জুমবাংলা ডেস্ক: পানির ওপর ভেসে থাকা দৃষ্টিনন্দন প্রাসাদ, তার গা ঘেঁষে এঁকেবেঁকে বয়ে চলা স্বচ্ছ পানির লেক। পুরো শহরের বুকজুড়ে থাকা পানিতে প্রাসাদের প্রতিবিম্ব স্পষ্ট, আকাশের মেঘগুলোও লেকের জলে লুটোপুটি খাচ্ছে। লেকের জলযোগে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে সঙ্গী ছোট ডিঙি নৌকা— এমন কিছু পরিচ্ছন্ন উদাহরণ উঠে আসে স্বপ্নের নগরী ইতালির ভেনিস সম্পর্কে। পৃথিবীর ভাসমান শহরের তালিকায় সব সময় শীর্ষে তার নাম।
পর্যটন
আর্ট ও আর্কিটেকচার সেলিব্রেশনের জন্য পর্যটকদের কাছে ভেনিস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি শহর। প্রতিদিন এই শহরের রহস্য জট খুলতে ও নিজের সৃষ্টিশীলতাকে শামিল করতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসে প্রায় ৬০ হাজার পর্যটক। বছরে এর সংখ্যা প্রায় দুই কোটিকে ছাড়িয়ে যায়। পর্যটকের জন্য নিরাপদ চলাচল, ভিন্নতার উপস্থাপন, রূপ বৈচিত্র্য, খাবার, ঐতিহ্য, রীতি, উৎসব সবই টানে পর্যটনপ্রেমীদের। কিন্তু প্রতিবছর বেড়ে চলা অতিরিক্ত পর্যটকের চাপে ভেনিস প্রায় ন্যুব্জ হতে চলেছে। পরিবেশগত সমস্যা দেখা দিয়েছে ইতিমধ্যে। ২০১৭ সালে ইউনেস্কোর দেওয়া সিদ্ধান্তমতে ভেনিস বর্তমানে বিপদাপন্ন অবস্থায় আছে। সমাধান হিসেবে পরামর্শ দিয়েছে পর্যটনের সংখ্যা কমাতে হবে।
অর্থনীতি
অতীত ইতিহাস ঘাঁটলে ভেনিসের অর্থনীতি সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায় না। তবে ইউরোপ ও আফ্রিকার দেশগুলোর সঙ্গে তাদের ক্রীতদাস ব্যবসা যে রমরমা ছিল তা জানা যায়। তবে ধীরে ধীরে ভেনিস ব্যবসা বাণিজ্যের নগরীতে পরিণত হয়। পরবর্তীতে সমুদ্রকেন্দ্রিক ব্যবসায় রাজত্ব গেড়ে বসে। অন্যান্য দেশের সঙ্গে সমুদ্রপথে ব্যবসার প্রসার ঘটে। এগার থেকে পঞ্চদশ শতাব্দী পর্যন্ত ভেনিসকে পার্শ্ববর্তী অন্যান্য অঞ্চল পবিত্র স্থান হিসেবে দেখত। বর্তমানে ভেনিসের অর্থনীতির প্রধান কেন্দ্রবিন্দু পর্যটন খাত ও জাহাজ নির্মাণ শিল্প। এ ছাড়াও সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি, বুটিক ব্যবসা, রেস্তোরাঁ, রপ্তানি ইন্ডাস্ট্রি খাত ইত্যাদি। একই সঙ্গে এখানকার কাচ শিল্প অর্থনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলছে। তা ছাড়া ক্রেতা হিসেবে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পর্যটকের উপস্থিতি শৌখিন শিল্পগুলোকে উৎসাহিত করে। তবে ২০১৬ সালে এসে ভেনিসকে বড় ধরনের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়। উচ্চমাত্রার ব্যাংক ঋণ ও জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে যাওয়া অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এই অবস্থা কাটাতে ২০১৭ সালে ইতালির অন্য ব্যাংকগুলোর সহায়তায় কিছু প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
প্রশাসন
