বিজ্ঞান ও প্রযক্তি ডেস্ক : বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ডিজিটাল জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য ইন্টারনেট একটি অপরিহার্য সম্পদ হয়ে উঠেছে। কিন্তু উচ্চমূল্যের কারণে অনেকেই এখনও গুণগত মানসম্পন্ন ইন্টারনেট সেবা থেকে বঞ্চিত। এই প্রেক্ষাপটে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) ঘোষিত নতুন প্যাকেজ—৫০০ টাকায় ১০ এমবিপিএস ইন্টারনেট—সাধারণ গ্রাহকদের জন্য নিঃসন্দেহে একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি।
Table of Contents
ইন্টারনেট সেবা: নতুন প্যাকেজের দামে কী থাকছে?
নতুন ঘোষণায় বলা হয়েছে, এখন থেকে মাত্র ৫০০ টাকায় গ্রাহকরা ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট সেবা পাবেন। পূর্বে এই মূল্যে মিলতো ৫ এমবিপিএস গতি। অর্থাৎ, একই দামে দ্বিগুণ গতি, যা গ্রাহকদের জন্য দারুণ এক সুযোগ। এই পরিবর্তন শুধু গতি নয়, বরং দেশের ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনকেও একটি নতুন গতি দিচ্ছে।
আইএসপিএবি সভাপতি ইমদাদুল হক জানান, এই সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে কার্যকর হয়েছে এবং আগামীতেও ব্রডব্যান্ডের সর্বনিম্ন গতি ২০ এমবিপিএসে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এই ঘোষণা শুধু একটি অফার নয়, বরং দেশের ডিজিটাল ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা।
টেলিযোগাযোগ খাতে বড় ধরনের সংস্কার আনা হচ্ছে। লাইসেন্সিং ক্যাটাগরি কমিয়ে তিনটিতে আনার মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবার পরিধি আরও বিস্তৃত হবে। একই সঙ্গে নেটওয়ার্ক টপোলজি বদলে ডিজিটাল সেবাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে আরও স্বল্পমূল্যে উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।
এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে বিটিআরসি (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) ঘোষণা করেছে যে, যেসব প্রোভাইডার ফিক্সড ব্রডব্যান্ড সেবা দেবে তারা আর ওয়্যারলেস সেবা দিতে পারবে না, এবং এর বিপরীতও প্রযোজ্য। এতে করে বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়বে এবং সেবার মানোন্নয়ন ঘটবে।
৫০০ টাকার ইন্টারনেট প্যাকেজ: কতটা কার্যকর হবে?
বাজার বিশ্লেষক ও প্রযুক্তি বিশারদরা বলছেন, এই প্যাকেজ মূলত শহুরে গ্রাহকদের জন্য আকর্ষণীয়। তবে এই উদ্যোগ সফল করতে হলে শহর ছাড়িয়ে মফস্বল এবং গ্রামীণ এলাকাতেও এই সেবার বিস্তার ঘটাতে হবে।
ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের সর্বনিম্ন গতি ২০ এমবিপিএস করার প্রস্তাব ইতোমধ্যে আলোচনায় এসেছে। এতে দেশের ইন্টারনেট পেনেট্রেশন বাড়বে এবং ডিজিটাল বৈষম্য কমবে। সরকারের পক্ষ থেকেও পলিসি সংস্কার এবং লাইসেন্স মেয়াদ ১০ বছর করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে যাতে ব্যবসায়িক স্থায়িত্ব নিশ্চিত করা যায়।
বিশ্ববাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভারতে ইন্টারনেটের ব্যান্ডউইথ ৮০ টাকায় ১ জিবিপিএস দরে কেনা সম্ভব। অথচ বাংলাদেশে এই দাম লাখ টাকার কাছাকাছি পৌঁছে যায়। এই বৈষম্য দূর না করা গেলে সাধারণ গ্রাহকদের জন্য প্রকৃত মানসম্পন্ন সেবা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়বে।
বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন এ প্যাকেজের সমালোচনা করে বলেছে, ১০ এমবিপিএস গতি বর্তমানে বিশ্বমানের তুলনায় খুবই কম। তারা চাচ্ছে সর্বনিম্ন গতি হোক ২০ এমবিপিএস এবং সর্বোচ্চ ১০০ এমবিপিএস।
