বাংলাদেশের ই-কমার্স শিল্প বর্তমানে এক মহা সংকরণের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ইভ্যালি ও ই-অরেঞ্জের মতো কোম্পানিগুলোর বিতর্কিত মুখোমুখির কারণে মানুষের আস্থা এখন তলানিতে। এই পরিস্থিতিতে, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) কি প্রকৃতপক্ষে উদ্যোক্তাদের স্বার্থ রক্ষা করছে, নাকি একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর প্রয়োজনে কাজ করছে, এ প্রশ্ন নিয়ে বিতর্ক intensifying হয়েছে। উদ্যোক্তাদের দাবি, ই-ক্যাব তাদের জন্য কিছুই করছে না, বরং সুবিধাবাদী কাজকর্মে প্রধান ভূমিকা পালন করছে।
ই-কমার্স খাত যে গত কয়েক বছরে ঘনীভূত জটিলতা, প্রতারণা এবং দুঃসময়ের সম্মুখীন হয়েছে, তা নতুন করে বলার কিছু নেই। আশির দশকে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তিতে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হলেও ই-কমার্স ক্ষেত্রটি ধারাবাহিকভাবে গতানুগতিক সমস্যা ও বিতর্ক উন্মোচিত করেছে। এখন প্রশ্ন উঠে এসেছে, এসব মোকাবিলায় ই-ক্যাবের আসল ভূমিকা কী ছিল? উদ্ভূত সংকট পার করতে ই-ক্যাবের কার্যক্রমকে ভোক্তা, উদ্যোক্তা ও রাষ্ট্রের মধ্যে ভারসাম্য রাখার বদলে ‘পদ রক্ষার কূটনীতি’ বলা হচ্ছে।
ই-ক্যাবের ইতিহাস ও ভূমিকা
ই-ক্যাব উদ্ধারকামী একটি ফোরাম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যা ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের সুরক্ষা, আইনি সহায়তা এবং অন্যান্য দিকসহ লগিস্টিক সাপোর্ট দিতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। কিন্তু বাস্তবতা হলো, উদ্যোক্তারা অভিযোগ জানাচ্ছেন যে সংগঠনটি তাদের আইনি বাধা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সাপোর্টে কার্যকর ভূমিকা রাখছে না। এখন ই-ক্যাবের সদস্য হওয়ার জন্য সদস্য ফি অত্যধিক চড়া এবং ভোটের সময়ে অভ্যন্তরীণ চক্রান্ত এক কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করছে।
একই সঙ্গে স্বচ্ছতার অভাব একটি বড় সমস্যা বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। সংগঠনের আয়ের উৎস, ব্যয়ের খাত এবং সরকারের সঙ্গে সমন্বয়ের তথ্য সংগঠনের সাধারণ সদস্যদের কাছে গোপন রাখা হচ্ছে। বার্ষিক কিছু কনফারেন্স ও মিটআপ হয়ে গেলেও সেগুলোর বাস্তব কার্যক্রমের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায় সেখানে থাকে শুধু ‘চকচকে পাওয়ার পয়েন্ট এবং সেলফি সেশন’।
এখন প্রশ্ন উঠছে, ই-ক্যাব কি নীতিনির্ধারণে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে নাকি তাদের গঠনমূলক সমালোচনার বিষয়বস্তু সম্পূর্ণ ঊর্ধ্বে চলে গেছে?
ই-ক্যাবের বিরুদ্ধে উদ্যোক্তাদের অভিযোগ
একাধিক উদ্যোক্তা অভিযোগ করেছেন যে ই-ক্যাব কখনোই নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য কোনও কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ করেনি। তারা ই-ক্যাবের কার্যক্রমে যে প্রকৃত পরিবর্তন আশা করেছিলেন, তা এখনও পর্যন্ত কল্পনাতীত। উদ্যোক্তাদের কাছে ই-ক্যাব এখন ‘ই-কমার্সের ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট’ হিসেবে পরিচিত হয়ে পড়েছে। এতে উদ্যোক্তাদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরির কিছু নেই।
বিশ্লেষকদের মতে, ই-ক্যাবের সাফল্য এখন প্রশ্নবিদ্ধ। উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে আসল উদ্যোক্তাদের সুরক্ষা করা, বাস্তবায়ন এবং কার্যকর সমাধান প্রদান তাদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাহলে, উদ্যোক্তাদের মধ্যে একাধিক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে—ই-ক্যাব কি আসলে তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছে?
