বাংলাদেশের কর্পোরেট অঙ্গনে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠিত এক নাম আহমেদ আকবর সোবহান। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবে তার নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী। তবে সম্প্রতি যেসব অভিযোগ ও আদালতের আদেশ উঠে এসেছে, তা শুধুমাত্র দেশবাসীর নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে।
আহমেদ আকবর সোবহান এবং তার পরিবারকে ঘিরে গত কয়েক মাসে যে অনুসন্ধান ও তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে, তার মূল উৎস হল মানি লন্ডারিং, রাজস্ব ফাঁকি, ভূমি দখল, ঋণ জালিয়াতি এবং অর্থ আত্মসাৎ সংক্রান্ত অভিযোগ। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এসব অভিযোগের তদন্তে নামে এবং ২০২৫ সালের ৩০ এপ্রিল ঢাকার মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের মাধ্যমে ৭০টি ব্যাংক হিসাব এবং ২২টি কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধ করার আদেশ পান।
Table of Contents
অবরুদ্ধ এসব ব্যাংক হিসাবে বর্তমানে প্রায় ১৯ কোটি ৮১ লাখ টাকা এবং ১০,৫৩৮ মার্কিন ডলার রয়েছে। পাশাপাশি, অবরুদ্ধ হওয়া শেয়ারের সংখ্যা ৭৫ কোটি ৮৬ লাখ ৯০ হাজার ৩০২টি যার মূল্য প্রায় ১,৪৫৮ কোটি টাকা।
এই আদেশের পেছনে যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্ব পেয়েছে তা হলো, এসব অর্থ ও সম্পদের সুনির্দিষ্ট হিসাব, উৎস এবং সরকারের অনুমতি ব্যতীত বিদেশে বিনিয়োগের প্রমাণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া বিদেশে অর্থ প্রেরণ ও সম্পদ কেনা আইনগতভাবে নিষিদ্ধ হলেও অভিযুক্তরা এই প্রক্রিয়ায় বিপুল সম্পদ অর্জন করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
দুদকের আবেদনে বলা হয়, সোবহান পরিবার স্লোভাকিয়া, সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস, সুইজারল্যান্ড, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও সিঙ্গাপুরে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেছেন। এই অর্থের উৎস ও স্থানান্তরের বৈধতা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। তাদের ইউরো ব্যাংক (সাইপ্রাস), হাবিব ব্যাংক (সংযুক্ত আরব আমিরাত) ইত্যাদি বিদেশি ব্যাংকে অর্থ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।
এছাড়া জানা গেছে, তারা বিদেশে বাড়ি কিনেছেন এবং একাধিক বিদেশি পাসপোর্ট ও নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন—যা বাংলাদেশি আইনের পরিপন্থী। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) এর আয়কর বিবরণীতে এসব সম্পদের কোনো উল্লেখ নেই, যা আইন অনুযায়ী সম্পূর্ণ অবৈধ।
অভিযোগ আরও উঠে এসেছে যে, বিদেশে অর্থ পাঠানোর সময় ‘লেয়ারিং’ কৌশল ব্যবহার করা হয়েছে, যাতে অর্থের উৎস এবং রূপান্তরের প্রক্রিয়া গোপন রাখা যায়।
এই অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় শুধু দুদকই নয়, যুক্ত হয়েছে সিআইডি এবং এনবিআরের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (CIC)। তারা বসুন্ধরা গ্রুপ ছাড়াও অন্যান্য বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান চালাচ্ছে। ২০২৪ সালের আগস্টে সরকারের পরিবর্তনের পর এই প্রক্রিয়া আরও গতি পায়।
আহমেদ আকবর সোবহান এবং তার চার ছেলে, স্ত্রীরা মিলিয়ে আটজনের ব্যাংক হিসাব ২০২৪ সালের অক্টোবরেই অবরুদ্ধ করা হয় এবং তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করা হয়। এর আগে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি ও নভেম্বর মাসে আদালত বিদেশে থাকা তাদের সম্পদ জব্দের আদেশ দিয়েছিল।

অনুসন্ধানে পাওয়া অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
- তাদের নামে আরজেএসসিতে নিবন্ধিত ২২টির বেশি কোম্পানি রয়েছে।
- সিআইডির তথ্য অনুযায়ী, সোবহান পরিবার দেড় লাখ কোটি টাকার জমি দখল ও অর্থপাচারে জড়িত।
- বিদেশি বিনিয়োগের ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমতি নেওয়া হয়নি।
বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর ছাড়াও পরিবারে গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন কো-চেয়ারম্যান সাদাত সোবহান, ভাইস চেয়ারম্যান সাফিয়াত সোবহান (সানভীর), ও সাফওয়ান সোবহান। তাদের স্ত্রীদের নামেও অনেক ব্যাংক হিসাব ও শেয়ার রয়েছে।
তাদের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ এনে সম্পদ অবরুদ্ধ করা হয়েছে। বিশেষ করে, সোনিয়া ফেরদৌসী সোবহান ও ইয়াশা সোবহানের ব্যাংক লেনদেনও যাচাই-বাছাইয়ের আওতায় আনা হয়েছে।
এই মামলাগুলোর ফলে বসুন্ধরা গ্রুপের কর্পোরেট ভাবমূর্তিতে এক চরম আঘাত হেনেছে। যদিও কোম্পানি এখনো সরাসরি প্রতিক্রিয়া জানায়নি, তবে দেশের বিভিন্ন মহলে ব্যাপক আলোচনা চলছে।
তদন্ত ও মামলা প্রক্রিয়ার গতি বাড়ানো হয়েছে। দেশের আইন অনুযায়ী, অবৈধ উপায়ে অর্জিত ও পাচারকৃত সম্পদের মালিকানার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।
এই অনুসন্ধান প্রক্রিয়াকে সামনে রেখে সম্ভাব্য ফৌজদারি মামলা, সম্পদ বাজেয়াপ্ত, এবং দৃষ্টান্তমূলক সাজা অপেক্ষা করছে।
আহমেদ আকবর সোবহান এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ও আদালতের আদেশ দেশের ইতিহাসে অন্যতম আলোচিত একটি ঘটনা হয়ে থাকবে। এটি আমাদের কর্পোরেট শুদ্ধাচারের গুরুত্ব ও আইনের শাসনের প্রতি আস্থা বাড়াবে।
আবহাওয়ার খবর: আগামী পাঁচদিনে বজ্রসহ বৃষ্টি এবং তাপমাত্রা বাড়ার পূর্বাভাস
🤔 FAQs
আহমেদ আকবর সোবহান কে?
তিনি বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, যিনি বাংলাদেশের অন্যতম সফল ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
কেন তার ব্যাংক হিসাব ও শেয়ার অবরুদ্ধ করা হয়েছে?
মানি লন্ডারিং, রাজস্ব ফাঁকি, ভূমি দখল ও অর্থ আত্মসাৎ সহ একাধিক অভিযোগে আদালত এই আদেশ দেয়।
বসুন্ধরা পরিবারের আর কে কে এই মামলায় অন্তর্ভুক্ত?
চেয়ারম্যানসহ তার চার ছেলে ও পুত্রবধূদের নাম এই মামলার আওতায় এসেছে।
তারা কী ধরনের বিদেশি বিনিয়োগ করেছেন?
স্লোভাকিয়া, সাইপ্রাস, ইউএই, ইউরোপ এবং ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে ব্যাংক, কোম্পানি ও রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ করেছেন।
এই অভিযোগ কি প্রমাণিত হয়েছে?
তদন্ত এখনো চলমান; তবে আদালত প্রাথমিকভাবে অর্থ ও সম্পদ অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।