সেবার গুণগত মান নিশ্চিত করতে হলে আইআইজি ও এনটিটিএন পর্যায়ের ব্যয় কমাতে হবে। ট্রান্সমিশন খরচ ৫ টাকায় নামিয়ে আনার পরামর্শ এসেছে বিভিন্ন টেলিকম অপারেটরের পক্ষ থেকে।
লাইসেন্সিং সংস্কার ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
এক দেশ, এক রেট নীতি
আইএসপি খাতে একটি সম্ভাব্য বড় পরিবর্তন হতে যাচ্ছে “এক দেশ, এক রেট” নীতিমালা বাস্তবায়ন। এই নীতির আওতায় ঢাকা থেকে দিনাজপুর, খুলনা থেকে কক্সবাজার—সর্বত্র একই দামে ইন্টারনেট সেবা পাওয়া যাবে। ফলে আর্থিক বৈষম্য দূর হবে এবং সারাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারে সমতা আসবে।
নিবন্ধন-ভিত্তিক সেবা
বিটিআরসির নতুন ঘোষণায় বলা হয়েছে, থানা পর্যায়ে ইন্টারনেট প্রোভাইডারদের আর পূর্ণাঙ্গ লাইসেন্সের প্রয়োজন হবে না, বরং সহজ রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমেই তারা সেবা দিতে পারবে। এতে নতুন উদ্যোক্তারা সহজেই বাজারে প্রবেশ করতে পারবে এবং গ্রাহকরা আরও বেশি অপশন পাবেন।
জনগণের প্রত্যাশা ও ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ
যদিও বর্তমান সিদ্ধান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, তবে এটি চূড়ান্ত সমাধান নয়। জনগণের প্রত্যাশা আজকের ঘোষণাকে ছাড়িয়ে আরও গতি, আরও স্বচ্ছতা এবং আরও মানসম্মত সেবার দিকে নির্দেশ করছে।
তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবিরের মতে, আমাদের এখনই একটি রোডম্যাপ তৈরি করা উচিত আগামী ৩-৫ বছরে দেশের ইন্টারনেট কোথায় যাবে তা নির্ধারণ করার জন্য। শুধু সরকারের উদ্যোগ নয়, বেসরকারি খাতকেও এই উন্নয়নে অংশগ্রহণ করতে হবে।
এই নতুন প্যাকেজ দেশের ডিজিটাল অগ্রযাত্রায় একটি ধাপ মাত্র। এই ধাপকে টেকসই করতে হলে দরকার সম্মিলিত প্রচেষ্টা, টেকসই নীতিমালা, এবং গ্রাহকবান্ধব মনোভাব। ইন্টারনেট যদি সত্যিই জনগণের ‘লাইফলাইন’ হয়ে ওঠে, তবে তা সবার জন্য সহজলভ্য, মানসম্মত এবং সাশ্রয়ী হওয়া উচিত।
📌 সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQs)
৫০০ টাকায় ১০ এমবিপিএস ইন্টারনেট কি সারাদেশেই পাওয়া যাবে?
এই প্যাকেজ প্রথমে শহরাঞ্চলে চালু হলেও ভবিষ্যতে সারা দেশে বিস্তৃত করার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এটি নির্ভর করবে আইএসপিদের সক্ষমতা এবং সরকারের নীতিমালার ওপর।
এই প্যাকেজে কী ধরনের সুবিধা পাওয়া যাবে?
প্রধান সুবিধা হচ্ছে দ্বিগুণ গতি—আগে ৫ এমবিপিএস, এখন ১০ এমবিপিএস। একই সঙ্গে ব্রডব্যান্ড সংযোগে স্থায়িত্ব ও নিরবচ্ছিন্নতার নিশ্চয়তাও বৃদ্ধি পাবে।
এই গতি কি ভিডিও স্ট্রিমিং বা গেমিং-এর জন্য যথেষ্ট?
১০ এমবিপিএস গতি সাধারণ ভিডিও স্ট্রিমিং, অনলাইন ক্লাস এবং দৈনন্দিন ব্রাউজিংয়ের জন্য যথেষ্ট হলেও হেভি গেমিং বা ৪কে ভিডিও স্ট্রিমিংয়ের জন্য আরও বেশি গতি প্রয়োজন হতে পারে।
ভবিষ্যতে কি এই প্যাকেজে আরও উন্নতি আশা করা যায়?
আইএসপিএবি জানিয়েছে, সরকারের সহযোগিতা পেলে ৫০০ টাকায় ২০ এমবিপিএস গতি দেওয়া সম্ভব। সেক্ষেত্রে ভবিষ্যতে আরও উন্নয়ন আশা করা যাচ্ছে।
আইএসপিগুলোর লাইসেন্স কীভাবে উন্নীত হবে?
আইএসপি লাইসেন্সের মেয়াদ ১০ বছর করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে এবং ‘এক দেশ, এক রেট’ নীতিমালার আওতায় শুধুমাত্র রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে সেবা দেওয়ার সুযোগ তৈরি হচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।