জুমবাংলা ডেস্ক : প্রভাবশালীদের রক্ষা করতে গিয়ে পুলিশ তার ছেলেকে ‘ক্রসফায়ারে’ দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হ*ত্যা মামলার এক নম্বর আসামি সাব্বির আহমেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ডের মা শাহিদা বেগম।একটি গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। কারণ, তার মুখ থেকে যদি প্রভাবশালী মহলের সব অপকর্মের ঘটনা ফাঁস হয়ে যায় সেই জন্যই।’
সম্প্রতি বরগুনা পৌর শহরের ডিকেপি রোড এলাকার বাড়িতে শাহিদা বেগম বলেন ‘আমার ছেলেকে ষড়যন্ত্র করে ক্রসফায়ারে মারা হয়েছে। আমার কাছে মনে হয়, এটা প্রভাবশালী মহলের চক্রান্ত। আমি টিভি হেডলাইনে পাথরঘাটা বইসা দেখছি কেউ একজন কইছে আমার ছেলে সীমান্তের কাছে। সেই ছেলে তিন দিন পর পুরাকাটা এসে বন্দুকযুদ্ধে মারা যায় কীভাবে? তার সারা গায়ে আঘাতের চিহ্ন। তার হাতের নক, কান নাই। ওরা আমার বাবারে (নয়ন) মাইরা হালাইছে।’
মেধাবী ছাত্র থেকে তার ছেলের মাদক ব্যবসায়ী হয়ে ওঠার পেছনে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহলকে দায়ী করে শাহিদা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে দোষী আমি জানি, কিন্তু সে তো এক দিনে নয়ন বন্ড হিসেবে তৈরি হয়নি। তাকে তৈরি করা হয়েছে। প্রভাবশালী মহল তাকে ব্যবহার করতে নয়ন বন্ড হিসেবে তৈরি করেছে।’
কোন প্রভাবশালী মহল এটা করেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোন প্রভাবশালী মহল এ ঘটনা ঘটিয়েছে তা ঠিক বলতে পারব না। তবে আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে, কারণ তার মুখ থেকে যদি প্রভাবশালী মহলের সব অপকর্মের ঘটনা ফাঁস হয়ে যায় সেই জন্যই।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে শাহিদা আরও বলেন, ‘আমার ছেলের বাপ নাই, তাই ওরে মাইরা ফালাইছে। যাতে আসল রহস্য আড়াল করা যায়। আমার ছেলে তো খুনি না, সে মাদকসেবী ছিল। নিশ্চই এর পিছনে অন্য কোনো কারণ আছে।’
মেধাবী ছাত্র সাব্বির আহমেদ নয়ন কীভাবে ‘নয়ন বন্ড’ হয়ে গেল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভালো ছাত্র থাকলেও ক্লাস টেন থেকেই আস্তে আস্তে মাদকের জগতে প্রবেশ করে নয়ন। কে হ্যারে বন্ড বানাইলো, জিরো জিরো সেভেন বানাইলো তোমরা খুঁইজা বের করো। এর আগে সে ১২ লাখ টাকাসহ ধরা পড়লো। সে এত টাকা কোথায় পাইলো? কে দিলো?’
মিন্নির সঙ্গে নয়ন বন্ডের বিয়ে সম্পর্কে শাহিদা বেগম বলেন, ‘নয়ন মিন্নিকে বিয়ে করতে চেয়েছিল। কিন্তু আমি রাজি হয়নি, পরে শুনছি তারা নিজেরাই বিয়ে করেছে। কিন্তু আমি এই বিয়েতে রাজি ছিলাম না। আমি নয়নকে বলছিলাম, মিন্নি ভালো না, ওরে বিয়ে করিস না।’
বরগুনা পৌর শহরের কলেজ রোড এলাকায় রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার পরপরই আলোচনায় উঠে আসে জেলা আওয়ামী লীগের চিরচেনা দুই প্রতিপক্ষের ছত্রছায়ায় রিফাতের খুনিদের বেপরোয়া হয়ে ওঠার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ। বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য এবং বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর পক্ষের লোকজনের অভিযোগ, রিফাত শরীফের হত্যাকারী রিফাত ফরাজী ও রিশান ফরাজী বর্তমান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং সাবেক সংসদ সদস্য দেলোয়ার হোসেনের ভায়রার ছেলে। দেলোয়ার হোসেনের প্রশ্রয়েই তারা দুই ভাই রিফাতকে হত্যার মতো দুঃসাহসী অপরাধ করে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে দেলোয়ার হোসেন দাবি করেছেন, ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর ছেলে এবং জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুনাম দেবনাথের ছত্রছায়ায় রিফাত হত্যা মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ডসহ অন্যরা বিভিন্ন অপকর্ম করে আসছে বলে তিনি শুনেছেন।
রিফাত হত্যায় এ পর্যন্ত ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা সবাই হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। দেশব্যাপী আলোচিত এই হত্যা মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড গত ২ জুলাই ভোরে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়।
নয়ন বন্ডকে ‘ক্রসফায়ারে’ দেওয়ার বিষয়ে বরগুনা নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন কামাল বলেন, ‘নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ায় অনেক তথ্যই অজানা রয়ে গেল। আড়ালে রয়ে গেল বন্ড বাহিনীর আশ্রয় প্রশ্রয়দাতারা।’
নয়ন বন্ডের মৃত্যুর বিষয়ে জানতে চাইলে বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন বলেন, ‘নয়ন বন্ডকে আমরা জীবিত ধরার চেষ্টা করেছিলাম। তাকে জীবিত ধরতে পারলে অনেক তথ্য পাওয়া যেত। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুরাকাটা এলাকায় তাকে ধরতে গেলে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে নয়ন বন্ড ও তার সঙ্গীরা পুলিশের ওপর গুলি চালায়। তখন পুলিশও আত্মরক্ষার্থে গুলি চালায়। পরে তারা পিছু হটলে ঘটনাস্থলে অভিযান চালিয়ে নয়ন বন্ডের লাশ উদ্ধার করা হয়।’ খবর- দেশ রূপান্তর
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।