পৃথিবী নিজের অক্ষরেখার চারপাশে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে ঘুরছে বলে যেমন প্রতিদিন সকালে সূর্য পুবের আকাশে ওঠে আর সন্ধ্যায় পশ্চিমের আকাশে অস্ত যায়, চাঁদও ঠিক তাই। সে পৃথিবীর চারপাশে পশ্চিম থেকে পুব দিকে ঘুরছে। সে জন্যই পূর্ণিমার চাঁদ পুবের আকাশে ওঠে। আর শেষ রাতে পশ্চিমে অস্ত যায়।
কিন্তু প্রতিদিন চাঁদ পুব দিকে একটু পিছিয়ে পড়ে। প্রায় ১৩ ডিগ্রি পুব দিকে পিছিয়ে পড়ে। এ জন্য পরদিন আকাশে চাঁদ উঠতে প্রায় ৫৩ মিনিট দেরি হয়। মানে, সূর্য ডোবার আগেই চাঁদ আকাশে ওঠে, কিন্তু সূর্যের আলোর জন্য আলোকিত চাঁদ আমরা দেখতে পাই না। দৃশ্যমান হয় সূর্যাস্তের পর। প্রতিদিনই আকাশে চাঁদ আগের দিনের চেয়ে প্রায় ৫৩ মিনিট দেরিতে ওঠে।
মহাবিশ্বের অন্য নক্ষত্রদের অবস্থানের তুলনায় একই অবস্থানে ফিরে আসতে চাঁদের প্রায় ২৮ দিন (২৭ দিন ৮ ঘণ্টা) সময় লাগে। একে বলা হয় সাইডেরিয়াল মান্থ। কিন্তু এ সময়ে সূর্যের অবস্থান একটু এগিয়ে যায়। তাই আকাশে সূর্যের অবস্থানের তুলনায় একই স্থানে ফিরে আসতে চাঁদের সময় লাগে প্রায় সাড়ে ২৯ দিন। একে বলে সাইনোডিক মান্থ।
তার মানে দাঁড়াল, পূর্ণিমার পর প্রতি সন্ধ্যায় আগের সন্ধ্যার চেয়ে কিছু সময় পর পূর্ব দিগন্তের একটু ওপরে চাঁদ ওঠে, আকারে একটু ছোট হয়। পরদিন আরও একটু পর আকাশে চাঁদ ওঠে, আকারও একটু কমে। ফলে প্রতিদিনই আকাশে চাঁদের অবস্থানের সময় কমতে থাকে এবং আকারে ছোট হতে থাকে। এভাবে কমতে কমতে ২৮-২৯ দিন পর আকাশে চাঁদের অবস্থানকাল শূন্য হয়ে যাবে। তখন সূর্য ও চাঁদ একই সঙ্গে পৃথিবীর বিপরীত দিকে অবস্থান করবে। সেদিন আকাশে চাঁদ দেখা যাবে না। সে রাতটাই অমাবস্যা।
এর পরদিন পশ্চিম আকাশে চাঁদ দিগন্তরেখার সামান্য ওপরে খুব অল্প সময় অবস্থান করবে। সেটাই নতুন চাঁদ। একেবারে সুতার মতো একচিলতে চাঁদ। এর পরদিন চাঁদ পশ্চিম দিগন্তরেখার একটু ওপরে উদিত হবে, একটু চওড়া হবে এবং আগের দিনের চেয়ে একটু বেশি সময় আকাশে দেখা যাবে। এভাবে আবার প্রায় ১৫ দিন পর হবে পূর্ণিমা।
ঈদের চাঁদ কখনো উল্টা ‘C’-এর মতো, কখনো নৌকার মতো দেখা যায় কেন? এর ব্যাখ্যা অবশ্য একটু কঠিন। তবে সহজ করে বলা যায়, পৃথিবী যেহেতু সাড়ে ২৩ ডিগ্রি কোণে হেলানো অবস্থায় সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে, সে জন্য যে কারণে ঋতুবৈচিত্র্য ঘটে, একই কারণে বিভিন্ন ঋতুতে নতুন চাঁদের অবস্থান একটু ভিন্ন রকম হয়। যেমন, মার্চ-এপ্রিল-মে এর দিকে নতুন চাঁদ দেখতে অনেকটা নৌকার মতো এবং সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে দেখা যাবে উল্টো ‘C’-এর মতো। আমরা উত্তর গোলার্ধে আছি বলে চাঁদকে আকাশে এভাবে দেখি। দক্ষিণ গোলার্ধে চাঁদের বাঁকটা ‘C’-এর মতোই দেখাবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।