জুমবাংলা ডেস্ক : বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পাওনা আদায়ে ভারতীয় কোম্পানি আদানি পাওয়ারের শক্ত কোনো উদ্যোগ ছিল না। কিন্তু গণ অভ্যুত্থান-পরবর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পরপর পাওনা আদায়ে মরিয়া হয়ে ওঠে কোম্পানিটি। প্রধান উপদেষ্টার কাছে চিঠি দিয়ে পাওনা পরিশোধ না করলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধের হুমকি দেন আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানি। বিদ্যুৎ আমদানি করায় বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি দায় এই ভারতীয় কোম্পানির কাছে। বাংলাদেশ প্রতিদিনের করা প্রতিবেদন থেকে বিস্তারিত-
গত মাসে ১৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার পরিশোধ করেছে সরকার। পরিশোধের পর দেনার পরিমাণ ছিল ৮৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার। বাকি অর্থও সরকার দ্রুত পরিশোধের চেষ্টা করছে। আদানিসহ অন্য বিদেশি কোম্পানির বকেয়া পরিশোধ করা হবে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বরাদ্দ থেকে। সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।
গণ অভ্যুত্থান-পরবর্তী সরকারের অর্থনৈতিক ব্যয় সংকোচনের সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বরাদ্দ ৫০ হাজার কোটি টাকা কাটছাঁটের পরিকল্পনা রয়েছে। এই অর্থের একটি বড় অংশ বিদ্যুৎ খাতে স্থানান্তর করে ব্যয় হবে বিদেশি কোম্পানিগুলোর দেনা পরিশোধে। পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা বলেছেন, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির দেশি অংশ থেকে একটি বড় অংশ কাটছাঁট করা হতে পারে এবং বৈদেশিক তহবিল এবং প্রকল্প সহায়তাও হ্রাস করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় এবং পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তাদের মতে, বাজেট কাটছাঁট কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বরাদ্দ ৫০ হাজার কোটি টাকা কমে ২ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা হতে পারে। বর্তমানে এডিপির বরাদ্দ রয়েছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য বর্তমান এডিপির বৈদেশিক সহায়তার অংশ পুনর্বিবেচনার জন্য সব মন্ত্রণালয় এবং বিভাগের সঙ্গে আলোচনা শেষ করেছে। ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার এডিপি বরাদ্দের মধ্যে সরকারের অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা এবং বৈদেশিক উৎস থেকে ১ লাখ কোটি টাকাই বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সূত্রগুলো জানিয়েছে, বিগত আমলে অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ের কারণে রাজস্বের চাপ রয়েছে। তাই পরিকল্পনা কমিশন এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ ইতোমধ্যে এডিপি কাটছাঁটের কাজ শুরু করেছে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, গত কয়েকদিন আমরা সব মন্ত্রণালয় এবং বিভাগের সঙ্গে পরামর্শ করেছি। তারা বলেছেন, বেশির ভাগ মন্ত্রণালয় তাদের ব্যয় করা ক্ষেত্রে সতর্ক ছিল। সরকারের আর্থিক বিষয়ে সতর্ক অবস্থানের কারণে অনেক বড় প্রকল্পের তহবিল বরাদ্দ কাটছাঁট হতে পারে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি) সামগ্রিক এডিপির বরাদ্দ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি) সামগ্রিক এডিপির বরাদ্দ ১৮ হাজার কোটি টাকা বা ৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ কমিয়ে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা থেকে ২ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে এনেছিল। তার আগের ২০২২-২৩ অর্থবছরে এডিপি ৭ দশমিক ৭২ শতাংশ বা ১৯ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ২ লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকায় নিয়ে এসেছিল। এই অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ২ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি সংকটের মুখোমুখি, সরকার উন্নয়ন কাজের জন্য বাজেটের বড় অংশ কাটতে চায়। উন্নয়ন বাজেট থেকে কাটছাঁট করা অর্থ বিদ্যুৎ খাতে স্থানান্তরিত হবে এবং বিদেশি বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর ঋণ পরিশোধে ব্যয় করা হবে। বিদেশি বিদ্যুৎ কোম্পানির কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনার জন্য বিপুল অঙ্কের বকেয়া রয়েছে সরকারের।
এর আগে, বকেয়া পরিশোধে বিলম্বের কারণে আদানি পাওয়ার ঝাড়খ গত ৩১ অক্টোবর বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছিল। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, তারা এখন মন্ত্রণালয় এবং বিভাগ থেকে পুনর্বিবেচিত প্রকল্প সহায়তার বৈদেশিক তহবিল প্রয়োজনীয়তা যাচাই করছে এবং তার একটি সংশোধিত বাজেট খসড়া করবে। বর্তমান অর্থবছরের সংশোধিত এডিপি চূড়ান্ত করার জন্য আমাদের দিক থেকে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠাব।
পরিকল্পনা কমিশনের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ইতোমধ্যে আমরা সব মন্ত্রণালয় এবং বিভাগের কাছে তাদের নিজ নিজ উন্নয়ন বাজেটের জন্য সংশোধিত প্রস্তাবনা চেয়েছি। সবার প্রস্তাবনা আসার পরে আমরা আগামী মাসের শুরুতে বর্তমান ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জন্য একটি সংশোধিত এডিপির খসড়া করব। এর পর ফেব্রুয়ারিতে অনুমোদনের জন্য সংশোধিত এডিপি পরিকল্পনা কমিশনের বর্ধিত কমিটির বৈঠকে উত্থাপন করব। পরিকল্পনা কমিশনের বর্ধিত কমিটির অনুমোদনের পর, জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে বলেও তিনি জানান।
দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে সহজ করার জন্য ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে বাস্তবায়নের জন্য প্রায় ১ হাজার ৩০০ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। যেহেতু মন্ত্রণালয় এবং সংস্থাগুলোর বাস্তবায়ন করার কার্যক্রম এখনো দুর্বল, তাই বাস্তবায়ন কার্যক্রমকে সুসংগঠিত করার জন্য মূল এডিপি কাটছাঁট করতে যাচ্ছে সরকার।
বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) মতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাস (জুলাই-অক্টোবর) এডিপি বাস্তবায়ন গতি হারিয়ে ৭ দশমিক ৯০ শতাংশে নেমে এসেছে, যা গত অর্থবছর ২০২৩-২০২৪ সময়ের তুলনায় ৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ পয়েন্ট কম। আইএমইডির কর্মকর্তারা জানান, কিছু গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সংস্থা প্রকল্পের কাজের বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেক পিছিয়ে ছিল, ফলে একটি সর্বনিম্ন বাস্তবায়ন হার দেখা গেছে।
বন্দুক ঠেকিয়ে সরকারি চাকরিজীবীকে অপহরণের পর বিয়ে, অত:পর যা হলো….
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।