আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আশ্রয়প্রার্থীদের রুয়ান্ডায় প্রত্যাবাসনে দেশটির সঙ্গে ব্রিটিশ সরকারের করা চুক্তিকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। বিতর্কিত ওই চুক্তি স্বাক্ষরের প্রায় এক বছর পর বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) এক রায়ে চুক্তিটিকে বেআইনি বলে অভিহিত করেছেন যুক্তরাজ্যের একটি আদালত। এই রায় প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের সরকারের অভিবাসন নীতির প্রতি এক বড় আঘাত বলে বলে মনে করা হচ্ছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অভিবাসনপ্রত্যাশী ও শরণার্থীদের প্রতি খড়গহস্ত হয়ে ওঠে যুক্তরাজ্য। তারই ধারাবাহিকতায় গত বছর ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে ঢোকা আশ্রয়প্রার্থীদের রুয়ান্ডায় পাঠাতে দেশটির সঙ্গে একটি চুক্তি করে ঋষি সুনাক প্রশাসন।
চুক্তি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে আসা সকল অভিবাসনপ্রত্যাশী ও শরণার্থীকে রুয়ান্ডায় পাঠাবে ব্রিটিশ সরকার। রুয়ান্ডার কর্তৃপক্ষ তাদের আশ্রয় আবেদন বিবেচনা করবে। আবেদন গৃহীত হলে রুয়ান্ডাতেই থাকতে হবে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের। চুক্তি বাস্তবায়নে যুক্তরাজ্য সর্বোচ্চ এক হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা খরচ করবে বলেও জানায়।
চুক্তির পক্ষে সাফাই গেয়ে সে সময় ব্রিটিশ সরকার বলে, চুক্তির কারণে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেয়ার ঝুঁকি নেয়া ব্যক্তির সংখ্যা কমবে। এছাড়া মানবপাচারকারীদেরও ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে যুক্তি দেয়া হয়। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা বিতর্কিত এই চুক্তি স্বাক্ষরের খবরে বিস্ময় প্রকাশ করে এবং কঠোর সমালোচনা করে।
চার্চ অফ ইংল্যান্ডের সবচেয়ে সিনিয়র যাজক আর্চবিশপ জাস্টিন ওয়েলবি বলেন, আশ্রয়প্রার্থীদের অন্য দেশে পাঠানো নৈতিকতার প্রশ্ন সামনে নিয়ে আসে। যুক্তরাজ্যের মতো খ্রিষ্টান মূল্যবোধের একটি দেশ আমাদের দায়িত্ব কাউকে সাব-কন্ট্রাক্ট হিসেবে দিতে পারে না।’
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সেন্ট্রাল আফ্রিকা বিভাগের পরিচালক লুইস মাজ বলেন, ‘রুয়ান্ডার মানবাধিকার রেকর্ড ভয়াবহ৷ সেখানে বাকস্বাধীনতাকে সম্মান করা হয় না।’ রুয়ান্ডায় বসবাস করা লুইস মাজ আরও বলেন, আফ্রিকা মহাদেশের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ রুয়ান্ডা। সেখানে খুব বেশি খোলা জায়গা নেই।’
বিষয়টি আদালতে গড়ালে যুক্তরাজ্যের একটি উচ্চ আদালত এক সিদ্ধান্তে জানান, শরণার্থী বা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের পাঠানোর জন্য রুয়ান্ডাকে একটি নিরাপদ দেশ হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে। এরপর বিষয়টি আপিল আদালতে ওঠে। বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) আপিল আদালত উচ্চ আদালতের আগের রায় বাতিল করে দেন।
আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘শরণার্থী বা অভিবাসনপ্রত্যাশী প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে রুয়ান্ডাকে একটা নিরাপদ তৃতীয় দেশ হিসেবে বিবেচনা করা যায় না।’ বিচারক ইয়ান বার্নেট বলেন, ‘রুয়ান্ডায় আশ্রয় ব্যবস্থায় অনেক ঘাটতি রয়েছে। সেগুলো এমন যে সেখানে পাঠানো ব্যক্তিদের তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর একটি বাস্তব ঝুঁকি রয়েছে বলে বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। যেখানে তারা হত্যা বা অন্যান্য অমানবিক আচরণের শিকার হতে পারেন।’
২৬ হাজার ৩৩৮ বর্গকিলোমিটারের রুয়ান্ডা আফ্রিকার চতুর্থ ক্ষুদ্রতম দেশ। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার হিসেবে, ২০২১ সালেই রুয়ান্ডায় এক লাখ ১৬৩ জন শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থী ছিলেন। গতবছর তালেবান আফগানিস্তান দখল করার পর পালিয়ে যাওয়া আফগানদেরও সাময়িকভাবে আশ্রয় দিয়েছিল রুয়ান্ডা।
অধিকারকর্মীরা বলছেন, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে চুক্তি সইয়ের মাধ্যমে রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট পল কাগামে তার দেশকে পশ্চিমা বিশ্বের ‘বন্ধু’ হিসেবে তুলে ধরতে চাইছেন। ৬৪ বছয় বয়সি পল কাগামের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ব্যাপক দমনপীড়নের বহু অভিযোগ রয়েছে।
তবে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তি নিয়ে সমালোচনা প্রসঙ্গে কাগামে বলেন, এটি ‘মানুষের ব্যবসা’ নয়। এটি আশ্রয়প্রার্থীদের নতুন জীবন শুরুর সুযোগ দিবে বলে জানান তিনি।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের লুইস মাজ জানান, অন্যান্যদের দেশের সঙ্গেও রুয়ান্ডা যুক্তরাজ্যের মতো প্রায় একই রকম চুক্তি করেছে। যেমন ইসরাইল থেকে শরণার্থী বা আশ্রয়প্রার্থীদের রুয়ান্ডায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশ ডেনমার্কও রুয়ান্ডার সঙ্গে চুক্তি করতে আলোচনা করছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।