আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোস্তফা আল কাজেমি সম্প্রতি সৌদি আরব সফর করে সেদেশের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। খবর পার্সটুডে’র।
মোস্তফা আল কাজেমি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব লাভের পর ১১ মাস অতিক্রান্ত হয়েছে। দায়িত্ব লাভের পরপরই প্রথম মাসেই তিনি সৌদি আরব সফরে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন। কিন্তু সৌদি রাজার অসুস্থতার কারণে তিনি সেখানে যেতে পারেননি এবং প্রথম বিদেশ সফরে তিনি ইরানে এসেছিলেন। তারপরও ইরাকের প্রধানমন্ত্রীর সৌদি আরব সফর এবং রাজা সালমানসহ দেশটির অন্যান্য কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাতে তার আগ্রহে কোনো ভাটা পড়েনি। শেষ পর্যন্ত তিনি গত বুধবার রিয়াদ সফরে গেলেও দেশটি রাজা সালমানের সঙ্গে দেখা করেননি এবং তার সঙ্গে কেবল ভার্চুয়াল মিটিং হয়েছে।
ইরাকের প্রধানমন্ত্রীর সৌদি আরব সফরকে দুদিক থেকে মূল্যায়ন করা যায়। প্রথমত, এ থেকে পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোস্তফা আল কাজেমির সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ফুটে ওঠে এবং দ্বিতীয়ত, এ সফরের মাধ্যমে তিনি কি হাসিল করতে চান তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। প্রথমত, কাজেমি ইরাককে একটি আরব রাষ্ট্র হিসেবে দেখেন এবং সেই দৃষ্টিকোণ থেকে আরব দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার বিষয়টিকে তিনি অগ্রাধিকার দিতে চান। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব লাভের পরপরই তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক ধরে রাখার পাশাপাশি সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ অন্য আরব দেশের সঙ্গেও সম্পর্ক বিস্তারে তিনি আগ্রহী।
এ অবস্থায় ইরাকের প্রধানমন্ত্রীর সৌদি আরব সফর এবং এরপর দু’দেশের কূটনীতিকদের সফর বিনিময়ের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। কেননা এর মাধ্যমে ইরাকের প্রতি বাইরের সমর্থন এবং দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশিদের প্রভাবের বিষয়টিও স্পষ্ট হবে। ইরাকের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, প্রতিবেশী সব দেশের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও সহযোগিতা জোরদার করাই তার সৌদি আরব সফরের প্রধান উদ্দেশ্য।
আরেকটি দিক থেকে মোস্তফা আল কাজেমির সৌদি আরব সফর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অর্থনৈতিক সংকট বর্তমানে ইরাকের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকার বিরোধী আন্দোলন এ সংকটকে আরো তীব্রতর করেছে। এ অবস্থায় প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা বিস্তারের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সংকট নিরসনের জন্য তিনি বাইরের পুঁজি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন। কাজেমির এ সফরের মাধ্যমে রিয়াদের সঙ্গে বেশ কিছু চুক্তি হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী ইরাকের দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলে পশুপালন ও কৃষি খাতে উন্নয়নের দায়িত্ব রিয়াদের কাছে অর্পণ করা হয়েছে। এদিকে, ইরাকের প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হোসেন আলাভি বলেছেন, কাজেমির রিয়াদ সফরের ফলে স্থল ও সমুদ্র পথ যোগাযোগ স্থাপন, হজ অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া, অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার এবং জ্বালানি ক্ষেত্রে পুঁজি বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
এ ছাড়া আগামী নভেম্বরে ইরাকে পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ অবস্থায় অর্থনীতিকে ঠিক করা তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আরেকটি বিষয় হচ্ছে পশ্চিম এশিয়ায় প্রভাব বিস্তারের জন্য ইরাকে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে সৌদি আরব। কেননা ইরাকে ইরানেরও ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। এ কারণে দুদেশের মধ্যে আর্থ-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সম্পর্ক বিস্তারে সৌদি আরবেরও বিরাট আগ্রহ রয়েছে।
তবে ইরাকে ভিন্ন মতও রয়েছে। তারা রিয়াদের সঙ্গে বাগদাদের সম্পর্ক উন্নয়নের বিরোধী। কারণ ইরাকে নিরাপত্তাহীনতা, অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি ও সন্ত্রাসীদের পৃষ্ঠপোষকতা দেয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখছে সৌদি আরব। আইএস জঙ্গিরা ইরাক ও সিরিয়ায় যে ভয়াবহ গণহত্যা চালিয়েছে তার পেছনে সৌদি আরবের মদদ ছিল। এ অবস্থায় ইরাকের প্রধানমন্ত্রীর রিয়াদ সফর গুরুত্বপূর্ণ বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।