জুমবাংলা ডেস্ক : সারা দেশে কাঁচাবাজারের উত্তাপ লাগামহীনভাবে বেড়ে চলেছে। কোনোভাবেই কমছে না সবজি, মাছ, গোশত ও ডিমের দাম। পাইকারি থেকে খুচরা সবখানেই চড়া দামে কাঁচাবাজার কিনতে গিয়ে ক্রেতাদের ফতুর হওয়ার দশা। ৮০ টাকা কেজির কমে কোনো কাঁচা তরকারি বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। কোনো কোনো স্থানে মাছ ও গোশতের দাম ৩০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। কাঁচামরিচের দাম উঠেছে ৬০০ টাকা পর্যন্ত। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে সব শ্রেণীর মানুষ। তবে কৃষি কর্মকর্তা বলছেন, বন্যা ও প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে সবজি উৎপাদন কম হওয়ায় দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
বগুড়া অফিস জানায়, বগুড়ার বাজারগুলোতে বেড়েছে সবজির দাম। এতে বিপাকে পড়েছেন নিম্নআয়ের মানুষ। প্রতিটি সবজির কেজি প্রতি দাম বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত। গতকাল বগুড়ার রাজাবাজার, ফতেহ আলী বাজার, বকসি বাজার ও কলোনি বাজারসহ বেশ কিছুু বাজার ঘুরে দেখা যায়, আলু মানভেদে প্রতি কেজি ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, কাঁচামরিচ ২৮০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা, পেঁয়াজ ১১০, আমদানিকৃত ভারতীয় পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১০৫ টাকা, বেগুন ১০০ টাকা, শসা ৬০ টাকা, বই কচু ৮০ টাকা, করলা ১০০ টাকা পটোল ৮০ টাকা ও ঢেঁড়স ৮০ টাকা, কাঁকরোল ৬০ টাকা, মুলা ও মিষ্টি লাউ ৬০ টাকায় বেচাকেনা হচ্ছে।
বাজারে ব্রয়লার মুরগির কেজির দাম ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে ১৭০ টাকা এবং সোনালি মুরগির কেজিতে একই পরিমাণ দাম বেড়ে ২৬০ টাকায় বেচাকেনা হচ্ছে।
মরিচের ঝাঁজে অস্থির নীলফামারীর ভোক্তারা। প্রতিদিনেই লাগামহীনভাবে বাড়ছে মরিচের বাজার। দুই দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজিতে দাম বেড়েছে ১০০ টাকা। গতকাল নীলফামারীর বিভিন্ন বাজারে খুচরা দরে প্রতি কেজি মরিচ বিক্রি হয়েছে ৪৮০ টাকায়। পাইকারি বিক্রি হয়েছে ৪৪০ টাকা।
সাদ্দাম হোসেন, মরিয়ম বেগম, আশরাফ আলীসহ অনেক ক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান সরকার কোনোভাবেই মরিচসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।
এদিকে গতকাল সোমবার নীলফামারীর বিভিন্ন বাজারে দেশী পেয়াঁজ প্রতি কেজি ১৩০ টাকা, পটোল ৭০ টাকা, রসুন ২৬০ টাকা, আদা ৪০০ টাকা, বেগুন ৭০ টাকা, মুলা ৫০ টাকা, সজি ৫৫ টাকা, আলু ৫৫, মাঝারি আকারের একটি লাউ ৮০ টাকা, কায়তা ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
কাউখালী (পিরোজপুর) সংবাদদাতা জানান, পিরোজপুরের কাউখালীতে মাছ ও গোশতের দাম দিন দিন সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। গত ১৫ দিনের ব্যবধানে মাছ-গোশতের দাম কেজিতে ৩০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
গতকাল কাউখালী দক্ষিণ বাজারে সাপ্তাহিক হাটে বাজার ঘুরে দেখা গেছে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে মাছের দাম কেজিতে ৩০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। বাজারে ইলিশ মাছ না থাকার কারণে মাছ ব্যবসায়ীরা এই সুযোগে অন্যান্য মাছের দাম বৃদ্ধি করে বিক্রি করছে। এক কেজি ছোট চিংড়ি মাছ ৭৫০ টাকা, ছোট সাইজের দেশী কই মাছ ৫৫০ টাকা, শোল মাছ ৭০০ টাকা, কইয়া বৌল ৬০০ টাকা, তেলাপিয়া ১৭০ টাকা, মরমা মাছ ৪০০ টাকা, পাঙ্গাস ১৮০ টাকা, পাবদা ৩০০ টাকা, রুই ৩০০ টাকা, কাতল ২৬০ টাকা, কোরাল ৬৫০ টাকা, পোমা ৩৫০ টাকা কেজি হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি সামুদ্রিক মাছের দাম কেজিতে ৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। মাছ বিক্রেতা আসমত আলী ও ইয়াকুব আলী জানান, বাজারে মাছের সরবরাহ কম থাকায় মাছের দাম একটু বৃদ্ধি।
