জুমবাংলা ডেস্ক: তিনি চা শ্রমিক নারী শ্রাবন্তী উড়িয়া (২৪)। বিদায়ী বছরের মার্চ মাসে ৯ লিটার চোলাই ম’দসহ গ্রেপ্তার হন। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় জেল খেটেছেন প্রায় দুই মাস। মামলার চার্জ গঠনের সময় আদালতের কাছে তার দোষ স্বীকার করেন। এরপর রায়ে আদালত তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। কিন্তু এ জন্য তাকে কারাগারে নয়, গাছ লাগানোসহ ৫টি শর্তে স্বজনদের সাথে নিজের বাড়িতে থাকার রায় দিয়েছেন আদালত। একজন প্রবেশন কর্মকর্তা শর্ত পালনের বিষয়টি তত্ত্বাবধান করবেন।
গতকাল মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) বিকেলে ব্যতিক্রমি এই রায় ঘোষণা করেছেন মৌলভীবাজারের বড়লেখা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের হাকিম মোহাম্মদ জিয়াউল হক। দ্য প্রবেশন অব অফেন্ডার্স অরডিন্যান্স-১৯৬০ আইনের ৫ ধারার বিধান অনুযায়ী ১ বছরের জন্য শর্তে প্রবেশন কর্মকর্তার (বড়লেখা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা) তত্ত্বাবধানে থাকার রায় দেন আদালত।
শ্রাবন্তী উড়িয়া বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নের পাথারিয়া চা বাগানের (দলছড়ি) রুবেল উড়িয়ার স্ত্রী।
রায়ে আদালত যেসব শর্ত পালনের কথা উল্লেখ করছেন সেগুলো হলো, তিনি একবছর প্রবেশন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে থাকবেন। এই সময়ের মধ্যে কোনো অপরাধ করবেন না, শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখবেন, সদাচরণ করবেন এবং আদালত তলব করলে হাজির হবেন। রায়ের এক মাসের মধ্যে চা বাগানের ব্যবস্থাপকের নির্দেশিত স্থানে সাতটি অর্জুন, সাতটি নিম ও সাতটি বাসক পাতার চারা রোপন করবেন এবং তা দেখাশুনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করবেন। নির্দিষ্ট সময়ে তাকে প্রবেশন কর্মকর্তা তলব করলে হাজির থাকবেন। কোনো শর্ত লঙ্ঘন করলে প্রবেশন বাতিল এবং দ্য প্রবেশন অব অফেন্ডার্স অরডিন্যান্স-১৯৬০ আইনের ৭ ধারার বিধান অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ২২ মার্চ দুপুরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও পুলিশের যৌথ এক অভিযানে নিউ সমনবাগ চা বাগানের রাজনগর গ্রামের মিঠুন রাজভরের বসতঘর অভিযান চালিয়ে ৯ লিটার চোলাই ম’দ উদ্ধার করা হয়। এসময় শ্রাবন্তী উড়িয়াকে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম আটক শ্রাবন্তী উড়িয়ার বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন। এ মামলায় পুলিশ তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করে। প্রায় দুই মাস জেল খেটে শ্রাবন্তী উড়িয়া জামিনে মুক্তি পান। গত সোমবার আদালতে মামলার চার্জ গঠনের সময় শ্রাবন্তী সরল বিশ্বাসে তার দোষ স্বীকার করে নেন। পরদিন মঙ্গলবার আদালত পাঁচ শর্তে তাকে বাড়িতে থাকার আদেশ দেন। তবে কোনো একটি শর্ত ভঙ্গ করলেই তার প্রবেশন বাতিল হবে।
রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে বড়লেখা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের সহকারি সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) গোপাল চন্দ্র দত্ত বুধবার (৫ জানুয়ারি) বলেন, বড়লেখায় এই প্রথম এরকম ব্যতিক্রমী রায় হয়েছে। আদালতের এই রায়ের একটা ইতিবাচক দিক আছে। এতে আসামিরা সংশোধনের সুযোগ ও সুস্থ এবং স্বাভাবিক জীবনে ফেরার একটা পথ পাবে।
আসামি পক্ষের আইনজীবী মো. হারুনঅর রশীদ বুধবার (৫ জানুয়ারি) বলেন, আসামি একজন চা শ্রমিক নারী। তাদের একটি অনুষ্ঠানের জন্য নিজের ঘরে ম’দ তৈরি করেছিল। এটা প্রথমবার। চার্জ গঠনকালে আদালতের কাছে সরল মনে দোষ স্বীকার করেছেন তিনি। এতে আদালত ব্যতিক্রমী রায় দিয়েছেন। এই রায় একটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
আদালতের রায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে বড়লেখা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বুধবার (৫ জানুয়ারি) বলেন, রায়ের কপি হাতে আসেনি এখনো। কপি পেলে আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
সদস্যসহ সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানার অনুরোধ সুপ্রিমকোর্ট বারের
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।