আন্তর্জাতিক ডেস্ক: চলতি মাসের শুরুর দিকে ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে রাশিয়া থেকে গ্যাস আমদানি পুরোপুরি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে লিথুনিয়া। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রথম সদস্য হিসেবে এমন পদক্ষেপ নেওয়ার সাহস দেখিয়েছে তারা। কিন্তু জার্মানি-ফ্রান্সের মতো বড় বড় দেশগুলো যা পারেনি, তা কীভাবে করলো ‘পুঁচকে’ লিথুনিয়া।
গত ২ এপ্রিল লিথুনিয়ান প্রেসিডেন্ট গিতানাস নুসেদা এক টুইটে বলেন, এই মাস থেকে লিথুয়ানিয়াতে আর রুশ গ্যাস নয়। কয়েক বছর আগে আমাদের দেশ এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, যা আজ এক ‘আগ্রাসী শক্তির’ সঙ্গে কোনো কষ্ট ছাড়াই সম্পর্ক ছিন্ন করার সুযোগ দিয়েছে। আমরা যদি এটা করতে পারি, বাকি ইউরোপও পারবে!
একটি নির্দিষ্ট পর্যায় পর্যন্ত নুসেদা ঠিকই বলেছেন। রুশ গ্যাসনির্ভরতা কমানোর পরিকল্পনায় বছরের পর বছর ব্যয় করেছে লিথুয়ানিয়া, যার ফলে তারা আমদানি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছে। সেখানে অন্য ইউরোপীয় দেশগুলো মাত্র কিছু দিন আগে বিকল্প উৎসের সন্ধানে গুরুত্ব দিয়ে গ্যাস আমদানি বাড়ানো ও স্টোরেজ অবকাঠামো তৈরিতে অগ্রাধিকার দিয়েছে।
লিথুয়ানিয়া এত এগিয়ে গেলো কীভাবে?
২০১৪ সালেও লিথুনিয়ার প্রয়োজনীয় শতভাগ গ্যাস যেতো রাশিয়া থেকে। স্বীকার করতে হবে, পরিমাণের হিসাবে এটি খুব বেশি নয়। আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থার হিসাবে, ২ কোটি ৮০ লাখ জনসংখ্যার দেশটি ওই বছর ২৮৬ কোটি ঘনমিটার গ্যাস আমদানি করেছিল। যেখানে গত বছর জার্মানি আমদানি করেছে প্রায় ১৪ হাজার ২০০ কোটি ঘনমিটার গ্যাস, যা লিথুনিয়ার তুলনায় বহুগুণ বেশি।
দুই দেশের ভৌগলিক অবস্থান ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক বিবেচনায় অনেক আগেই রাশিয়ার বাইরে মিত্র খুঁজতে শুরু করে লিথুনিয়া। সোভিয়েত ইউনিয়ন বিলুপ্তির পর দেশটি পশ্চিমাদের দিকে ঝুঁকতে শুরু করে। ২০০৪ সালে তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দেয় এবং পরে ন্যাটোর সদস্য হয়।
রাশিয়া ও রুশ ছিটমহল কালিনিনগ্রাদের মধ্যে অবস্থিত লিথুয়ানিয়ার সার্বভৌমত্ব নিয়ে আশঙ্কা ছিল বরাবরই। দেশটির ভয়, রাশিয়া তাদের ভূখণ্ডও দখল করতে পারে। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে রাশিয়া কালিনিনগ্রাদে সামরিক মহড়া চালানোর পর লিথুনিয়া আবারও সৈন্য নিয়োগ শুরু করে। ২০১৭ সালে লিথুয়ানিয়ান প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, রাশিয়া তাদের জন্য হুমকি।
এসব বুঝেই রাশিয়ার ওপর ধীরে ধীরে নির্ভরতা কমাতে শুরু করে লিথুয়ানিয়া। ২০০১ সালের এক চুক্তি অনুসারে লিথুনিয়া, এস্তোনিয়া ও লাটভিয়া একটি রুশ ‘জ্বালানি বলয়ে’ আবদ্ধ হয়েছিল। কিন্তু ২০১৫ সালে দেশ তিনটি সেই চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসে এবং রাশিয়ার পরিবর্তে তাদের বৈদ্যুতিক গ্রিডগুলো ইউরোপ অভিমুখী করে তোলে।
২০১০ সালে লিথুনিয়ান সরকার ক্লাইপেদা বন্দরে একটি এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ শুরু করে এবং এটিকে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প ঘোষণা করা হয়। ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংক থেকে সাড়ে নয় কোটি ডলার ঋণ নিয়ে নির্মিত টার্মিনালটি চালু হয় ২০১৪ সালে।
প্রতি বছর ৫৪ কোটি ঘনমিটার গ্যাস কিনতে নরওয়ের স্টেটঅয়েলের (বর্তমান ইকুইনর) সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে লিথুনিয়া। এছাড়া একটি নরয়েজিয়ান প্রতিষ্ঠান থেকে ইন্ডিপেনডেন্স নামে বিশাল এলএনজি জাহাজ ভাড়া নিয়েছে তারা। ভাসমান স্টোরেজ সুবিধা দেওয়া জাহাজটির জন্য প্রতিদিন এক লাখ ডলারের বেশি ভাড়া দেয় লিথুনিয়া সরকার।
জ্বালানি উৎসে এভাবে বৈচিত্র্য এনে মাত্র এক দশকের মধ্যেই রাশিয়ার ওপর নির্ভরতা কমিয়ে ফেলে লিথুয়ানিয়া। ২০১৯ সালে তাদের সামগ্রিক গ্যাস আমদানিতে রাশিয়ার ভাগ কমে দাঁড়ায় মাত্র ৪৫ শতাংশ (নরওয়ে থেকে নিয়েছিল ৫৪ শতাংশ)।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে, রাশিয়ার বিকল্প পরিকল্পনা লিথুয়ানিয়ার জন্য ভালোভাবেই কাজ করেছে। এ কারণেই ইউক্রেন আক্রমণের কয়েক সপ্তাহের মধ্যে রুশ জ্বালানি আমদানি শূন্যে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে তারা। সূত্র: কোয়ার্টজ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।