বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : প্রথমবার চালুর ঠিক তিন বছর পর আবারও চালু হচ্ছে মোবাইল ফোন সেট নিবন্ধন (এনইআইআর) ব্যবস্থা। সরকার ২০২১ সালের ১ জুলাই প্রথমবারের মতো এই ব্যবস্থা চালু করে। সে সময় অনেক মোবাইল ফোন সেট নিবন্ধনও করা হয়। কিছু দিন চালু থাকার পর এই ব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এখন আবারও মোবাইল ফোন সেটের নিবন্ধন চালু করতে যাচ্ছে সরকার।
এনইআইআর পদ্ধতি চালুর পর দেশে অবৈধ মোবাইল ফোন প্রবেশের সংখ্যা প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে গিয়েছিল। এতে দেশের মোবাইল ফোনের উৎপাদকদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসে। ফোন সেট নিবন্ধনের আগে গ্রে মার্কেটের (অবৈধভাবে দেশে প্রবেশ করা মোবাইল) পরিমাণ মোট মোবাইল বাজারের অর্ধেক ছাড়িয়ে গিয়েছিল (৫৩ শতাংশ)। এই পদ্ধতি চালু হলে ক্রেতারা দেশে তৈরি এবং বৈধ চ্যানেলে আসা মোবাইল ফোন কিনতে বাধ্য হন। গ্রে মার্কেট হঠাৎ প্রায় শূন্য হয়ে যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি’র স্পেক্ট্রাম ম্যানেজমেন্ট বিভাগের কমিশনার শেখ রিয়াজ আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগামী ১ জুলাই থেকে মোবাইল ফোন সেট নিবন্ধন ব্যবস্থা চালু হবে।’
প্রসঙ্গত, গত ২৩ জানুয়ারি বিটিআরসিতে এক মতবিনিময় সভায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘স্থানীয় উৎপাদন, কর্মসংস্থান ও রফতানি বৃদ্ধি, অপরাধ নিয়ন্ত্রণে নিবন্ধিত ও বৈধ মোবাইল ফোন ছাড়া কেউ যেন অবৈধ মোবাইল হ্যান্ডসেট ব্যবহার না করতে পারেন। এজন্য ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) কার্যকর করতে হবে।’
টেলিকম খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কিছুকাল আগেও দেশে মোবাইল ফোন সেট বিক্রির সংখ্যা ছিল বছরে সাড়ে তিন কোটিরও বেশি। বর্তমানে ২ কোটির কিছু বেশি মোবাইল ফোন বিক্রি হয়। দেশে মোবাইল ফোনের উৎপাদন আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। ক্ষেত্র বিশেষে তা অর্ধেকে নেমেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। গ্রে মার্কেট সেই জায়গাটা দখল করেছে বলে অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা মনে করছেন, এনইআইআর সিস্টেম চালু হলে দেশের মোবাইল শিল্পটা একটা টেকসই রূপ পাবে।
জানা যায়, এনইআইআর চালু করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রথমবার চালুর সময় যেসব নিয়ম-কানুন মেনে চলা হয়েছে, যেমন- মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের নিবন্ধনের আগে সুযোগ দেওয়া হয়েছে, ব্যবসায়ীদের সময় দেওয়া হয়েছে, বিদেশ থেকে ফোন আনার ক্ষেত্রে ব্যাগেজ রুলস অনুসরণ করা হয়েছে এবং বিদেশ থেকে উপহার পাওয়া ফোনের ক্ষেত্রে যেসব নিয়ম ছিল, সেসব এবারও থাকবে কিনা—থাকলে কতটা থাকবে, নতুন আরও কী বিষয় যুক্ত হবে, এখন তা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তবে মোবাইল ফোন সেট বৈধ নাকি অবৈধ, তা যাচাইয়ের জন্য বিটিআরসি গ্রাহকের জন্য একটি পদ্ধতি চালু করবে বল জানা গেছে।
প্রথমবার এনইআইআর সিস্টেম চালুর জন্য বিটিআরসি সিনেসিস আইটির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়। বিটিআরসি পরে সিনেসিস আইটির কাছ থেকে এই সেবা নেয়।
প্রথমবার মোবাইল সেট নিবন্ধনের সময় যা বলা হয়েছিল
যেসব মোবাইল নম্বর চালু আছে, বা ৩০ জুনের (২০২১ সালের) আগে চালু হবে—সেগুলোর বিষয়ে গ্রাহককে দুশ্চিন্তা করতে নিষেধ করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সেগুলোকে বৈধ ফোন সেট বলে ধরে নেওয়া হবে। তবে যেসব মোবাইল অবৈধ বলে চিহ্নিত হবে, সেগুলো সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করে দেওয়া হবে না। তাদের পুনর্নিবন্ধন (রি-রেজিস্ট্রেশন) করার সুযোগ দেওয়া হবে। সুনির্দিষ্ট নিয়ম মেনে নিবন্ধনের সুযোগ দেওয়া হবে। এই সুযোগ নিয়েও যারা তাদের ফোন নিবন্ধন করবেন না, তাদের ফোন পর্যায়ক্রমে বন্ধ করে দেওয়া হবে।
২০১৯ সালের ১ আগস্টের আগে মোবাইল অপারেটরের নেটওয়ার্কে চালু এবং ওই সময়ের পরে বৈধ পথে আমদানি, দেশে তৈরি মোবাইল ফোনের তথ্য বিটিআরসির কাছে সংরক্ষিত থাকবে। এর বাইরেরগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিদেশ থেকে ফোনসেট আনলে পাসপোর্ট, ভিসার কপি, পণ্য ক্রয়ের রসিদ ইত্যাদি দেখিয়ে এ বিষয়ে তৈরি করা ওয়েবসাইটে গিয়ে ফোনটি নিবন্ধন করা যাবে। উপহার পেলে তার পক্ষেও প্রমাণপত্র থাকতে হবে। তবে ফোনটি যদি ক্লোন হয় বা আইএমইআই নম্বর যদি নকল হয়, তাহলে সেটি চালু হবে না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।