জুমবাংলা ডেস্ক: পানির ওপর ভেসে থাকা দৃষ্টিনন্দন প্রাসাদ, তার গা ঘেঁষে এঁকেবেঁকে বয়ে চলা স্বচ্ছ পানির লেক। পুরো শহরের বুকজুড়ে থাকা পানিতে প্রাসাদের প্রতিবিম্ব স্পষ্ট, আকাশের মেঘগুলোও লেকের জলে লুটোপুটি খাচ্ছে। লেকের জলযোগে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে সঙ্গী ছোট ডিঙি নৌকা— এমন কিছু পরিচ্ছন্ন উদাহরণ উঠে আসে স্বপ্নের নগরী ইতালির ভেনিস সম্পর্কে। পৃথিবীর ভাসমান শহরের তালিকায় সব সময় শীর্ষে তার নাম।
সংস্কৃতির আঁতুড়ঘর: ভেনিসের শিল্প, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের খোঁজে আপনাকে যেতে হবে ‘ভৌজ প্যালেস’-এ। দেশটির সংস্কৃতির আঁতুড়ঘর ভৌজ ভবনটি গথিক স্থাপত্য রীতিতে নির্মিত। প্রজাতন্ত্রের ঐশ্বর্য প্রদর্শনের জন্য ভবনটি ১৯২৩ সালে জাদুঘরে রূপান্তরিত হয়। নগরীর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গা পিয়াজ্জা সান মার্কোতে এটি অবস্থিত। চৌদ্দ শতকের প্রথমভাগে পিয়াজ্জা সান মার্কো ছিল ভেনিশীয় প্রজাতন্ত্রের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় কেন্দ্রস্থল। বর্তমানে এর চারপাশে রয়েছে অগণিত বুটিক রেস্তোরাঁ, ক্যাফে ও জাদুঘর।
স্বর্গীয় ভালোবাসা লাভ: সান মারকো ও সান পলো জেলা দুটির মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত ‘গ্র্যান্ডফ্যানাল’ এর ওপর রয়েছে প্রাচীনতম সেতু ‘রিয়ালটো ব্রিজ’। ব্রিজ থেকে ক্যানেল বা খালের দৃশ্যটি অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর। প্রচলিত আছে প্রেমিক প্রেমিকারা সূর্যাস্তের সময় ব্রিজের নিচে উপস্থিত হন। ক্যাম্পানাইল গির্জায় ঘণ্টাগুলো বাজার সঙ্গে সঙ্গে পরস্পরকে চুম্বন করলে তারা স্বর্গীয় ভালোবাসা লাভ করে। প্রচলিত এই মিথ আর খালের দুই পাশে সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা রূপ নকশায় সাজানো বাড়িগুলোর পর্যটকদের টানে অন্যরকম মাদকতায়। আর তাইতো সেতুর নিচে দিয়ে গন্ডোলায় চড়ে ভ্রমণ করা কাপল পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত প্রিয়।
মুখোশের শহর: স্বপ্নের শহর ভেনিসকে অন্য দুনিয়ার মূর্তি বললেও ভুল হয় না। বিশেষ থিমে বানানো মুখোশ পরে পালিত হয় প্রধান দুই উৎসব। ভেনিসের রংবেরঙের মুখোশগুলো এমনিই জগদ্বিখ্যাত। তার ওপর ফেস্টিভ্যালের সময় দর্শনীয় চিত্র-বিচিত্র সব মুখোশ শোভা পায় প্রায় সবার মুখে। সারা বছরই চলে তার বিকিকিনি। হরেক রকমের মুখোশ পরে লোকজন উৎসব পালন করে। যারা মুখোশ তৈরি করে তাদেরও একটা আলাদা সম্মান আছে সমাজে। এই মুখোশের কোনটা পাখির ঠোঁট, কোনটা বিশালাকৃতির, কোনটা পালকময় আবার কোনোটা মুখের অবয়বে তৈরি।
হস্তশিল্প: পিয়াজ্জা সান মারকোর পরেই রয়েছে ‘ফ্যাবরিক্স গিলিয়ানা’। এখানে পাওয়া যায় হাতে তৈরি নানা রকম শো-পিস, বালিশ, ক্যালিগ্রাফি ও অন্যান্য উপহার সামগ্রী। সর্বোপরি ভেনিসের সব রাস্তার পাশেই রয়েছে অগণিত ছোট বুটিক ও ছোট বিপণি, যা মানুষকে আকৃষ্ট করে সহজে। ভেনিসের আরেকটি কারণে বিখ্যাত, আর তা হলো গ্লাস শিল্প। এসব শোপিস তৈরিতে ফ্যাক্টরির স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি ব্যবহার হয় না। এখানকার দক্ষ শিল্পীরা হাত দিয়ে সব ধরনের কাচ সামগ্রী করে থাকেন নিমিষে। এই তৈরি পদ্ধতি নিজ চোখে দেখলেও বিশ্বাস হতে চায় না। এগুলো যেমন শৈল্পিক তেমনি দৃষ্টিনন্দন।
গির্জা থেকে প্রথম মসজিদ: ভেনিস নগরীতে প্রথম কোনো মসজিদ নির্মিত হয়েছে বছর দুই আগে। এর আগে সেখানকার মুসলিমদের স্টোর রুম বা দোকানে নামাজ আদায় করতে হতো। মসজিদটি একটি খ্রিস্টান চার্চকে সংস্কার করে স্থাপিত হয়। প্রায় ৪০ বছর আগে বন্ধ করে দেওয়া শান্ত মারিয়া দেলা মিজেরিকডিয়া নামের চার্চ এটি।
প্রতি বছর ভেনিসে লাখো মুসলিম পর্যটক যান। তারা বিস্ময়ের সঙ্গে জিজ্ঞেস করতেন, শহরে ইসলামের ইতিহাসের বহু নিদর্শন দেখা গেলেও মসজিদ নেই কেন? এই মসজিদটি সেই প্রশ্ন হয়তো প্রতিরোধ করবে। কাতার সরকারের অর্থায়নে আধুনিক শিল্পকলা নিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে নামকরা প্রদর্শনী ‘ভেনিস বিনালে’র অংশ হিসেবে এটিকে মসজিদে রূপান্তরিত করা হয়।
সুইডেনের শিল্পী ক্রিস্টোফার বুশেলের ডিজাইন অনুযায়ী প্রদর্শনীর প্রবেশ পথে মসজিদটি স্থাপন করে মূলত ইসলামের প্রতি কিছু মানুষের মনোভাবকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। তারা দেখতে চান এই উদ্যোগের বিপক্ষে কেমন প্রতিক্রিয়া হয়। নবনির্মিত মসজিদটি ছাড়াও শত শত বছর ধরে ভেনিসের বিভিন্ন স্থাপনায় ইসলামের স্থাপত্যশৈলীর প্রভাব বিদ্যমান রয়েছে।
পর্ব-৩ আসছে আগামীকাল
ইতালির ভেনিস: এক স্বর্গীয় স্বপ্নময় অনন্য শহর(পর্ব ১)
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।