ইউক্রেনকে কামিকাজে ড্রোন দিচ্ছে আমেরিকা

কামিকাজে ড্রোন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দেশ ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পরাশক্তি রাশিয়া। এরই মধ্যে আজ বৃহস্পতিবার ৪৩তম দিনে গড়িয়ে রুশ এই সামরিক অভিযান। বিগত ৪২ দিনে ইউক্রেনের বেশ কয়েকটি শহর দখলে নিয়েছে রুশ সেনারা। অবশ্য, নিজেদের সামর্থ অনুযায়ী প্রতিরোধও গড়ে তুলেছে ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনী। ইউক্রেনীয় বাহিনীর প্রতিরোধের মুখে সম্প্রতি রাজধানী কিয়েভ ও এর পাশ্ববর্তী এলাকা এবং চেরনিহিভ ছাড়তে বাধ্য হয় রুশ বাহিনী।

কামিকাজে ড্রোন

এর মধ্যেই গণমাধ্যমে খবর আসে ইউক্রেনকে ভয়ঙ্কর এক ধরনের ড্রোন দিচ্ছে আমেরিকা। গত ১৬ মার্চ ইউক্রেনে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করে আমেরিকা। এই প্যাকেজের আওতায় থাকছে ১০০টি ভয়ঙ্কর ‘কামিকাজে ড্রোন’। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড জে. অস্টিন তৃতীয় মঙ্গলবার ঘোষণা দেন যে, ভয়ঙ্কর এই কীভাবে চালাতে হয় তা শেখানো হচ্ছে আমেরিকায় অবস্থানরত ই্উক্রেনীয়দের।

কামিকাজে ড্রোন কতটা ভয়ঙ্কর?

বিশ্বে সামরিক অস্ত্রের ইতিহাসে নতুন সংযোজন ড্রোন। এমন কিছু ড্রোন আছে, যা ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। আবার কিছু ড্রোন নিজেই ক্ষেপণাস্ত্র হিসেবে কাজ করে। নিজেই ক্ষেপণাস্ত্র হিসেবে কাজ করা এ ড্রোনগুলোকে ‘কামিকাজে’ বা আত্মঘাতী ড্রোন বলা হয়।

এই ড্রোনকে ‘সুইচব্লেড ড্রোন’ও বলা হয়। এগুলো ছোট মানববিহীন বিমান যা বিস্ফোরকে পরিপূর্ণ থাকে। এটি ‘কিলার ড্রোন’ হিসেবেও পরিচিত।

উড্ডয়ন শুরুর সময় এদের ডানাগুলো ব্লেডের মতো বেরিয়ে আসে বলে এগুলোকে ‘সুইচব্লেড ড্রোন’ বলা হয়। লক্ষ্যবস্তুকে সরাসরি আঘাত হানতে সক্ষম এই আত্মঘাতী ‘কামিকাজে ড্রোন’।

একটি ট্যাংক মুহূর্তে গুঁড়িয়ে দিতে বা শত্রু সেনাবাহিনীর একটি দল নিমিষের মধ্যে ধ্বংস করতে সক্ষম এই ড্রোন। একবারই ব্যবহারযোগ্য এই ড্রোন আমেরিকার অন্য ড্রোনগুলোর তুলনায় অনেকটাই সস্তা।

এনভায়রনমেন্ট সংস্থা এই ‘কামিকাজে ড্রোন’-এর প্রস্তুতকারক। এই ড্রোনটি মূলত দুটি আকারে পাওয়া যায়। সুইচব্লেড ৩০০ এবং সুইচব্লেড ৬০০। সুইচব্লেড ৩০০ এর ওজন প্রায় পাঁচ পাউন্ড (প্রায় আড়াই কিলোগ্রাম)। অপেক্ষাকৃত হালকা ড্রোনটি টানা ১৫ মিনিট পর্যন্ত উড়ে যেতে পারে। যা একটি পিঠের ব্যাগের মধ্যে বহন করা যায়।

শত্রুপক্ষের গতিবিধির উপর নজর রাখতে ছোট পদাতিক সেনাদলকে সাহায্য করে এই ড্রোন। সুইচব্লেড ৬০০ ড্রোনটি তুলনামূলকভাবে আকারে এবং ওজনে বড়। এই ড্রোনের ওজন প্রায় ৫০ পাউন্ড (প্রায় সাড়ে ২২ কিলো)। এই ড্রোনগুলো টানা ৪০ মিনিট পর্যন্ত উড়তে পারে। এটি ‘ভ্রাম্যমাণ মিসাইল’ হিসেবেও পরিচিত। প্রধানত শত্রুপক্ষের কামান ধ্বংস করতে এই মিসাইলের জুড়ি মেলা ভার।

ফের হোয়াইট হাউসে ওবামা!

ছোট প্রাণঘাতী এই ড্রোনগুলো রাডারে শনাক্ত করা কঠিন। হস্তক্ষেপ ছাড়াই লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে পারে। ২০১০ সালে আফগানিস্তান যুদ্ধের সময় তালেবানের বিরুদ্ধে আমেরিকার সামরিক সেনা ‘কামিকাজে ড্রোন’ ব্যবহার করে। আমেরিকার সেনামহলে এই ড্রোন ‘ফ্লাইং শটগান’ হিসেবেও পরিচিত।

শুধু নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করাই এই ড্রোনের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। অন্য ক্ষেপণাস্ত্রের মতো ‘কামিকাজে’ আশপাশের এলাকা বা মানুষের ক্ষতি করে না। এমনকি লক্ষ্যবস্তুর একদম পাশে বসে থাকলেও সেই মানুষের ক্ষতির পরিমাণ হবে অতিসামান্য।

আমেরিকা ছাড়াও রাশিয়া, চীন, ইসরায়েল, ইরান এবং তুরস্কের কাছেও এই ধরনের ড্রোন রয়েছে। সূত্র: সিএনবিসি, নিউইয়র্ক টাইমস, এনবিসিনিউজ, এক্সপ্রেস ইউকে, দ্য টেলিগ্রাফ, বিবিসি, ডেইলি মেইল