আন্তর্জাতিক ডেস্ক : হিজাব আর গেরুয়া শাল পরা নিয়ে বিতর্কের মধ্যে কর্নাটকের সেই প্রতিবাদকারী কলেজছাত্রী মুসকান খান বলেছেন, ‘তারা যে কোনোভাবে আসতে পারে। আমাদের শুধু হিজাব পরার অনুমতি দরকার। যেভাবেই তারা আসুক না কেন, তা নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই।’
মুসকান কর্নাটকের মান্ডা জেলার একটি প্রি-ইউনিভার্সিটি কলেজের বি.কম দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। বিবিসি হিন্দির সঙ্গে এক একান্ত সাক্ষাৎকারে মুসকান এ বিষয়ে নানা কথা বলেন। বৃহস্পতিবার সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করা হয়েছে।
গত দুই দিনে মুসকানের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যাতে দেখা গেছে যে তিনি হিজাব পরে তার স্কুটি পার্ক করে ক্লাসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু বেশ কিছু তরুণ তাকে অনুসরণ করছেন।
দেখা যায়, গেরুয়া রঙের শাল পরিহিত একদল যুবক ‘জয় শ্রী রাম’ শ্লোগানে ছাত্রীটির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, আর চিৎকার করছে। ওই ছাত্রীও তখন ভিড়ের দিকে ফিরে দুই হাত তুলে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে চিৎকার করতে থাকেন।
ওই ঘটনার ভিডিও পুরো ভারতেই আলোচনার ঝড় তুলেছে। এরপর কর্নাটকের আলোচিত ওই শিক্ষার্থী মুসকান খানের সঙ্গে কথা বলেছে বিবিসি হিন্দি সার্ভিস।
কি হয়েছিল সেদিন- এমন প্রশ্নের জবাবে মুসকান বলেন, ‘আমি আগে থেকে কিছুই জানতাম না। সবসময় যেভাবে কলেজে যাই, সেভাবেই গেলাম। বাইরে থেকে আসা একদল যুবক সেখানে বললো যে, বোরকা পরে কলেজের ভেতরে যাবে না। কলেজে যেতে হলে বোরকা ও হিজাব খুলে ভেতরে যেতে হবে। তুমি যদি বোরকা পরে থাকতে চাও, তবে বাড়ি ফিরে যাও।’
তিনি বলেন, ‘আমি ভেতরে এলাম। ভেবেছিলাম চুপচাপ চলে যাব। কিন্তু সেখানে অনেক শ্লোগান উঠছিল- ‘বোরকা কাদ’, ‘জয় শ্রী রাম’-এর মতো শ্লোগান উঠছিল।
মুসকান বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম আমি ক্লাসে যাব, কিন্তু ছেলেগুলো আমাকে এমনভাবে অনুসরণ করছিলো যেন তারা সবাই আমাকে আক্রমণের চেষ্টা করছে। তারা ছিল ৪০ জনের মতো। আমি ছিলাম একা।’
তিনি বলেন, ‘হঠাৎ তারা আমার কাছে এসে চিৎকার করতে লাগল। কারো কারো হাতে ছিল কমলা রঙের শাল। আর আমার মুখের সামনে এসে শাল দোলাতে দোলাতে বলতে লাগলো- জয় শ্রী রাম, চলে যাও, বোরকা খুলে ফেলো।
আপনি কতদিন ধরে হিজাব পরছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে মুসকান বলেন, ‘প্রি-ইউনিভার্সিটিতে যাওয়ার পর থেকে আমি হিজাব পরে আসছি। কলেজে কোনো সমস্যা হয়নি। সবকিছু আগের মতই ছিল। আমরা হিজাব পরে ক্লাসে যাচ্ছিলাম।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বোরকা পরি না। শুধু হিজাব পরি। চুল আড়াল করে ক্লাসে যাই। কিন্তু ওই যুবকেরা আমাকে ক্যাম্পাসে ঢুকতেও দিচ্ছিল না। তারা অনেক বহিরাগত ছিল এবং কলেজের ছাত্র ছিল কম। বেশিরভাগই ছিল বহিরাগত।’
ওই লোকগুলো কী বলছিল- এমন প্রশ্নের জবাবে মুসকান বলেন, ‘তারা বলছিলেন বোরকা খুলে ফেল, না হলে কলেজে যেতে পারবে না। তারা সবাই আমাকে ভয় দেখাচ্ছিল।’
তিনি বলেন, ‘আমার সামনে চার মেয়ে এসেছিল। গেট তালাবদ্ধ ছিল। তারপর কোনোমতে প্রিন্সিপাল এলেন। অধ্যক্ষ ও শিক্ষকরা আমাকে রক্ষা করেন। ছেলেরা তাদের সঙ্গে কথা বলতে ভেতরে গিয়েছিল। কিন্তু বেরিয়ে এসে একই কাজ করলো। আমি কাঁদিনি। আমি এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছি।’
মুসকান বলেন, ‘আমি বললাম, আল্লাহু আকবার। কারণ, আমি ভয় পেয়েছিলাম। ভয় পেলে আমি আল্লাহর নাম নিই। আল্লাহর নাম নিলেই আমার সাহস বেড়ে যায়।’
হিজাব সম্পর্কে আপনার মতামত কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কলেজে আমাদের প্রিন্সিপ্যাল নিজেই বলেছিলেন যে, তুমি হিজাব পরে আসতে পারো। এই বাইরের যুবকেরা এসে এমন চমক তৈরি করছে। তিনি নিজেই বললেন, আগে যেভাবে আসতে, এসো। কোন সমস্যা নেই।’
মুসকান খান বলেন, ‘ভারতের সংবিধানে আমার বিশ্বাস আছে। এমনভাবে করে সংবিধানের বিপক্ষে যাবো না। ইনশাআল্লাহ, আমরা হাইকোর্টের আদেশের অপেক্ষায় আছি।’
হিজাব বনাম গেরুয়া বিতর্ক সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে মুসকান বলেন, ‘আমি এখানে হিন্দু বা মুসলিম কোন জাতপাত ছড়াচ্ছি না। আমি শুধু আমার শিক্ষার জন্য, আমার অধিকারের জন্য দাঁড়িয়েছি। আমরা হিজাব পরছি বলে আমাদের ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বছরের পর বছর ধরে এটি পরছি। এটি নতুন কিছু নয়। কিন্তু এই লোকগুলো এমনভাবে বলছে যে, তুমি যদি এটা পরে আসো, তাহলে আমরা এটা (গেরুয়া) পরে আসবো।’
মুসকান বলেন, ‘ছেলেরা আমার কলেজের প্রিন্সিপ্যালকে বলছে, সে যদি বোরকা পরে আসে, তাহলে আমরাও এসব সরাবো না (গেরুয়া, গামছা-পাতা ইত্যাদি)।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের কোন সমস্যা নেই। তারা যে কোনোভাবে আসতে পারে। আমাদের শুধু হিজাব পরার অনুমতি দরকার। যেভাবেই তারা আসুক না কেন, তা নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের শুধু দরকার শিক্ষা। আমাদের অধ্যক্ষ আমাদের সঙ্গে আছেন, শিক্ষকরা আমাদের সাথে আছেন। বাইরে থেকে এসে কিছু লোক কেবল নজর কাড়ার চেষ্টা করছে।’
মুসকান বলেন, ‘আর সংবিধানের প্রতি আমাদের আস্থা আছে। হাইকোর্ট থেকে নেতিবাচক কিছুই আসবে না।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।