ভেনিস শহরের পৌরসভার বিধানিক ব্যবস্থায় ৪৫ জন কাউন্সিলর আছেন। তারা প্রতি পাঁচ বছর মেয়াদে নির্বাচিত হন। মেয়র নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের নির্বাচিত করা হয়। ভেনিস শহরটি মূলত কেন্দ্রীয় প্রশাসনের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। ১৯৯০ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বামপন্থি শাসনের অধীনে ছিল।
পড়াশোনা
উচ্চশিক্ষার জন্য ভেনিস বৃহৎ আন্তর্জাতিক কেন্দ্র। ১৮৬৮ সালে এই শহরে গড়ে উঠেছে ‘কা ফোসকারি ইউনিভার্সিটি অব ভেনিস’ নামে প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়। ১৭৫০ সালে স্থাপিত হয়েছে একাডেমি অব ফাইন আর্টস। বর্তমানে ভেনিসের শিক্ষাব্যবস্থায় যোগ হয়েছে অসংখ্য গৌরবময় বৈশিষ্ট্য।
স্টেডিয়াম
খেলাধুলার প্রতি গভীর অনুরাগ রয়েছে ভেনিসেরও। ১৮৭২ সালে স্থাপিত হয়েছে জিমন্যাস্টিক ক্লাব। বাস্কেটবল খেলা চলে তখন থেকেই। এর দীর্ঘকাল পরে ১৯০৭ সালে এসে যোগ হয় ফুটবল ক্লাব ভেনেজিয়া ক্লাব। শহরের প্রধান ফুটবল ক্লাব যেমন এটি তেমনি ইতালির সবচেয়ে পুরনো স্টেডিয়াম। এই ক্লাবের প্রেসিডেন্ট হিসেবে আছেন ভেনিসের মেয়র স্বয়ং।
আবহাওয়া
শহরটি শরৎ ও বসন্তের আগে প্রায়ই বন্যার আতঙ্কে থাকে। কিন্তু তারা নানা ধরনের কৌশল অবলম্বন করে বন্যার পানি হৃদ দিয়ে প্রবাহিত করে দেয় যাতে তার জনবসতিতে আঘাত না হানতে পারে। দেশটির আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী সেখানে প্রধানত আদ্র জলবায়ু বিরাজ করে। শীত ও প্রচণ্ড গরমের মিশেলে চলে আবহাওয়া। জানুয়ারিতে গড়ে ৩.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস জুলাইয়ে গড়ে ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বিরাজ করে। এ ছাড়া পুরো বছরে গড়ে ২৯.৪ ইঞ্চি বৃষ্টিপাত হয়।
আধুনিকায়ন
আঠারো শতকে এসে ভেনিস তার স্থাপত্যকর্ম, শিল্প, সাহিত্যে আধুনিকতার উল্লেখযোগ্য ছাপ। কিন্তু ১৭৯৭ সালে যখন নেপোলিয়ান ভেনিস জয় করলে তারা স্বাধীনতা হারায়। পরবর্তীতে ১৮৬৬ সালে আবার স্বাধীনতা ফিরে পায়। এরপর ভেনিস ইতালির নতুন অংশ হিসেবে যুক্ত হয়। পাইলিং থেকে শুরু করে ভবনগুলো আগে কাঠ দিয়ে নির্মাণ হতো। তবে এই সময় প্রথম স্টিল, ইট আর পাথর ব্যবহার শুরু হয়। ভবনগুলোর ডিজাইনে আসে নান্দনিকতা। পুরো শহরকে এমনভাবে সাজানো হয় যেন তারা কোনো সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে যাচ্ছে। তার প্রমাণ মেলে প্রতিদিন ক্রমবর্ধমান পর্যটককে আকৃষ্ট করার শক্তি দিয়ে।
অন্যরকম ভেনিস
ইতালির ভেনিসের কথা কে না জানে! পানির ওপর যেন পুরো একটি শহর দাঁড়িয়ে আছে? ঘানাতে এনজুলেজো নামে এমন একটি গ্রাম আছে যেখানকার ঘরবাড়ি, স্কুুল থেকে শুরু করে টয়লেট, মন্দির সবই খুঁটির সহায়তায় টানডানে লেকের পানির ওপর অবস্থান করছে। তাই তো মাঝেমধ্যেই তাকে ‘ঘানার ভেনিস’ নামে ডাকা হয়। রাজধানী আক্রা থেকে প্রায় ৩৬০ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত গ্রামটি। ভাসমান এই গ্রামে এখন প্রায় ৫০০ লোক বাস করে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।