এখন সময় এসেছে সংগঠনটির ভেতর থেকে কড়া নজরদারি এবং স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠার। নতুবা উদ্যোক্তারা হয়তো নতুন গঠনমূলক সমাধানের দিকে এগিয়ে যেতে বাধ্য হবেন।
সার্বিক অবস্থার প্রতিক্রিয়া
ই-ক্যাবের সদস্যরা এখন পরিষ্কার হতে চাইছেন, তারা সত্যিই কি একটি সক্রিয় সমিতির অংশ নাকি কেবল একটি লভ্যাংশের জন্য প্রতিযোগিতা করছে? উদ্ভূত সংকটের মোকাবিলা করতে ই-ক্যাবের উচিত তাদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার করা এবং উদ্যোক্তাদের প্রশ্নের জবাব দেয়া। নারীর শক্তি, প্রতিরোধ এবং উদ্ভাবনের আদান-প্রদান কিভাবে হতে পারে সেটা বুঝতে পারা জরুরি।
উদ্যোক্তাদের প্রত্যাশা, একটি কার্যকর এবং স্বচ্ছতার ভিত্তিতে গঠিত প্রতিষ্ঠান তৈরি করুক যা দেশের ই-কমার্সকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারে। না হলে হয়তো ‘আরেকটি ই-ক্যাব’ তৈরি করা সবার জন্য একটি বাস্তবতা হয়ে উঠবে।
প্রশ্ন: ই-ক্যাব কি যুক্তিসঙ্গত কার্যক্রম করছে?
বর্তমান পরিস্থিতিতে, অনেক উদ্যোক্তার মনে প্রশ্ন জেগেছে—ই-ক্যাব কি উত্থান কারী সংস্থা, নাকি কেবল কিছু সুবিধাভোগীকে সহযোগিতা করছে?
ফরওয়ার্ড কূটনীতি: উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি
দেশের ই-কমার্স খাতের উন্নয়নে ই-ক্যাবের কাঠামোগত পরিবর্তন এখন খুবই জরুরি। সার্বিকভাবে, একটি জবাবদিহি এবং সক্রিয় সহযোগিতার পরিবেশ নিশ্চিত করা কোনও সময়ের মধ্যে সম্ভব হতে পারে, যদি উদ্যোগী এবং অংশীদারগণ সঠিক দৃষ্টান্ত তুলে ধরেন।
ফ্রিকোয়েন্টলি আস্কড কোশ্চেনস (FAQs)
- ই-ক্যাব কি ই-কমার্সের উন্নয়নে রাজি?
- ই-ক্যাবের পক্ষ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণের কথা বলা হচ্ছিল, কিন্তু বাস্তব পার্শ্বে তারা আগ্রহী উদ্যোক্তাদের দাবি পূরণে সক্ষম হয়নি।
- এই সংগঠনে সদস্য হতে কি কোনো ফি স্থানীয়?
- হ্যাঁ, ই-ক্যাবের সদস্য হতে উচ্চ ফি প্রদান করতে হয় যা অনেক উদ্যোক্তার কাছে অপ্রতিরোধ্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
- ই-ক্যাবের মূল উদ্দেশ্য কী?
- প্রতিষ্ঠা স্বাভাবিকভাবে উদ্যোক্তাদের অধিকার রক্ষা করা, তবে বর্তমান অভিযোগগুলির মধ্যে তাদের স্বচ্ছতা এবং কার্যকরতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
- ই-ক্যাবের বিরুদ্ধে কি ভয়েসে বলতে হবে?
- উদ্যোক্তাদের মধ্যে একটি বৃহত অংশ ই-ক্যাবের অক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন এবং দাবী করছেন প্রতিষ্ঠানটির উচিত ডামাডোল জাতীয় কর্মকাণ্ডের দিক থেকে সরে আসা।
- ই-ক্যাব কি দেশের ই-কমার্স খাতের জন্য উপকারী?
- ই-ক্যাব নিশ্চিতভাবে দেশের ই-কমার্স খাতের জন্য নেতৃত্ব দেওয়ার দাবি করে, তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে তাদের কার্যকারিতা নিয়ে নেতিবাচক মতামত গড়ে উঠেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।