আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতের সংবিধানে ইন্ডিয়া ও ভারত দুটি শব্দেরই উল্লেখ করা হয়েছে। সংবিধানের ১ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, ‘ইন্ডিয়া অর্থাৎ ভারত, রাজ্যের সমষ্টি।’ এই ঘটনায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজীব চন্দ্রশেখর ও আসামের মুখ্যমন্ত্রী বিজেপি নেতা হিমন্ত বিশ্বশর্মারা দেশের নামের ক্ষেত্রে ইন্ডিয়া শব্দটি পুরোপুরি বাদ দিয়ে ভারত রাখার সপক্ষে জোরালো সমর্থন দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, দেশের নাম বদলে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মঙ্গলবার কলকাতার ধন ধান্য প্রেক্ষাগৃহে শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে আক্রমণ করেন তিনি। জি২০ সম্মেলন উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর দেওয়া রাষ্ট্রনেতাদের নৈশভোজের আমন্ত্রণপত্রে ‘দ্য প্রেসিডেন্ট অব ইন্ডিয়া’ না লিখে ‘দ্য প্রেসিডেন্ট অব ভারত’ লেখাকে নিয়েই বিতর্কের সূত্রপাত। এখন প্রশ্ন উঠেছে, এবার কী তাহলে সত্যি দেশের নাম বদল করতে যাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদির সরকার?
এই প্রশ্নের উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তবে মোদিকে একাধিক সংশোধন করতে হবে। সংবিধান বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, দেশের নাম পুরোপুরি ভারত করতে হলে একাধিক সংশোধন করতে হবে।
এই ইস্যুতে সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খোলেন লোকসভার প্রাক্তন সচিব পিডিটি আচার্য। তিনি বলেন, ‘এটা করতে গেলে প্রথম সংবিধানের এক নম্বর অনুচ্ছেদ বদলাতে হবে। যার ফলশ্রুতিতে অন্য়ান্য সমস্ত জায়গায় দেশের নাম স্বাভাবিক নিয়মেই বদলে যাবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘সরকারি নথিতে দেশের নাম একটাই রাখা ভালো।
যেহেতু সংবিধানতে ইন্ডিয়া ও ভারত দুটি শব্দই রয়েছে। সেহেতু আইনগতভাবে যে কোনো একটি ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু ঘন ঘন একটার বদলে অপর নাম ব্যবহার না করাই ভালো। এতে আন্তর্জাতিক মহলেও বিভ্রান্তি তৈরি হবে।
’তবে দেশের নাম বদল সংক্রান্ত সংবিধান সংশোধনী বিল পাস করার প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল। বিলটিকে লোকসভা ও রাজ্যসভা সংসদের উভয় কক্ষেই দুই তৃতীংশ সংখ্যা গরিষ্ঠতায় পাস হতে হবে। এরপরেই রাজ্যগুলো বিলটিকে অনুমোদন দেবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশবর্ত বিজেপির জন্য বিলটি পাস করানো রীতিমতো কঠিন মনে করছেন। কারণ বেশ কয়েকটি রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় নেই।
এর আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আজকে তো ইন্ডিয়ার নাম চেঞ্জ করে দিচ্ছে বলে আমি শুনলাম। মাননীয় রাষ্ট্রপতির নামে যে কার্ড হয়েছে, জি২০ সম্মেলনের লাঞ্চে না ডিনারে, তাতে লেখা আছে ভারত বলে। আরে ভারত তো আমরা বলি। এতে নতুনত্ব কী আছে?’ মমতা বলেন, ‘ইংরিজিতে বলি ইন্ডিয়া। ইন্ডিয়ান কনস্টিটিউশন। হিন্দিতে বলে ভারত কা সংবিধান। ভারত তো আমরাও বলি, ভারত আমার ভারতবর্ষ স্বদেশ আমার স্বপ্ন গো। এতে নতুন করে কিছু বলার নেই। কিন্তু ইন্ডিয়া নামে সারা বিশ্ব চেনে।’
এখানেই থেমে না থেকে নরেন্দ্র মোদির কেন্দ্রীয় সরকারকে চড়া সুরে আক্রমণ করে মমতা বলেছেন, ‘আজকে দেশের নামটাও চেঞ্জ হয়ে যাবে। কবে রবি ঠাকুরের নাম চেঞ্জ হয়ে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নাম চেঞ্জ করে দেওয়া হচ্ছে। বড় বড় ঐতিহাসিক সৌধের নাম বদল করে দেওয়া হচ্ছে। ইতিহাসকে পরিবর্তন করে দিচ্ছে।’
প্রসঙ্গত, আগামী ৯ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু জি২০ সম্মেলনে অংশ নেওয়া রাষ্ট্রনেতাদের একটি নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন। সেই উপলক্ষে আমন্ত্রণপত্রও যাচ্ছে নিমন্ত্রিতদের কাছে। যে আমন্ত্রণপত্র ঘিরে তোলপাড় ভারতের জাতীয় রাজনীতির অন্দরমহল। কারণ ভারতের রাষ্ট্রপতি কাউকে কোনো চিঠি লিখলে তাতে চিরাচরিতভাবে লেখা থাকে ‘প্রেসিডেন্ট অব ইন্ডিয়া’ কথাটি। কিন্তু জি২০ নেতাদের আমন্ত্রণ জানানোর চিঠিতে লেখা হয়েছে ‘প্রেসিডেন্ট অব ভারত’।
সূত্র: এই সময়
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।