জুমবাংলা ডেস্ক : তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেছেন, ‘সরকার আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যার সমাধান করতে চায়। কিন্তু অশান্তি সৃষ্টি করা হলে তা শক্ত হাতে দমন করা হবে। আইনের প্রয়োগ করা হবে।’
রবিবার (৪ আগস্ট) বিকালে সংসদ ভবনের টানেলে জরুরি এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সংঘাত এড়ানোর জন্য আলোচনার দরজা খোলা রেখেছি। আমরা সংঘাতে যেতে চাচ্ছি না। কিন্তু একই সাথে বলতে চাই, সন্ত্রাসীরা সন্ত্রাস করলে আইনের প্রয়োগও ঘটাতে হবে। অশান্তি সৃষ্টি করা হলে তা শক্ত হাতে দমন করা হবে। আমরা সন্ত্রাসকে দমন করব।’
ব্রিটেনের উদাহরণ দিয়ে মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, সাউথপোর্টে গুজবের ওপর ভিত্তি করে যে ক্লাশ হয়েছে, সেখানে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘দ্য রায়েটার্স উইল ফেসফুল ফোর্স অব ল’। মানে সন্ত্রাস দমনে আইনের পূর্ণাঙ্গ প্রয়োগ করা হবে। এটা ব্রিটেন বলছে। গোটা দুনিয়াতেও তাই বলে। আমাদেরও কথা হচ্ছে আইনের প্রয়োগ হবে এবং সন্ত্রাসকে দমন করা হবে। আন্দোলনকারী বা যারা দাবি জানাচ্ছে বা সাধারণ মানুষের আবেগ অনুভূতি-এই মৃত্যুগুলো বা হতাহত নিয়ে যে দাবি সেই স্পিরিটের সাথে সরকার একমত ও শ্রদ্ধা করে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আন্দোলন আর আন্দোলনের জায়গায় নেই। এখন সন্ত্রাস-সহিংসতায় চলে গেছে। আমাদের শান্তির পক্ষে অবস্থান ছিল। আমরা আলোচনার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলাম। সহিসংতার ফলে যে হতাহতের ঘটনা ঘটেছিল, তার বিচারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলাম। এই মৃত্যুগুলো, এই লাশের ওপর দাড়িয়ে কারা এর সুবিধা নিয়েছে, মানুষকে উসকে দিয়েছে? কারা মানুষকে উসকে দিয়ে বিপথে পরিচালিত করেছে এবং তাদের বিভিন্ন ধরণের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার চেষ্টা করেছে?
তিনি এ প্রসঙ্গে আরো বলেন, আমরা সবাই বিচার চাই। কিন্তু রায় দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তার মানে বিচার চাওয়া হচ্ছে না। সরকার বিচার চায় সেজন্য বিচার বিভাগীয় কমিশন করা হয়েছে। বিচার বিভাগীয় কমিশন কাজ শুরু করেছে। আজ তারা রংপুরে গেছে। তারা বিদেশি এক্সপার্টদের আনছে। তাঁরাও এ তদন্তে ঢুকবে।তারা কি চাচ্ছে সে ঘোষণা তারা গতকাল দিয়েছে। কোটা, অধিকার এ আসল জায়গায় তারা নেই। এ ঘোষণার পরে তারা এটা অর্জন করতে চাচ্ছে সন্ত্রাস এবং সহিংসতার পথে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। আন্দোলনকারীরা বিএনপির সঙ্গে একাক্মতা প্রকাশ করেছে। এখন আর তারা আলাদা থাকলো না। এটা বিএনপি জামায়াতই হয়ে গেলো। মূলতএতদিন তাদের দাবি ছিল কোটা। সেটা পূরণ হলো। তারপর দাবি ছিল, আলোচনা, সেটার দ্বার খুলে দেওয়া হলো। দাবি ছিল বিচার সেটাও পূরণ হচ্ছে। তাদের সব দাবি পুরণ হয়ে গেলো। তারপর এখন তাদের এক দফার দাবি। এখন ওখানে তারা যেতেই চাইবে। তারা বিএনপি-জামায়াতদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে নিজস্ব পরিচয় ডিজলভ করে। ২৮ অক্টোবর যাদের মোকাবিলা করেছিলাম, তারাই সামনে চলে এসেছে। এটা এখন জনগণ আর ছাত্রদের অধিকারের যায়গায় থাকলো না। এখন যদি তারা সন্ত্রাস করে, সেটা আমরা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করবো।’
