জুমবাংলা ডেস্ক : জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তথা এ দুই প্ল্যাটফর্মের সমন্বয়ে নতুন রাজনৈতিক দল নিয়ে বিভিন্ন মহলে চলছে নানান আলোচনা। কবে নাগাদ দলটি আত্মপ্রকাশে আসবে, দলের নাম কী হবে—এ নিয়ে মানুষের কৌতূহলও বাড়ছে। তবে ২০ ফেব্রুয়ারির পর নতুন রাজনৈতিক দলের ঘোষণা আসতে পারে বলে একটি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিনসহ একাধিক নেতা। কালবেলার প্রতিবেদন থেকে বিস্তারিত-
এর আগে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বলেছিলেন, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশে আসবে। কিন্তু সংগঠনের কাজ শেষ না হওয়ায় পিছিয়ে ফেব্রুয়ারি মাসের তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে হতে পারে। বর্তমান সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে থেকে কয়েকজন নতুন রাজনৈতিক দলে যোগ দেবেন। উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করার প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানা গেছে। রাজনৈতিক দল গঠন করে পুরো রমজান মাস অর্থাৎ মার্চজুড়ে ইফতার মাহফিল, আলোচনা সভাসহ সারা দেশে বিভিন্ন কর্মসূচি থাকবে নতুন দলের। প্রথমে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হলেও ঈদের পর কাউন্সিলের মাধ্যমে দলীয় কাঠামো ঠিক করা হবে। আহ্বায়ক কমিটির পর নির্বাচন কমিশনে দলের নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা হবে।
সূত্র জানায়, ২০ ফেব্রুয়ারি পর প্রায় ৩০ সদস্যের একটি আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হবে। দলের নাম, প্রতীক, নীতি এবং কর্মসূচি ঠিক করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন উদ্যোক্তারা। দলের নাম ঠিক করা না হলেও আহ্বায়ক কমিটি এবং নেতৃত্বে কে আসবে, তা প্রায় ঠিক করা হয়েছে। এ ছাড়া দেশের বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী ছাড়াও বৈষম্যবিরোধীদের সমন্বয়ে দলের উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হবে। এসব ব্যক্তির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখ সারিতে থাকা নেতারা। তবে আহ্বায়ক কমিটির আগে গঠনতন্ত্র তৈরি না হলেও দলের ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হবে। পরে দলের গঠনতন্ত্র সম্পন্ন করা হবে। দলের নাম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ, গঠনতন্ত্র এবং ঘোষণাপত্র প্রণয়ন, কমিটি গঠন, কর্মপদ্ধতি নির্ধারণের কাজ সংগঠনের যে সদস্যরা যে বিষয়ে অভিজ্ঞ তাদের সে কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কাজের অগ্রগতি জানতে সংগঠনটির সম্মুখ সারির নেতারা নিয়মিত সভা করেছেন।
নতুন রাজনৈতিক দল গঠনে দেশের মানুষের কাছে দলের নাম, প্রতীক চেয়েছে এবং পাশাপাশি দেশের মানুষের চিন্তা, প্রত্যাশা, পরামর্শ চেয়ে একটি গুগল ফরম ছেড়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। রিকশাচালক, দোকানদার, দিনমজুর, গৃহকর্মী, শিক্ষক, ঝাড়ুদার এবং সর্বস্তরের এক লাখের বেশি মানুষের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নতুন রাজনৈতিক দলের ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনার বিষয়ে তাদের মতামত চাওয়া হয়েছে। নতুন দলের জন্য নাম ও প্রতীক প্রস্তাব দেওয়ার জন্যও জনগণকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এটি একটি অনন্য উদ্যোগ, যেখানে এত ব্যাপক আকারে জনমত সংগ্রহ করা হচ্ছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি উভয়ই জুলাই বিপ্লবের চেতনা রক্ষার জন্য স্বতন্ত্র রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে অব্যাহত থাকবে এবং জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে এমন একটি রাজনৈতিক দল গড়ে তোলার জন্য একসঙ্গে কাজ করবে।
আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করে সংগঠনের শক্তি প্রদর্শন করতে চায় বৈষম্যবিরোধীরা। দল গঠনের পর জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আহত ও নিহতদের স্মরণে সভা-সেমিনারের আয়োজন করে মাঠপর্যায়ে কার্যক্রম জোরদার করে আলোচনায় থাকবে। এসব সভা-সেমিনারে চাঁদাবাজ, দখলবাজ ও সন্ত্রাসীদের ভোট না দিতে জনগণকে উৎসাহিত করা হবে। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের অনিয়ম, লুটপাট ও দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরা হবে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন বলেন, ২০ ফেব্রুয়ারির পরে নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশে আসবে। রোজার আগেই এসব কাজ করা হবে। প্রথমে আহ্বায়ক কমিটি করা হবে। দেশের কিছু সিনিয়র সিটিজেন নতুন রাজনৈতিক দলে আসার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। দলের নাম কী হবে, কারা কারা দলের উপদেষ্টা হবেন, এ নিয়ে কাজ চলছে। গঠনতন্ত্রের কাজ এখনো শেষ হয়নি। কিছু লোক এটা নিয়ে কাজ করছেন।
একই কথা বলেছেন, জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুর ইসলাম আদীব। তিনি বলেন, জুলাই বিপ্লবকে ধারণ করে জাতীয় নাগরিক কমিটি তার লক্ষ্য অর্জনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্বে দেওয়া ছাত্রদের পক্ষ থেকে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের শক্তিকে সুসংহত করে দেশ পুনর্গঠনের লক্ষ্যে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে আহ্বায়ক ও আখতার হোসেনকে সদস্য সচিব করে জাতীয় নাগরিক কমিটি গঠন করা হয় গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর। তখন থেকেই ছাত্রদের নতুন দল গঠন করার বিষয়ে নানা আলাপ-আলোচনা শুরু হয়, যা বর্তমানে একটি কাঠামো দাঁড় করানোর চেষ্টা চলছে।
নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয় নিয়ে গতকাল বুধবার রাজধানীর বাংলামটর কেন্দ্রীয় কার্যালয় সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, আমাদের এই রাজনৈতিক দলটি যেন নির্দিষ্ট একটি শ্রেণির না হয় এবং নির্দিষ্ট একটি আদর্শের না হয়ে যায়। এটি যেন সমাজের সব স্তরের কণ্ঠস্বর হয়, সেজন্য আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তিনি বলেন, যারা মনে করছেন দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থা থেকে তারা বাদ পড়েছেন, আমরা তাদেরও প্রতিনিধিত্ব করতে চাই। আমরা সব নাগরিকের কথা শুনতে চাই, আমরা সবার আকাঙ্ক্ষা ধারণ করতে চাই। ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে আরেকবার এদেশের মানুষের সামনে গাঠনিক মুহূর্ত হাজির হয়েছে। সময়ের পরিক্রমায় ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে সংঘটিত অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করা দেশের সর্বস্তরের নাগরিকদের; বিশেষত, তরুণ জনগোষ্ঠীর নতুন আকাঙ্ক্ষা ও রাষ্ট্রকল্প তৈরি হয়েছে। কিন্তু বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলো তা ধারণ করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। ফলে অভ্যুত্থানের শক্তি ছাত্র-তরুণরা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সৃষ্টি হওয়া নতুন আকাঙ্ক্ষা ও রাষ্ট্রকল্পকে ধারণ করে বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদবিরোধী জনতাকে সঙ্গে নিয়ে একটি রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে।
‘সংস্কার সংস্কার খেলার নামে সময় নষ্ট না করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করুন’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।