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নে প্রায় ৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। এসবের মধ্যে কোনো কোনো স্থানে বেড়িবাঁধের প্রশস্ততা ২ ফুটেরও কম।

কয়রা সদরের ভারপ্রাপ্ত ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুস সাদাত বলেন, ভাঙন রক্ষায় কর্মসৃজন প্রকল্পের মাধ্যমে শ্রমিকরা ও স্থানীয় লোকজন মাটি ফেলার কাজ করেছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড সঠিক সময়ে মেরামত না করায় বাঁধ এমন দুর্বল হয়ে পড়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের মতো বড় আঘাত এ বেড়িবাঁধ মোকাবিলা করতে পারবে না বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন এ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি।

গোবরা গ্রামের বাসিন্দা মেহেদী হাসান বলেন, বাঁধ রক্ষা করা না গেলে ভিটেমাটি, ফসল, জমি ও গাছপালার অস্তিত্ব থাকবে না। এবার ভেঙে গেলে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে হবে।

কয়রা, উত্তর ও দক্ষিণ বেদকাশী গ্রামের বাসিন্দা সুব্রত সাহা, আবদুল জব্বার, নিতাই পাল ও সিরাজুল ইসলাম জানান, বাতাস এবং জোয়ারের পানির চাপ বাড়তে শুরু করেছে। সে কারণে বেড়িবাঁধ নিয়ে তারা আতঙ্কে রয়েছেন। আইলার মতো আবারও লবণ পানিতে ডোবার আশঙ্কা তাদের।

পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনা-২ এর ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জি বলেন, দাকোপ, কয়রা ও পাইকগাছার অন্তত অর্ধশত পয়েন্টে কাজ চলছে। কিছু স্থানে পাউবো নিজেরাই মেরামত করছে আর কিছু স্থানে উপজেলা প্রশাসনের সহায়তা নেয়া হয়েছে।