অস্ট্রেলিয়ার ২০২৫ সালের ফেডারেল নির্বাচনে আলি ফ্রান্সের জয় শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক মাইলফলক নয়—এটি একটি সাহসিকতা, ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি এবং সামাজিক পরিবর্তনের অনন্য গল্প। যারা মূলধারার রাজনীতিতে অবহেলিত, তাদের জন্য ফ্রান্স এখন আশার প্রতীক। সাবেক সাংবাদিক, প্যারা-অ্যাথলেট এবং প্রতিবন্ধী অধিকারকর্মী ফ্রান্স অস্ট্রেলিয়ান রাজনীতিতে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন, কারণ তিনি ডিকসনের আসন থেকে বিরোধী নেতা পিটার ডাটনকে হারিয়েছেন।
আলি ফ্রান্স কে? ইতিহাস গড়া লেবার প্রার্থী
৪৯ বছর বয়সী আলি ফ্রান্স এখন অস্ট্রেলিয়ার রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। তিনি ২৪ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বিরোধী নেতা পিটার ডাটনকে পরাজিত করে ডিকসনের আসন দখল করেছেন। ব্রিসবেনের পশ্চিমাঞ্চলের বাসিন্দা ফ্রান্স বর্তমানে তার পুত্র জ্যাকের সাথে আরানা হিলসে বসবাস করেন।
Table of Contents
২০১৯ সালে তিনি প্রথমবার ডাটনের বিরুদ্ধে লড়াই করে ৪৫.৪% ভোট পান। ২০২২ সালে ভোটের হার বেড়ে দাঁড়ায় ৪৮.৩%-এ। ২০২৫ সালে শেষ পর্যন্ত জনগণ তার পক্ষেই রায় দেয়।
তার প্রচারণা ছিল সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় হ্রাস, স্বাস্থ্যসেবায় প্রবেশাধিকার বাড়ানো, প্রসূতি ছুটির সম্প্রসারণ, এবং শিক্ষার জন্য বিনিয়োগ বৃদ্ধির ওপর ভিত্তি করে। তিনি প্রাক্তন কুইন্সল্যান্ড মন্ত্রী পিটার ল’লার-এর মেয়ে এবং একক মা।
দুর্বিপাক থেকে বিজয়: সাহসিকতার প্রতিচ্ছবি
২০১১ সালে একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় তিনি তার পা হারান। গাড়ির ধাক্কায় তার ফেমোরাল আর্টারি ছিঁড়ে যায়, যার ফলে ডাক্তাররা তার বাম পা হাঁটু থেকে কেটে ফেলতে বাধ্য হন।
এই দুর্ঘটনার পরেও তিনি থেমে যাননি। তিনি প্যারা-অ্যাথলেট হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেন এবং প্রতিবন্ধীদের অধিকার বিষয়ে সক্রিয় হন।
২০২৪ সালে তার বড় ছেলে হেনরি লিউকেমিয়ায় মারা যান। সেই দুঃখের মুহূর্তেও তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াননি।
নির্বাচনী জয় এবং অস্ট্রেলিয়ার রাজনীতিতে প্রভাব
এই জয় শুধু একটি আসন দখলের বিষয় নয়, এটি পুরো দেশের রাজনীতির পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। কুইন্সল্যান্ডে লেবার পার্টির জনপ্রিয়তা বেড়েছে এবং ‘বিস্ময়কর নারীরা’ এই পরিবর্তনে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে।
প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ তাঁর পাশে থেকে প্রচারণা চালিয়েছেন। নির্বাচনে জনগণ মূলত স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং সহানুভূতিশীল নেতৃত্ব চেয়েছে।
নীতিগত অগ্রাধিকার: স্বাস্থ্য, ব্যয় এবং শিক্ষা
স্বাস্থ্যসেবায় বাস্তবভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি
ফ্রান্স এবং তার পরিবার বহু বছর ধরে মেডিকেয়ারে নির্ভর করে এসেছে। তাই তিনি জনগণের জন্য সাশ্রয়ী ও সহজপ্রাপ্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
জীবনযাত্রার ব্যয় হ্রাস
তিনি কর ছাড়, বিদ্যুৎ বিল রিবেট এবং সামাজিক সহায়তা বাড়ানোর কথা বলেছেন।
শিক্ষা এবং পরিবার সহায়তা
শিক্ষায় বিনিয়োগ এবং পিতামাতার ছুটি বাড়ানোর ওপর জোর দেন, যেটি কর্মজীবী পরিবারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ডিকসনের ভবিষ্যৎ: আলি ফ্রান্সের নেতৃত্বে
ডিকসনের নতুন সংসদ সদস্য হিসেবে ফ্রান্স বাস্তবভিত্তিক পরিবর্তন আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পিটার ডাটন তার পরাজয় স্বীকার করে বলেছেন, হেনরি আজ থাকলে ফ্রান্সের জন্য গর্বিত হতেন।
আলি ফ্রান্সের এই জয় কেবল একটি নির্বাচন জয় নয়—এটি সাহস, সহানুভূতি এবং দীর্ঘ দিনের সংগ্রামের প্রতীক। ‘আলি ফ্রান্স কে?’ এই প্রশ্নের উত্তর আজ শুধু একটি জীবনী নয়, বরং অস্ট্রেলিয়ার রাজনৈতিক এবং সামাজিক পরিবর্তনের এক অনন্য গল্প।
FAQs: আলি ফ্রান্স সম্পর্কে সাধারণ প্রশ্ন
আলি ফ্রান্স কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য?
তিনি অস্ট্রেলিয়ান লেবার পার্টির সদস্য এবং ডিকসনের প্রতিনিধি।
তিনি কিভাবে তার পা হারান?
২০১১ সালে একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় তার বাম পা কেটে ফেলতে হয়।
তার মূল নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি কী ছিল?
স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়ন, ব্যয় হ্রাস, শিক্ষা সংস্কার এবং পিতামাতার ছুটি বাড়ানো।
২০২৫ সালের নির্বাচনে তার প্রতিপক্ষ কে ছিলেন?
পিটার ডাটন, যিনি লিবারেল-ন্যাশনাল জোটের নেতা ছিলেন।
তিনি কী ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডির সম্মুখীন হয়েছেন?
হ্যাঁ, তিনি তার পা হারিয়েছেন এবং তার বড় ছেলে হেনরি ২০২৪ সালে মারা যান।
তিনি কোথায় বসবাস করেন?
আলি ফ্রান্স আরানা হিলস, কুইন্সল্যান্ডে বসবাস করেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।