জুমবাংলা ডেস্ক : চলতি অর্থবছরে প্রায় চার লাখ ৬৭ হাজার হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। কিন্তু ২১ নভেম্বর পর্যন্ত আবাদে অগ্রগতি মাত্র ২৩ শতাংশ। দেশজুড়ে তীব্র বীজ সংকটে আলু আবাদ করতে পারছে না কৃষক। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে দ্বিগুণ দাম দিয়েও মিলছে না বীজ আলু। কালের কণ্ঠের করা প্রতিবেদন থেকে বিস্তারিত-
দেশে আলুবীজের তীব্র সংকটযদিও চাহিদার মাত্র ৫ শতাংশ বীজ আলু সরবরাহ করে সরকার। বিভিন্ন জেলায় যৌক্তিকভাবে সরবরাহ না করা ও কৃষক পর্যায়ে বীজ আলু খোলা বাজারে বিক্রির কারণে সংকট বেড়েছে।
গাইবান্ধার কিশোরগঞ্জ উপজেলার কৃষক শামীম হোসেন বলেন, ‘আমি এবার ২১ বিঘা জমিতে আলুর চাষাবাদ করতে চাই। মোট সাড়ে ৬ টন বীজ দরকার।
কিন্তু চাহিদামতো বীজ এখনো পাইনি। বেশি দামে বীজ কিনতে হবে। তাও ভালো বীজ পাব কি না সন্দেহ।’
কৃষি মন্ত্রণালয় ও কৃষক সংগঠনের প্রতিনিধিরা বলছেন, সারা দেশে প্রতিবছর প্রায় সাড়ে সাত লাখ টন আলুবীজের চাহিদা থাকলেও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) গত বছরে মাত্র ৩৮ হাজার টন বীজ আলু উৎপাদন করেছে।
এর বাইরে বেসরকারিভাবে ৬৫-৭০ হাজার টন বীজ আলু সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়া স্বল্প পরিসরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরও সরবরাহ করে। সব মিলিয়ে দেশে আলুবীজের প্রাতিষ্ঠানিক সরবরাহ মাত্র ১৫ শতাংশ। আলুবীজের বাকি সরবরাহ আসে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে। কিন্তু চলতি বছরে উৎপাদন ও সরবরাহ সংকটে খাবার আলুর দামও বেশ চড়া।
ভালো দাম পাওয়ার কারণে কৃষক তাদের বীজ আলু বেচে দিচ্ছে। অন্যদিকে সরকারিভাবে বীজ আলু কৃষক পর্যায়ে যৌক্তিকভাবে পৌঁছানো হয়নি। অর্থাৎ যে অঞ্চলে উৎপাদন বেশি হয় সে অঞ্চলে সেই অনুপাতে বীজ আলু সরবরাহ করা হয়নি। তাই বীজ আলুর তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন মান ও আকারভেদে বীজ আলুর দাম ৪০-৬৪ টাকা নির্ধারণ করেছে বিএডিসি। তবে সরকারিভাবে বরাদ্দ কম থাকায় ইচ্ছামতো আলুবীজের দাম বাড়ানোর সুযোগ পেয়েছে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বীজ আলু নানা মান ও প্রকারভেদে কেজি প্রতি ৮০-৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার বাসিন্দা মাহবুব হোসেন বলেন, ‘পাঁচ বছর ধরে আলুবীজ বিএডিসি থেকে কিনে চাষাবাদ করছি। আমি এবার ৪৫ শতক জমিতে আলুর আবাদ করতে চাই। অথচ বিএডিসি থেকে বীজ পেয়েছি মাত্র ২০০ কেজি। এই বীজে দিয়ে মাত্র ২৫ শতক জমিতে আলু চাষ করা যাবে। বাড়তি দাম দিয়েও ভালো বীজ পাচ্ছি না। সরকাররিভাবে বীজ আলুর বরাদ্দ না বাড়ালে কৃষকরা আগামীতেও বেকায়দায় পড়ে যাবেন।’
বিএডিসির তথ্য অনুযায়ী, রংপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম জেলায় আলু চাষের জমি বেড়েছে। কিন্তু এসব জেলায় বীজের সরকারি বরাদ্দ কমানো হয়েছে। চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলের পাঁচ জেলায় আলুবীজের সম্ভাব্য চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছিল এক লাখ ৬৭ হাজার টন।
সেখানে সরকারি বরাদ্দ মাত্র দুই হাজার ৭৯৭ টন। গাইবান্ধার কিশোরগঞ্জ উপজেলার বিএডিসির ডিলার সত্যেন্দ্রনাথ রায় কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি এই আলু উৎপাদনবর্ষে বরাদ্দ পেয়েছি মাত্র তিন হাজার টন আলুবীজ। আমার চাহিদা আরো কয়েক গুণ। কৃষক প্রতিনিয়ত আসছেন। বীজ বিক্রিতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। চাহিদা থাকলেও আমরা বীজ পাচ্ছি না।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে আলুর বার্ষিক চাহিদা ৭৫-৮০ লাখ টন। কিন্তু দেশে প্রাথমিক উৎপাদন হচ্ছে এক কোটি ১৩ লাখ টন। তবে এসব আলুর ফসলোত্তর ক্ষতি ও হিসাব পদ্ধতি সঠিকভাবে করলে প্রকৃত উৎপাদন ৭০ লাখ টনের বেশি হবে না। গত মৌসুমে কৃষক প্রতি কেজি আলুতে ১৫-২০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি মুনাফা করতে পেরেছেন। এ জন্য চলতি মৌসুমে ব্যাপক হারে আলু চাষ করতে আগ্রহী হচ্ছেন। এ ছাড়া আগাম আলু লাগানোর প্রবণতাও এবারে বেশি। এ জন্য বীজের সংকট দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে বিএডিসি রংপুর অঞ্চলের উপ-পরিচালক (বীজ বিপণন) মো. মাসুদ সুলতান বলেন, ‘আলুবীজের বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয়েছে ঢাকা অফিসে। আমরা শুধু নির্দেশনা বাস্তবায়ন করি। আমরা তিন হাজার ৬০০ টন বীজের আবেদন করলেও পেয়েছি অনেক কম। এখন আলুর দাম ভালো। তাই সবাই এখন আলুর চাষ করতে চায়। তাই বাজারে আলুবীজের সংকটের থেকে অস্থিরতা বেশি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।