নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: আমার চারপাশে শুধুই অন্ধকার আর অন্ধকার। স্বামীর উপার্জনে চার সন্তানের দুমুঠো ভাত আর লেখাপড়ার খরচ চলত। আজ কে কিনে দিবে আমার মেয়ের জন্য দুধ? কোনো কিছুই ভাবতে পারছি না।’
‘আমার চারপাশে শুধুই অন্ধকার। স্বামীর উপার্জনে চার সন্তানের দুমুঠো ভাত আর লেখাপড়ার খরচ চলত। আজ কে কিনে দিবে আমার মেয়ের জন্য দুধ? কোনো কিছুই ভাবতে পারছি না।’
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) দুপুরে গাজীপুরের শ্রীপুর থানাচত্বরে এভাবে আহাজারি করছিলেন শ্রীপুরে কারখানার রাসায়নিকের গুদামে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত রংমিস্ত্রি সোহাগ সরকারের স্ত্রী আদরী বেগম।
এদিকে শ্রীপুরের ওই বোতাম তৈরি কারখানার রাসায়নিকের গুদামে আগুনে নিহতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩। গতকাল এ তথ্য নিশ্চিত করে শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদীন মণ্ডল বলেন, ‘আজ (গতকাল) সকালে আগুনে পোড়া একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হলো। তিনটি লাশ আগুনে পুড়ে বিকৃত হয়ে গেছে। তাই এগুলোর পরিচয় নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। আমরা পুরো কারখানা সার্চ করছি। ধারণা করছি, প্রথম দিকে যে বিস্ফোরণ হয়েছে, তখনই তাঁদের মৃত্যু হয়েছে।’
কারখানায় আগুনে নিহত ব্যক্তিরা হলেন দিনাজপুর জেলার হাকিমপুর উপজেলার লোহাচড়া গ্রামের সোহাগ সরকার (৩২), গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার মহারাজপুর গ্রামের
শাওন (২২) এবং লালমনিরহাট সদর উপজেলার তালুকহারাটি গ্রামের মজমুল হক (২১)। তাঁরা তিনজনই রংমিস্ত্রি।
সোহাগ সরকারের স্ত্রী বলেন, তাঁরা টাঙ্গাইলের হাঁটুভাঙ্গা এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন। স্বামীর উপার্জন করা অর্থে চলত ছয় সদস্যের সংসার। তাঁদের চার ছেলে-মেয়ে। স্বামী সংসারের হাল ধরার একমাত্র অবলম্বন। তিনি বলেন, কয়েক দিন আগে টাঙ্গাইল থেকে কাজের জন্য শ্রীপুরে আসেন তাঁর স্বামী। গতকাল রাতে স্বামীর সঙ্গে কাজ করা একজনের মাধ্যমে খবর পান। এরপর ছোট্ট শিশুসন্তানদের নিয়ে কারখানায় যান।
আদরী বেগম বলেন, ‘এরপর বিভিন্ন হাসপাতালে ছোটাছুটি করছি। এখন পর্যন্ত স্বামীর মরদেহ পাইনি। কারখানার লোকজন স্বামীর লাশের ছবি দেখিয়েছেন। স্বামীর মরদেহ হাসপাতালে রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।’
ওসি বলেন, কারখানার রাসায়নিকের গুদামে আগুনের ঘটনায় তিনজনের লাশ উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়েছে। স্বজনদের আবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
গত রোববার দুপুরে শ্রীপুর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ভাংনাহাটি গ্রামের এমঅ্যান্ডইউ ট্রিমস লিমিটেড কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক মোহাম্মদ মামুন বলেন, প্রায় আড়াই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। সেখানে প্রচুর রাসায়নিক ভর্তি ড্রাম ছিল। আগুনের তাপে ড্রামগুলো থেকে প্রচুর বিস্ফোরণ হচ্ছিল। তাই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় লেগেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।