চৌগাছা (যশোর) সংবাদদাতা জানান, যশোরের চৌগাছায় আকাশছোঁয়া দ্রব্যমূল্যে দুর্ভোগে পড়েছে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বাড়ছে অস্বাভাবিক হারে।
গতকাল চৌগাছার সাপ্তাহিক হাটবার শহরের বড়বাজারে সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলা থেকে শুরু করে গ্রামগঞ্জের প্রতিটি হাটবাজারে শাক-সবজিসহ সব কাঁচা সবজির দাম বেড়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন ক্রেতারা। অনেকেই কাঁচা বাজারে এসেও প্রয়োজনীয় সবজি না নিয়ে চলে যাচ্ছেন। কেউ কেউ প্রয়োজনের তাগিদে বাধ্য হয়ে বেশি দামেই কিনছেন সবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামাল।
উপজেলার হাকিমপুর, সলুয়া, সিংহঝুলী, পাশাপোল, পুড়াপাড়া, মাশিলা, খড়িঞ্চা, চাঁদপাড়া, নারায়নপুর ও আন্দুলিয়াসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত কয়েক দিন ধরে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে কাঁচামরিচ, ডিম ও সবজির দাম।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি কাঁচামরিচের দাম বেড়ে হয়েছে ৬০০ টাকা। উপজেলার বিভিন্ন কাঁচা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কাঁচামরিচের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৮০ টাকায়। গত দুই সপ্তাহ আগেও কাঁচামরিচের কেজি ছিল ৮০ থেকে ৯০ টাকা, দুই সপ্তাহের ব্যবধানে কেজি প্রতি প্রায় ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা বাড়াকে অস্বাভাবিক বলছেন ক্রেতারা। পাশাপাশি প্রতি কেজি আলু ৬০ টাকা, পটোল প্রতি কেজি ৮০ টাকা, কচু প্রতি কেজি ৮০ টাকা, করলা প্রতি কেজি ৮০ টাকা, প্রতি কেজি ঢেঁড়স ৮০ টাকা, বেগুন প্রতি কেজি ১২০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৮০ টাকা, মাঝারি লাউ প্রতিটি ৭০ টাকা, ফুলকপি প্রতি কেজি ১২০ টাকা, বাঁধাকপি প্রতি কেজি ১২০ টাকা, পেঁয়াজ ১২০, শসা ১২০ টাকা ও প্রতি কেজি মুলা ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে ডিমের দাম।
সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার বিভিন্ন হাটবাজারে নিত্যপণ্যের দাম এখন আকাশছোঁয়া। প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। লাগাম নেই গরিবের আমিষ ডিমেও। বাজারে মুরগি কিনতে আসা রেজাউল নামে এক ক্রেতা বলেন, মুরগি কিনতে পারব না। অনেক দাম। ডিমের দামও চড়া।
মজনু মিয়া নামে আরেক ক্রেতা বলেন, মাছ মাংস সবজি সবকিছুই আমাদের ক্রয় সীমার বাইরে চলে। বেশির ভাগ সবজির দাম শতক ছুঁইছুঁই। আবার কোনটি আবার ছাড়িয়েছে সেই শতকের ঘর। শওকত আলী নামে আরেক ক্রেতা বলেন, গেল সপ্তাহে কাঁচামরিচ পাওয়া যেত ২৪০ টাকা কেজিতে। সপ্তাহের ব্যবধানে সেই কাঁচামরিচের কেজি দাম বেড়ে হয়ে ৪০০ টাকা কেজি। এ বিষয়ে সাটুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন নয়া দিগন্তকে বলেন, বেশ কয়েকটি জেলায় বন্যা ও বৃষ্টিপাতের কারণে সবজি উৎপাদন কম হওয়ায় দাম বেড়েছে।
নাজিরপুর (পিরোজপুর) সংবাদদাতা জানান, পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে সবজিতে আগুন, মাছ-মাংসের দামও চড়া। প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। একশত টাকা কেজির কমে মিলছে না কোনো সবজি, লাগাম নেই গরিবের আমিষ ডিমেও। বাজার করতে আসা মো: রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মাছ-গোশত, সবজি সবকিছুই আমাদের ক্রয়ক্ষমতার বাহিরে চলে গেছে। বেশির ভাগ সবজির দাম ১০০ টাকা ছুঁইছুঁই। আবার কোনটির দাম ১১০-১২০ টাকার ঘরে। ‘আল-আমিন হোসাইন নামে আরেক ক্রেতা বলেন, ‘গেল সপ্তাহে কাঁচামরিচ পাওয়া যেত ২৪০ টাকা কেজিতে। সপ্তাহের ব্যবধানে সেই কাঁচামরিচের কেজি দাম বেড়ে ৫০০ টাকা কেজিতে দাঁড়িয়েছে।’
নাজিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইশরাতুন্নেসা এশা নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘বেশ কয়েকটি জেলায় বন্যা ও প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে সবজি উৎপাদন কম হওয়ায় দাম বেড়েছে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।