আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সমুদ্রের গভীরতম অঞ্চল বসবাস করে ‘কেয়ামতের মাছ’ হিসেবে খ্যাত অরফিশ। বিশ্বাস করা হয়, এই মাছের দর্শন কোনো খারাপ খবর নিয়ে আসে। মঙ্গলবার সিএনএন জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার এনকিনিটাস উপকূলীয় অঞ্চলে নতুন একটি অরফিশ ভেসে এসেছে।
এই নিয়ে গত তিন মাসে ৩ বার অনাকাঙ্ক্ষিত এই মাছটি মার্কিন উপকূলে ভেসে এসেছে। এর আগে গত এক শতাব্দীতে অর্থাৎ ১০০ বছরের মধ্যে মাত্র ২২ বার এই ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ।
সান ডিয়েগোতে অবস্থিত ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির ওশানোগ্রাফি বিভাগের স্ক্রিপস ইনস্টিটিউশনের অধ্যাপক অ্যালিসন লাফেরিয়া এক ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছেন, গত ৬ নভেম্বর অরফিশ ভেসে আসার সর্বশেষ ঘটনাটি ঘটেছে। সেদিন এনকিনিটাস উপকূলের গ্যান্ডভিউ বিচে ৯ ফুট দীর্ঘ ওই মাছটিকে দেখা যায়।
ফেসবুক পোস্টে অ্যালিসন আরও জানান, মৃত ওই মাছটি উপকূল থেকে উদ্ধার করেছে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সমুদ্র ও বায়ুমণ্ডলীয় প্রশাসন। পরে এটিকে একটি আঞ্চলিক মৎস্য বিজ্ঞান কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়।
স্ক্রিপস ওশানোগ্রাফির সামুদ্রিক কঙ্কাল সংগ্রাহক কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক বেন ফ্রেবল এক ফেসবুক পোস্টে বলেছেন, ‘আমরা নমুনা সংগ্রহ করেছি এবং আরও গবেষণা এবং চূড়ান্ত সংরক্ষণের জন্য নমুনাটি হিমায়িত করেছি।’
জাপানি পৌরাণিক কাহিনি অ্যাটলাস অবস্কুরার মতে, গভীর সমুদ্রে বসবাস করা অরফিশকে উপকূলের অগভীর পানিতে দেখা গেলে তা ভূমিকম্প এবং সুনামির পূর্ব সংকেত হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
ওশান কনজারভেন্সির তথ্য অনুসারে ২০১১ সালের মার্চ মাসে জাপানে প্রলয়ংকরী ভূমিকম্প এবং সুনামি সংঘটিত হওয়ার আগের বছরটিতে দেশটির উপকূল রেখায় অরফিশ ভেসে আসার অন্তত এক ডজন ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছিল।
বিভিন্ন তথ্যের আলোকে ইতিপূর্বে ন্যাচারাল ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টস মত দিয়েছে, ভূমিকম্পের আগের টেকটোনিক আন্দোলন অরফিশের মতো প্রজাতিগুলোকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে। এমনকি এই ধরনের কম্পনে মাছগুলোর মৃত্যুও ঘটে অনেক সময়। এভাবে এগুলো চূড়ান্ত ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়ার আগে উপকূলে মরে ভেসে আসতে পারে।
যা হোক, ২০১৯ সালের একটি গবেষণার আলোকে ‘জিওসায়েন্স’ মত দিয়েছিল—অরফিশ দেখার ঘটনা এবং জাপানে যে ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছিল, তার মধ্যে কোনো সম্পর্ক নাই।
ডুমসডে ফিশ বা কেয়ামতের মাছ হিসেবে আখ্যায়িত অরফিশের সঙ্গে মানুষের সাক্ষাৎ খুব কমই ঘটে। কারণ এই মাছগুলো সমুদ্রের এত গভীরে থাকে যে, সেখানকার বাস্তুতন্ত্রে মানুষ সহজে প্রবেশ করতে পারে না। ফলে এই মাছের সম্পূর্ণ রহস্যও এখনো আবিষ্কার করতে পারেননি বিজ্ঞানীরা।
বেন ফ্রেবল তাঁর পোস্টে বলেছেন, ‘আগের অরফিশগুলোর মতো নতুন নমুনা এবং এর থেকে পাওয়া তথ্যগুলো আমাদের জীববিজ্ঞান, জিনোমিক্স এবং অরফিশের জীবন ইতিহাস সম্পর্কে অনেক কিছু বলতে সক্ষম হবে।’
অরফিশকে প্রায় সময়ই ‘সমুদ্র সর্প’ হিসাবেও বর্ণনা করা হয়। দীর্ঘ ফিতার মতো রুপালি এর দেহ ৩০ ফুট পর্যন্ত হতে পারে। ওশান কনজারভেন্সি অনুসারে, মাছগুলোকে জীবিত অবস্থায় খুব কমই দেখা যায়। কারণ বড় ধরনের বিপদে পড়লেই শুধু এগুলো তাদের প্রাকৃতিক আবাসস্থল ছেড়ে ওপরের দিকে চলে আসে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।