তিনি বলেন, ‘গতকাল (শনিবার) পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচিগুলো হয়েছে। কোটা আন্দোলনকারীরা শহীদ মিনারে কর্মসূচি পালন করেছে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আমরা কোথাও কোনও কর্মসূচি দেইনি। আমাদের অবস্থান ছিল পুরো শান্তিপূর্ণ ও সহনশীল। আমরা অশান্তি,সংঘাত-সহিংসতা চাই না।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল প্রস্তাব দিয়েছেন, আন্দোলনকারীদের শান্তিপূর্ণ উপায়ে যে কোনও ধরণের ডায়ালগের সুযোগ আছে । এছাড়া তিনি কতগুলো ইতিবাচক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। যেমন অভিযোগ ছিল অনেক ছাত্রদের অহেতুক গ্রেফতার করা হয়েছে, সেখানে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) কড়া নির্দেশনা দিয়েছেন এটি যেনো করা না হয়। অনেককে ছেড়েও দেওয়া হয়েছে। এই বাস্তবতায় আমরা আমাদের মতো শান্তিপূর্ণ অবস্থানে থাকবো এবং অন্যরা তাদের যে রাজনৈতিক কর্মসূচি বা যা-ই থাকুক তারা তাদের মতো করবে। যদিও আশ্চর্যজনকভাবে প্রধানমন্ত্রীর ইতিবাচক প্রস্তাবনাগুলোকে গ্রহণ না করে জবাব হিসেবে তারা বলেছে যে একদফা দাবিতে গেছে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমার ধারণা, সাধারণ মানুষ এতদিন যে জায়গায় ছিল-এই একদফা দাবির পরে মোটামুটি একটা বিষয় পরিষ্কার হয়ে গেছে, আসলে উদ্দেশ্যটা কী? এটা এখন পুরোপুরি একটা রাজনৈতিক বিষয় হয়ে গেছে। এখন ছাত্রদের অধিকার,কোটা বা হতাহতের যে ঘটনা ঘটেছে তার বিচার এই জায়গায় কিন্তু নেই। এখন তারা সোজা ক্ষমতার সংঘাতে এবং ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এটা করছে। কোটা আন্দোলনকারী বা ছাত্রদের এ ধরণের দাবির যৌক্তিকতা নেই। তারা রাজনৈতিক দল নয়, কিন্তু তারা এ কথা বলেছে।’
তিনি বলেন, ‘আজকে (রবিবার)তারা সংঘাত দিয়ে শুরু করলো। আমরা সহনশীল ছিলাম। আমরা কোথাও নেই। আমাদের এই অনুপস্থিতিটাকে অনেক সময় দুর্বলতা হিসেবে নেওয়া হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শক্ত হলে কোনও সংঘাত ঘটলে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ আসছে। যে কারণে আমরা একেবাবেই শান্তিপূর্ণভাবে থাকছি।’
রবিবারের সহিংসতায় বিভিন্ন স্থাপনায় আক্রমণ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা বর্ণণা করে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে সন্ত্রাসীরা কীভাবে আগুন লাগিয়েছে। সিএমএম কোর্টে, ধুপচাচিয়া এসিল্যান্ড অফিস, গাইবান্ধা ডিসি অফিস, এসপি অফিস, ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনারের অফিস, রংপুরে আওয়ামী লীগের পার্টি অফিস, নারায়ণগঞ্জ ডিসি অফিস, ঈশ্বরগঞ্জে ইউএনও’র বাসা, বগুড়া সদর এসিল্যান্ড অফিস, বগুড়া, কিশোরগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জ আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আক্রমণ ও আগুন দিয়েছে। নেত্রোকোনা পুলিশ স্টেশন থেকে জঙ্গী কায়দায় অস্ত্র ছিনতাই করেছে। এরকম আরও অনেক ঘটনা ঘটাচ্ছে।’
সাধারণ মানুষ সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করতে শুরু করেছে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আন্দোলনের নামে যে সন্ত্রাসীরা ঢুকেছে, তারা প্রতিহতের শিকার হয়েছে। সাধারণ মানুষ এটা প্রতিহত করেছে। সাধারণ মানুষ সন্ত্রাসীদের বিপক্ষে জাগছে এবং জাগবে এটাই বাস্তবতা। দেশে একটা সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ এবং শৃঙ্খলা থাকলে বিচারকার্য থেকে শুরু করে সব ধরণের দাবির সমাধান করা যাবে। সন্ত্রাস-সহিংসতার মাধ্যমে কিছু করা যাবে না।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।