শরীয়তপুর সদর উপজেলার তুলাসার গ্রামের লাবনী আক্তার একসময় কেবল স্বপ্ন দেখতেন নিজের পায়ে দাঁড়ানোর। প্রাণিবিদ্যা থেকে মাস্টার্স শেষ করেও সন্তানদের দেখাশোনার কারণে চাকরির ইচ্ছা পূরণ হয়নি। কিন্তু হাল ছাড়েননি। ঘরে বসেই নতুন কিছু করার দৃঢ় প্রত্যয় গড়ে ওঠে মনে। কালের কণ্ঠের প্রতিবেদন থেকে বিস্তারিত-
২০২২ সালে খিলগাঁও মডেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণিবিদ্যায় স্নাতকোত্তর শেষ করার পর যখন চাকরির আশায় ছুটছিলেন, তখনই জীবনের মোড় ঘুরে যায়। লাবনীর স্বামী মো. রাকিব একদিন চারটি সুইস এলবিনো ইঁদুর এনে দেন তাঁর হাতে। প্রথমে তিনি অবাক হলেও কিছুদিনের মধ্যেই সেই ইঁদুরগুলো যত্নে পালন শুরু করেন। অল্প সময়ের মধ্যেই বাচ্চা দিতে শুরু করে ইঁদুরগুলো।
শরীয়তপুর সদর উপজেলার তুলাসার গ্রামে খামারে ইঁদুরকে খাবার দিচ্ছেন লাবনী আক্তার। ছবি : কালের কণ্ঠ
এখন তাঁর খামারে রয়েছে প্রায় ৪২০টি ইঁদুর। এর মধ্যে ৪০টি প্যারেন্টস এবং ২৮০টি বাচ্চা।
খাবার খরচও খুব কম। দিনে দুইবার খাবার দেওয়া হয়। সকালে গম, ভুট্টা ও ফিড, আর রাতে থাকে বাসার উচ্ছিষ্ট খাবার, শাক-সবজির টুকরা আর বিশেষভাবে তৈরি খিচুড়ি। প্রতি দুই মাস পর পর একটি মা ইঁদুর ৮ থেকে ১৫টি বাচ্চা দেয়।
এর পর থেকে তিনি নিয়মিত অর্ডার পেতে থাকেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে গবেষণাগার, পোষা প্রাণীর খামার, এমনকি সাপের খামারেও সরবরাহ হচ্ছে লাবনীর খামারের ইঁদুর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রামের একজন সাপের খামারি জানান, ‘আমি আমার সাপের খামারের জন্য এবং এক বন্ধুর গবেষণাগারের জন্য ইঁদুর নিচ্ছিলাম। লাবনী আপুর কাছ থেকে খুব ভালো মানের ইঁদুর পেয়েছি, যা সাপ ও গবেষণার জন্য একদম উপযুক্ত।’
ইঁদুরের দামও বেশ ভালো। প্যারেন্টস ইঁদুরের জোড়া বিক্রি হয় ৪০০-৫০০ টাকায়, আর বাচ্চা ইঁদুর বিক্রি হয় ওজন অনুযায়ী ১০০-২০০ টাকায়। মাসে খাবার ও অন্যান্য খরচ হয় প্রায় পাঁচ হাজার টাকা, কিন্তু আয় হয় এর তিন গুণের বেশি।
উদ্যোক্তা লাবনী আক্তার জানান, প্রথমে বুঝতে পারিনি ইঁদুর পালন করেও ভালো আয় করা সম্ভব। তবে ধীরে ধীরে যত্ন নিতে নিতে বিষয়টিতে আগ্রহ জন্মায়। ইউটিউব ও অনলাইন ঘেঁটে দেখি, গবেষণাগার, পোষা প্রাণী বিক্রেতা ও সাপের খামারিদের কাছে এই ইঁদুরের চাহিদা অনেক। তখন থেকেই এটাকে ব্যবসায় রূপ দেওয়ার পরিকল্পনা করি।
তিনি বলেন, ‘আমি প্রথমে শুধু শখের বসে শুরু করেছিলাম, কিন্তু এখন এটা একটা লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এখন আমার কাছে অর্ডার আসে। এমনকি চট্টগ্রাম থেকেও ক্রেতারা আমার ইঁদুর কিনছেন।’ লাবনী বলেন, আমি চাইলেও চাহিদা অনুযায়ী ইঁদুর সরবরাহ করতে পারছি না। এখন খামারটি আরো বড় করার পরিকল্পনা করছি। এখন সরকারি সহায়তা পেলে আমি উপজেলা পর্যায়ে খামার সম্প্রসারণ করতে পারব। এতে শুধু আমার লাভ হবে না, বরং অন্য নারীদেরও কাজের সুযোগ
তৈরি হবে।
এ ব্যাপারে শরীয়তপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইলোরা ইয়াসমিন বলেন, লাবনীর এটা একটা অন্য ধরনের উদ্যোগ। সাধারণত আমরা দেখি হাঁস-মুরগি পালন, গরু-ছাগল পালন, আরো অন্যান্য বিউটিফিকেশন সেলাই এসব বিষয়ে অংশগ্রহণ দেখা যায়। কিন্তু ল্যাবের জন্য লাবনী যেই উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন আমি তাঁকে সাধুবাদ জানাই। লাবনীর এই উদ্যোগ শুধু একজন নারীর আত্মনির্ভরশীল হওয়ার গল্প নয়, বরং এটি প্রমাণ করে যে সীমিত সুযোগেও সঠিক পরিকল্পনা ও পরিশ্রম থাকলে বড় কিছু করা সম্ভব। নারীদের জন্য এমন উদ্যোগ অনুপ্রেরণাদায়ক। আমরা চাই, লাবনীর মতো আরো নারীরা এগিয়ে আসুক। প্রয়োজনে আমরা সরকারি পর্যায়ে সহায়তার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করব।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।